মুক্তিযুদ্ধের প্রধান যুদ্ধাপরাধী পাক সেনাকর্তা জেনারেল নিয়াজি সই করছেন আত্মসমর্পণ পত্রে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর।
বাংলাদেশ সীমান্তে ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুরকে রাজ্যের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি। পাশে বাংলাদেশের জায়গায় যখন পূর্ব পাকিস্তান ছিল, তখন এটা হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তির পর ভারতে তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী সিদ্ধান্তটি নেন। তার ছ’মাস পরই সিমলায় ইন্দিরা শীর্ষ বৈঠকে বসেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর সঙ্গে। কাশ্মীরে শান্তি প্রয়াস অব্যাহত রাখতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হয় ৩ জুলাই। বাংলাদেশ নিয়েও দু’জনের মধ্যে কথা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা তত দিনে পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছে। কিন্তু ইন্দিরা-ভুট্টো আলাচোনায় যুদ্ধাপরাধী পাক সেনার বিচারের কথা ওঠে। চরম অপরাধী ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা কর্তাকে রেহাই না দেওয়ার প্রতিশ্রতি দেন ভুট্টো।
ভুট্টোর এতটা নরম হওয়ার পিছনে একটা কারণ ছিল। বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানকে বাগে আনতে শেষ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ‘স্কুপ ইনসাইড স্টোরিজ ফ্রম দ্য পার্টিশন টু দ্য প্রেজেন্ট’ বইতে সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার লিখেছেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ছ’দিন পর ২৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে এক জরুরি বৈঠকে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ফেডারেশন গঠনের ভুট্টো চাপ দেন মুজিবকে। এক কথায় সে প্রস্তাব উড়িয়ে দেন মুজিব। তিনি জানতেন, ১৯৬৩-তে যে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর ফেডারেশন গঠিত হয়েছিল, তার কী ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়েছিল। ১৯৬৫-তে ফেডারেশন ভেঙে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে সিঙ্গাপুর হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
কথা দিলেও কথা রাখতে পারেনি ভুট্টো। সেনাবাহিনীর মর্জিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা ছিল ক্ষমতার বাইরে। ১৯৭৩-এর ১৪ আগস্ট সংবিধান সংশোধন করে সংসদীয় সরকার গড়ার প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর ১৯৭৭-এর নির্বাচনে জিতে ফের প্রধানমন্ত্রী হন ভুট্টো। কিন্তু সেনার সমর্থন পাননি। ১৯৭৮-এ তাঁর ফাঁসি হয়। দীর্ঘ দশ বছর পর তাঁর কন্যা বেনজির ভুট্টো সাধারণ নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন। এক বছর পর ১৯৮৯-তে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়েই বাংলাদেশ সফরে যান তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে কথাবার্তায় সব দাবি পূরণের ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। লাভ হয়নি। এক বছর পর তাঁকেও ছুঁড়ে ফেলে সেনাবাহিনীই। তাদের ইচ্ছায় প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরিফ। ১৯৯৩-তে সেনাবাহিনীর চাপে তাঁকেও পদত্যাগ করতে হয়। নির্বাচনে ফের জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন বেনজির। ১৯৯৬-তে তাঁকে সরে যেতে হয়। ১৯৯৭-তে ফেরেন শরিফ। ১৯৯৯-তে জেনারেল পারভেজ মুশারফ সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ২০০১-এ সামরিক শাসক থেকে রাষ্ট্রপতি হন মুশারফ। ২০০৮ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। সেই বছর নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন ইউসুফ রাজা গিলানি। তিনিই পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি টানা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকেন। তাঁর পরে ২০১৩ সালে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হন শরিফ। এখনও তিনি পদাসীন। সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করা এখনও তাঁর সাধ্যের বাইরে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশে আশা জাগানো গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এখন ধুঁকছে
মুক্তি যুদ্ধে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনাকর্তার বিচারের দাবি ফের তুলেছে বাংলাদেশ। তদন্ত কমিটি গড়ে তাঁদের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শরিফের ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণাপন্ন হওয়ার কথা ভাবছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৫০ নারীকে ভোগ্যবস্তু করে তুলেছিলেন তিনি। বুদ্ধিজীবী হত্যার খলনায়কও তিনি। একই অভিযোগে কাঠগড়ায় জেনারেল রাও ফরমান আলি, মেজর জেনারেল হোসেন আনসারি, কর্নেল ইয়াকুব মালিক, কর্নেল শামস, মেজর আবদুল্লাহ খান, মেজর খুরশিদ ওমর, ক্যাপ্টেন আব্দুল ওয়াহিদ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের অনুমোদন পেলেই বিচারের রাস্তা খুলবে। চিন যদি পাকিস্তানকে আগলে রাখে, তাতেও ক্ষতি নেই। আমেরিকা, ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকলেই যথেষ্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy