মাশরফিই জেতালেন দলকে। ছবি: এপি।
কে বলবে তার হাঁটুর লিগামেন্টে পাঁচ পাঁচবার জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে? মাঠে তাঁকে ঝুঁকি যতটা কম নিতে নির্দেশ দিয়েছেন চিকিতসকেরা। ছোট-ছোট স্পেলে, থেমে থেমে বল করতে নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসক,ফিজিও। তবে দেশের প্রয়োজন যেখানে বড়, সেখানে চিকিৎসকদের নিষেধ শুনে লাভ কি? দেশাত্মবোধে অন্যদের চেয়ে আলাদা গ্রহের মানুষ মাশরাফিকে বার বারই এমন রূপে দেখছে বিশ্ব। বড় ম্যাচে জিততে হলে তাঁকে বিশেষ ভুমিকা নিতেই হবে, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিরুদ্ধে অল রাউন্ড পারফরম্যান্সে (৩১ নট আউট ও ২/৩৬) দলকে ১৫ রানে জিতিয়ে প্রথমবারের মতো জানিয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে মাঠে নামার একদিন আগে বন্ধু টেস্ট ক্রিকেটার মনজুরুল ইসলাম সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। বন্ধুমৃত্যুর শোককে শক্তিতে পরিণত করে ফেভারিট ভারতকে ত্রিনিদাদে বাংলাদেশ হারিয়ে দিয়েছিল মূলত মাশরাফির বোলিংয়ে (৪/৩৮) ভর করেই। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম জয়েও ম্যাচ উইনার (২২ রান এবং ২/৪২) অধিনায়ক মাশরাফি। সেই মাশরাফিই অল রাউন্ড নৈপূন্যে রবিবার হাজির শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। স্লো পিচে বাংলাদেশের টপ ও মিডল অর্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা আড়াল করতে ব্যাটিংয়ে নিয়েছিলেন বাড়তি দায়িত্ব। স্লগ ওভারগুলোকে কাজে লাগাতে ২৯ বলে ৪৪ রানের ইনিংস পরিস্থিতি বিচারে ছিল অমূল্য। অষ্টম উইকেটে নাসিরকে নিয়ে ৬৯ রান, শেষ ৬০ বলে ৭৫ রান যোগ করতে পেরেছে বাংলাদেশ তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের জোরেই। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আইসিসির সব পূর্ণ সদস্য দলের বিরুদ্ধে জয়ের বৃত্ত পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। তাঁর অধিনায়কত্বেই ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের দর্প চূর্ন করেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম কোনও দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বাংলাদেশকে দেখাচ্ছেন সেই মাশরাফিই।
মুস্তাফিজুরের আবির্ভাবের পর থেকেই নুতন বল হাতে নেওয়া ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। চেঞ্জ বোলার হিসেবে বোলিং করাকেই সঠিক মনে করতেন মাশরাফি। মুস্তাফিজুরের ইনজুরিতে সেই নড়াইল এক্সপ্রেসকে ওয়ানডেতে নিতে হচ্ছে নুতন বলে বোলিংয়ের দায়িত্ব। প্রথম পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের মনোবলে ধাক্কা দিতে পেরেছে বাংলাদেশ মূলত তাঁর প্রথম স্পেলের ( ৬-০-২১-৩) জেরে। ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের লেজ কেটে বাংলাদেশকে জয়ের আনন্দেও ভাসিয়েছেন মাশরাফি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮ বছর আগে ঠিক যে দিনে,যে ভেন্যুতে সর্বশেষ পেয়েছিলেন ৪ উইকেট, শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচের অষ্টম বর্ষপূর্তির দিনে আরও ভয়ঙ্কর মাশরাফি। ম্যান অব দ্য ম্যাচের সর্বশেষ পুরস্কার পেয়েছেন কবে, ভুলেই গিয়েছিলেন। তবে নিজের অল রাউন্ড পারফরম্যান্সকে নয়, তাসকিনের দ্বিতীয় স্পেলকে ( ৫-০-১৬-৩) ম্যাচ জয়ের টার্নিং পয়েন্টের প্রশংসাপত্র দিয়েছেন মাশরাফি। অধিনায়কের মতে, “সাকিব ও মুশফিককে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কাকে দিয়ে বল করাব? প্রথম স্পেলে তাসকিন মার খেয়েছে বলে বিকল্প ভাবনায় বিবেচনায় ছিল মোসাদ্দেক, রুম্মান। শেষ পর্যন্ত তাসকিনের উপর বিশ্বাস রেখেছি। কারণ ও দলের মূল বোলার, যথেস্ট পেস আছে। তাসকিন ওই স্পেলে অসাধারণ বোলিং করেছে। ৩টি উইকেট পেয়েছে। ওখানেই খেলাটা আমাদের হাতে চলে এসেছে।”
২৫ ম্যাচ পর ম্যান অব দ্য ম্যাচ, তাও আবার অল রাউন্ড পারফরম্যান্সে। রবিবারে এমন অল রাউন্ড নৈপূন্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মাশরাফি বলেন, “গত তিন-চার ম্যাচে ব্যাটিংয়ে অনেক কিছু চেষ্টা করেছি। বল ডিফেন্ড করে উইকেটে থাকতে চেস্টা করেও পারিনি। তাই পরিকল্পনা ছিল ‘ জাস্ট গো এন্ড স্লগ’। ব্যাটিংয়ে এই অ্যাপ্রোচ ঠিক মনে হয়েছে। আমি যখন ব্যাটিংয়ে আসি,তখন দলের স্কোর ১৬২ , চেষ্টা করলে দলের স্কোর ২০০ পর্যন্ত টেনে নেওয়া যাবে, সেটাই মাথায় ছিল। মুস্তাফিজুর ছিল বলে ২০১৫ সালে নতুন বলে বোলিং করতে হয়নি। ১০-১৫ ওভারের পর বোলিংয়ে এসেছি। এখন মুস্তাফিজ নেই বলে তা করতে হচ্ছে। তাই নিজের জন্য একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল।”
অথচ,শুক্রবার সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় কাতর ক্রিকেটারদের মনোবল এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিল যে, রবিবার খেলার আগে ওয়ার্ম আপের সময়েও নাকি তাদের মুখটা ছিল বিষন্নতায় ভরা। “হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটি যেভাবে হেরেছি, তাতে প্রচণ্ড হতাশ ছিল সবাই। ম্যাচ শেষে হোটেলে ফিরে রাত ৩টা পর্যন্ত সিনিয়র ক্রিকেটারটদের নিয়ে আমার রুমে বসে ম্যাচ নিয়ে কথা হয়েছে। হেরে যাওয়ার কথা ভুলতে চেষ্টা করেছি। ম্যাচে নামার আগে ওয়ার্ম আপের সময় পর্যন্ত খেলোয়াড়রা সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি”— জানালেন মাশরফি।
তাসকিনের ওই স্পেল ছাড়াও প্রত্যাবর্তন ম্যাচে নাসিরের অল রাউন্ড পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন মাশরাফি। এখন পাখির চোখ সিরিজ জয়। লাকি ভেন্যু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে টানা ৭ম ওয়ানডে সিরিজ জয়ে পাচ্ছেন নতুন প্রেরণা।আত্মবাশ্বাসী অধিনায়ক বলেন, “সিরিজ ২-১ করার সুযোগ আছে। বিশেষ করে এমন একটা ম্যাচ জয়ের পর সবার মনোবল ভাল অবস্থায় রয়েছে। সবাই যদি ফিট থাকি এবং চট্টগ্রামে গিয়ে ভালমত প্রস্তুতি নিতে পারি, তা হলে ভাল সিরিজ জয়ের সুযোগ রয়েছে।”
আরও পড়ুন: মহাষ্টমীতে ম্যাশদের ইংল্যান্ড বধ, সিরিজ জেতার হাতছানি
আরও পড়ুন: চিরকুটের ফোন নম্বরে জড়িয়ে আমার পুজোর প্রেম
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy