নাই বা হল একা সরকার গড়া, শরিক হয়ে থাকতে অসুবিধে কোথায়। সেটাই মস্ত বড় সুবিধে বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির। রাজনীতির তালিকায় তাদের স্থান তিন নম্বরে। প্রথম দ্বিতীয় হওয়ার লড়াইয়ে আওয়ামি লিগ, বিএনপি। একবার এ তো পরের বার সে প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সরকার গড়ে। যে-ই সরকারে আসুক পাশে জাতীয় পার্টি বা জাপার তৃতীয় স্থানটি অপরিবর্তিত। দলটির ইউএসপি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহম্মদ এরশাদের ক্যারিশমা। আশি পেরিয়েও সবুজ সতেজ। তিনি ম্লান হলে জাপা নিষ্প্রাণ। দলের জনক, পালক তিনি। জাপাকে এরশাদ পার্টি বললেও চলে। তাঁর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি এমন নয়। সব দলেই উচ্চাকাঙ্খীরা থাকে। তারা মনে করে, একজনই চিরদিন শীর্ষে থাকবেন কেন! অন্য কেউ তো হতে পারে! কর্ণধার। হ্যাঁ, সেটা অবশ্যই পারে। জাপায় নয় অন্য কোথাও। এরশাদ ছাড়া জাপা ডানা ছাঁটা পাখির মতো। উড়তে উড়তে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়বে।
মাঝখানে বিপরীত মেরুতে গিয়ে এরশাদকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী রওশন। কারণটা যত না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি অনুচ্চারিত অভিমান। জয়ের নিশান ওড়াতে না পারলেও এরশাদের পালের হাওয়া কাড়তে পেরেছিলেন অবশ্যই। অভিজ্ঞতায় ভর করে নীরব থেকেছেন এরশাদ। ভেবেছেন, এসব সাময়িক, অচিরেই রাগ পড়বে রওশনের। সত্যিই তাই। রওশন আবার এরশাদের পাশে। এরশাদ সবার সামনে স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদও করেছেন। দলের সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। খুশি হয়ে একচ্ছত্র অধিকারও তুলে দিয়েছেন এরশাদের হাতে। দলের কাউন্সিলে নিরঙ্কুশ করা হয়েছে তাঁর ক্ষমতা। এটা করতে গঠনতন্ত্র সংশোধনের দরকার ছিল। সেটা আটকায়নি। সর্বসম্মতিতে প্রস্তাব পাশ। টানা অষ্টমবার এরশাদ চেয়ারম্যান হলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন। নতুন নিয়মে সর্বময় কর্তৃত্বে এরশাদ। দলের যে কোনও পদে যে কাউকে নিয়োগ করতে পারবেন তিনি। জবাবদিহির প্রশ্ন নেই। শীর্ষ পদের পাশের চেয়ারটি পেয়েছেন রওশন। তাঁর ক্ষোভ ঝরেছে। এরশাদকে ক্ষমতার চুড়োয় তুলতে বেশি উৎসাহী তিনি।
আরও খবর: নতুন ভাবে ফের বাজারে আসছে পুরনো সেই ঢাকাই মসলিন
সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে জাপার ৪০। আওয়ামি লিগের শরিক তাঁরা। মন্ত্রিসভায় জায়গাও পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশনের সম্পর্ক গভীর। রওশনের ফ্রেন্ড, ফিলোজফার, গাইডও তিনি। জাপার পট পরিবর্তন হাসিনার সঙ্গে আলোচনার পরেই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জাপা ভালই লড়েছে। সেখানেও তারা তৃতীয় স্থানে। ন’বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন এরশাদ। সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। ১৯৯০তে পদত্যাগ করার পর ক্ষমতার অলিন্দে আর হাঁটেননি। জাপার পিতৃত্বের দাবিতে গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করতে আগ্রহী। রাজনৈতিক সফরে পাশে চান মানুষকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy