জাফর ইকবাল
এ বার ছুরির কোপে জখম, রক্তাক্ত হলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শনিবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান চলাকালীন দুই আততায়ী ছুরি নিয়ে তাঁর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোপাতে থাকে। এক আততায়ীকে ছাত্ররা ধরে ফেলে। তাকে গ্রেফতার করে জেরা করছে পুলিশ। অধ্যাপক ইকবালকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে পরীক্ষার পরে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আঘাত থেকে রক্তক্ষরণ হলেও তাঁর প্রাণের আশঙ্কা নেই। তবে তাঁকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার বন্দাবস্ত করা হচ্ছে।
এক আততায়ী ধরা পড়লেও কী কারণে এই হামলা, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। পুলিশ এই হামলাকে জঙ্গিদের কাজ বলে এখনই ঘোষণা করছে না। তবে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সর্বদা সরব জাফর ইকবাল বেশ কয়েক বার জঙ্গিদের কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন। আল কায়দার বাংলাদেশ শাখা বলে নিজেদের ঘোষণা করা জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম খুনের জন্য যে তালিকা প্রকাশ করেছিল, তার প্রথমেই ছিল জাফর ইকবালের নাম। সিলেটের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ইকবাল। সম্প্রতি র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। র্যাগিংয়ের দায়ে পাঁচ ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ড করার পরে অধ্যাপক ইকবাল বলেছিলেন, এদের আরও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। অনেকের ধারণা, এই কারণেও তাঁর ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে। আর বিরোধী বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগিরের দাবি, ‘‘ঘোলা জলে মাছ ধরতে এই হামলা আসলে সরকারেরই চক্রান্ত!’’
জাফর ইকবালের মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে পাক সেনারা গুলি করে হত্যা করেছিল। পদার্থবিদ্যার কৃতী ছাত্র ইকবাল আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে অধ্যাপনা শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ তাঁর বড় দাদা। বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম শিশুসাহিত্যিক জাফর ইকবাল। তাঁর লেখা ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ চলচ্চিত্র হিসাবেও মানুষের মন কেড়েছে।
রক্তাক্ত: আহত লেখক জাফর ইকবালকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শনিবার সিলেটে। —নিজস্ব চিত্র।
সহজ ভাষায় বিজ্ঞানের কঠিন বিষয় বুঝিয়ে বলতে তাঁর রচনার জুড়ি নেই। আবার নানা সংবাদপত্রে তাঁর কলমে মৌলবাদ-বিরোধিতায় তিনি আপসহীন। এ দিন তাঁর ওপর হামলার ঘটনা হুমায়ুন আজাদ, অভিজিৎ রায়, রাজীব হায়দরদের হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে। এই হামলার প্রতিবাদে শনিবার সন্ধ্যায়ই ঢাকার শাহবাগে অবস্থান শুরু করেন গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকেরা।
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাফর ইকবাল। মঞ্চ ঘিরে পুলিশি পাহারাও ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেল পাঁচটা নাগাদ অধ্যাপক ইকবাল সভায় আসার পরেই মঞ্চের পিছন থেকে দুই আততায়ী ছুরি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক পুলিশ বাধা দিতে গিয়ে হাতে ছুরির কোপ খান। ছাত্রদের বাধার মধ্যেই ছুরির কয়েকটি কোপ অধ্যাপকের মাথায় ও বুকে পড়ে। এক আততায়ী ভিড়ের সুযোগে পালিয়ে গেলেও অন্য জনকে ছাত্ররা ধরে বেদম মারধর করে। তার পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy