খুলনা থেকে কলকাতা আর কতটুকু। দূরত্ব ঢাকার চেয়ে কম। যোগাযোগ সহজ। ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারের সুবর্ণ সুযোগ। খুলনার দরজা খোলা। পাশে যশোরকে নিয়ে ভারতের সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক বন্ধন। বাধা ছিল ভিসার। সেটা পেতে হলে ছুটতে হত ঢাকায়। এ তো অদ্ভুত কথা। গন্তব্যের চেয়ে ভিসা অফিস বেশি দূরে। ঘুরিয়ে নাক দেখানো। অনর্থক সময়, অর্থ অপচয়। তার মানে কলকাতা যেতে হলে ঢাকা ঘুরে যাওয়া। তার দরকার হবে না। খুলনায় বসেই পাওয়া যাবে ভারতের ভিসা। ভারতের সহকারী হাই কমিশন এ বার খুলনায়। ভিসার নিয়ম কানুন শিথিল। অভিবাসন আইনের জটিল আবর্তে ঘুরপাক খাওয়া নয়। আবেদন করলেই চটজলদি ভারতে প্রবেশের অধিকার। ব্যবসায়ীদের আরও সুবিধে। তাঁরা পাবেন পাঁচ বছরের দীর্ঘমেয়াদী ভিসা। তাতে যত বার খুশি কলকাতায় আসতে, যেতে পারবেন। মাল্টিপল ভিসা ছাড়া যে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়, ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সেটা স্বীকার করেছেন। তিনি আর এক ধাপ এগিয়ে জানিয়েছেন, আমদানি-রফতানিতে গতি আনতে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর সন্ধে ছ'টার জায়গায় রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। পণ্যবাহী ট্রাক যাতায়াতে যাতে বিলম্ব না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
খুলনার ফুলতলা, মাথাভাঙায় শিল্পায়নের ভিত তৈরি। যে কোনও শহরের সমৃদ্ধি নির্ভর করে অর্থনৈতিক বিকাশের ওপর। খুলনা সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছে। রফতানি বাণিজ্যে খুলনার সবচেয়ে বড় সঙ্গতি পাশের মংলা বন্দর। খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্ল্যান- খুলনাকে ক্রমশ মুম্বইয়ের সমতুল্য করে তোলা। মুম্বইয়ের মতো মংলা বন্দরকে সামগ্রিকভাবে কাজে লাগানো। বিশ্বের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে এই বন্দরই। বন্দরটির পরিকাঠামোর পরিবর্ধন দরকার। আধুনিক আর কার্যকরী করতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভারত সেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। শুধু অর্থ নয়, প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও দেবে। যাতে বন্দরটি দ্রুত আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর যতই এগিয়ে থাক, মংলা তার সঙ্গে পাল্লা দিতে কসুর করবে না। খুলনা-মংলা রেল লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এতে খরচ ১১৪ কোটি ৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ব্রডগেজ লাইনই বসানো হচ্ছে। যাত্রী, পণ্য পরিবহণে কোনও বাধা থাকবে না। মংলা বন্দর থেকে ট্রেনে পণ্য খুলনা হয়ে কলকাতায় পৌঁছবে নির্বিঘ্নে। কলকাতার পণ্যও একই ভাবে পৌঁছে যাবে খুলনায়।
ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে খুলনায় খানজাহানআলি বিমানবন্দর নির্মাণের। সেটা হলে ভারতের সঙ্গে খুলনার যোগাযোগ দ্রুততর হবে। আকাশ পথে আন্তর্জাতিক সংযোগে গতি আসবে। খুলনা থেকে পাট, চিংড়ি রফতানি চলে। বিমানবন্দর হলে সেটা আরও বাড়বে। জাহাজ নির্মাণেও মংলা অগ্রসর। তার কদর অন্য দেশেও। ভারতীয় কোম্পানিগুলো মংলাকে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন মনে করছে। সেখানে কারখানা স্থাপন চলছে। টাটা মোটর্স যশোরে অ্যাসেম্বল প্ল্যান্ট বসিয়েছে। হিরো মোটর সাইকেল বিনিয়োগ করেছে তিন কোটি ডলার। মোটর সাইকেল তৈরির কাজ অবিলম্বে শুরু করবে। আরও ভারতীয় সংস্থা যশোর, খুলনায় ঝাঁপাতে তৈরি। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: জঙ্গিদের দমনে সারাদেশে সিটিটিসি ইউনিট চায় বাংলাদেশ পুলিশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy