Maharashtra Assembly Election 2024

মহারাষ্ট্র ভোটে জিতবে কে? সমীক্ষায় ত্রিশঙ্কুরও ইঙ্গিত, সরকার গড়তে ‘বাজ়িগর’ হতে পারেন ৪ ‘ছোট’নেতা

২৩ নভেম্বরের গণনায় কোনও জোটই ২৪৫ ছুঁতে না পারলে (ইতিমধ্যেই কয়েকটি জনমত সমীক্ষায় যার আঁচ মিলেছে) কী হবে? সেখানেই আলোচনায় চলে আসছে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনার কথা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৩৪
Smaller parties could play key role for government formation after Maharashtra Assembly Election 2024

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ২৪৫। আগামী ২০ নভেম্বর মহারাষ্ট্রে এক দফার ভোটে যা ছোঁয়ার লড়াই হচ্ছে বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত)-এর জোট ‘মহাজুটি’ এবং কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (শরদ)-এর ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র মধ্যে। কিন্তু ২৩ নভেম্বরের গণনায় কোনও জোটই ২৪৫ ছুঁতে না পারলে (ইতিমধ্যেই কয়েকটি জনমত সমীক্ষায় যার আঁচ মিলেছে) কী হবে?

Advertisement

সেখানেই আলোচনায় চলে আসছে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনার কথা। ভোট পণ্ডিতদের একাংশের পূর্বাভাস, সব মিলিয়ে ছোট দল ও নির্দল প্রার্থীরা ২৫-এর কাছাকাছি আসনে জিততে পারেন (২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে ছোট দল এবং নির্দল প্রার্থীরা মিলিয়ে ২৯টিতে জিতেছিলেন)। আর ‘সম্ভাব্য’ সেই পরিস্থিতিতে চার ‘ছোট দলের’ নেতার মধ্যে কোনও এক বা একাধিক জনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।

রাজ ঠাকরে:

বালাসাহেবের জীবদ্দশাতেই ২০০৬ সালে তাঁর প্রিয় ভাইপো রাজ শিবসেনা ছেড়ে নিজের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) গড়েছিলেন। বালাসাহেবের নামে কখনও কোনও অভিযোগ না করলেও তাঁর পুত্র উদ্ধবের ‘নেতৃত্বগুণ’ নিয়ে গত দেড় দশকে বারে বারেই কটাক্ষ করেছেন রাজ।

এমএনএস গঠনের পরে ২০০৯ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ নিঃসন্দেহে ছিলেন একটি ফ্যাক্টর। রাজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ ভোট নিয়ে, শিবসেনার সঙ্গে পাঞ্জা কষে (তখনও বালসাহেব বেঁচে এবং লড়াইয়ের ময়দানে) পেয়েছিলেন ১৩টি আসন। মরাঠি অস্মিতার বিষয়টিকে সামনে রেখে সে দিন তিনি শুধুমাত্র বিজেপি ও শিবসেনার দুর্গে আঘাত হানেননি, ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। ২০১২-য় বৃহন্মুম্বই পুরসভার ভোটে এমএনএস জিতেছিল ২৭টি ওয়ার্ডে।

কিন্তু কট্টরপন্থী অবস্থান এবং হিংসাত্মক আন্দোলনের কারণে ক্রমশ মরাঠা রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন রাজ। ২০১৪-র বিধানসভা ভোটেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তাঁর দল। ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সে বার মাত্র একটি কেন্দ্রে জিতেছিল এনএনএস। ২০১৯-এও একটি আসন ঝুলিতে আসে। কিন্তু চলতি বছরের লোকসভা ভোটে রাজ প্রার্থী না দিয়ে নিঃশর্তে সমর্থন করেছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে। কিন্তু এ বার ১২৫টি আসনে লড়তে নেমেছে তাঁর দল। এর মধ্যে মুম্বইয়ের ২৫টি-সহ রাজ্যের ৩৮টি আসনে তারা ‘ফ্যাক্টর’ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মুম্বইয়ের মাহিম আসনে লড়ছেন রাজের পুত্র অমিত। ভোটের ফল যদি ত্রিশঙ্কু হয় এবং রাজের দল কয়েকটি আসনে জিততে পারে তবে ‘হিন্দুত্বের’ প্রশ্ন তুলে তিনি বিজেপির সঙ্গী হবেন বলেই অনেকে মনে করছেন।

প্রকাশ অম্বেডকর:

বাবাসাহেব অম্বেডকরের পৌত্র, মহারাষ্ট্রের প্রভাবশালী দলিত নেতা প্রকাশ অম্বেডকরের দল ‘বঞ্চিত বহুজন অঘাড়ী’ (ভিবিএ) এ বারের বিধানসভা ভোটে ২০০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। মরাঠওয়াড়া, পশ্চিম মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অংশে দলিত জনগোষ্ঠীর উপর প্রভাব রয়েছে প্রকাশের। একদা কংগ্রেসের সহযোগী ছিলেন তিনি। অকোলা থেকে ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে দু’বার লোকসভা ভোটেও জিতেছিলেন। তাঁর আলাদা লড়ার সিদ্ধান্ত বিজেপি বিরোধী জোটকে বেশ কিছু আসনে ধাক্কা দিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ।

মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস, শিবসেনা (ইউবিটি) এবং এনসিপি (শরদচন্দ্র পওয়ার)-র জোট ‘মহাবিকাশ অঘাড়ী’ (এমভিএ)-র তরফে লোকসভা ভোটের আগেও দফায় দফায় প্রকাশের সঙ্গে আলোচনা চালানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিরোধী মহাজোট গড়ার উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। লোকসভা ভোটের হিসাব বলছে, প্রকাশ বিরোধী জোটে শামিল হলে লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে বিজেপি, শিন্ডেসেনা এবং অজিত পওয়ারপন্থী এনসিপির ‘মহাজুটি’ আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ত।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর সঙ্গে জোট গড়েছিলেন প্রকাশ। নিজে শোলাপুর লোকসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে হেরে গেলেও পেয়েছিলেন এক লক্ষ ৭০ হাজার ভোট। এ বার অকোলায় একক শক্তিতে লড়ে দু’লক্ষ ২৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি। অঙ্কের হিসাবে ২৩ শতাংশ। অন্য দিকে, সংখ্যালঘু ভোটের পাশাপাশি প্রকাশের দলিত ভোটে ভর করে অওরঙ্গাবাদ আসনে জিতেছিল মিম। এ বার যদি প্রকাশের দল ‘নির্ণায়ক’ হয়ে ওঠে তবে ‘ইন্ডিয়া’য় যোগদান করা সম্ভবনা বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে দলিত ভোটের সংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে বাবাসাহেবের প্রভাবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ৭ শতাংশ। এই ভোটব্যাঙ্কের উপর প্রকাশের প্রভাব কার্যত নিরঙ্কুশ।

আসাদউদ্দিন ওয়েইসি:

মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে ১৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)। এর মধ্যে চারটি আসন রাজধানী মুম্বইয়ের। বাকিগুলি মূলত পশ্চিম মহারাষ্ট্রে অওরঙ্গাবাদ ডিভিশনে।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ওয়েইসির দল জোট গড়েছিল বাবাসাহেব অম্বেডকরের পৌত্র, প্রভাবশালী দলিত নেতা প্রকাশ অম্বেডকরের দল ‘বঞ্চিত বহুজন আঘাড়ী’ (ভিবিএ)-র সঙ্গে। অওরঙ্গাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে জিতেছিলেন মিম প্রার্থী। এর পর সে বছরের বিধানসভা ভোটে ৪৪টি আসনে লড়ে দু’টিতে জিতেছিল ওয়েইসির দল। পেয়েছিল প্রায় দেড় শতাংশ ভোট।

কিন্তু এ বার লোকসভা ভোটে ভিবিএ-স সঙ্গে সমঝোতা করে তিনটি আসনে লড়েও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে ওয়েইসিকে। অওরঙ্গাবাদ আসনটি শিন্ডসেনার কাছে খুইয়েছে তাঁর দল। এই পরিস্থিতিতে গত বারের বিধানসভা ভোটের তুলনায় মিম অর্ধেকেরও কম আসনে লড়ায় (২০১৯-এ লড়েছিল ৪৪টিতে) ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’ কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বলে বিরোধী শিবিরের অনেকে মনে করছেন। আর নির্বাচন-পরবর্তী অনিশ্চয়তা হলে মিম কোনও অবস্থাতেই বিজেপির সঙ্গী হবে না। তবে নিজের রাজ্য তেলঙ্গানায় ‘কট্টর কংগ্রেস বিরোধী’ হিসাবে পরিচিতি আসাদউদ্দিন শেষ পর্যন্ত মহাবিকাশ আঘাড়ীকে সমর্থন না-করে ‘নিরপেক্ষ’ থাকতে পারেন বলে অনেকের ধারণা।

মনোজ জারাঙ্গে পাটিল:

অন্য তিন জনের মতো তিনি পুরদস্তুর রাজনৈতিক নেতা নন। বছর দু’য়েক আগে মরাঠাদের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন দানা বাঁধার আগে পর্যন্ত মনোজ জারাঙ্গে পাটিলের নাম মহারাষ্ট্রেরই অধিকাংশ মানুষ জানতেন না। এখন তাঁর তুলনা হচ্ছে পড়শি রাজ্য গুজরাতের হার্দিক পটেলের সঙ্গে। ২০১৭-র বিধানসভা ভোটের আগে পাটিদার সংরক্ষণ আন্দোলনকে তুঙ্গে তুলে যিনি চাপে ফেলে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে মরাঠা স‌ংরক্ষণের দাবিতে অনশন কর্মসূচির পর থেকেই মনোজের জনপ্রিয়তা ঊর্ধ্বমুখী। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই মনোজের প্রতিটি কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে কখনও তিনি মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডেকে ক্ষমতাচ্যুত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কখনও উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের বিরুদ্ধে খুনের চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন।

লোকসভা ভোটে বিদর্ভ, পশ্চিম মহারাষ্ট্র এবং মরাঠওয়াড়ায় বিজেপির জোটের বিপর্যয়ের নেপথ্যে মনোজের ‘ভূমিকা’ গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই রাজনীতির কারবারিদের অনেকের মত।মহারাষ্ট্রে মরাঠা ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ। এঁদের বড় অংশের উপর মনোজের প্রভাব রয়েছে। তাঁর ‘গোপন সমর্থনে’ লড়া কয়েক জন নির্দল ও ছোট দলের প্রার্থী এ বার ভোটে জিততে পারেন বলেও ইঙ্গিত রয়েছে। বিধানসভা ত্রিশঙ্কু হলে তাই প্রত্যক্ষ ভাবে ভোটের লড়াইয়ে না থাকা মনোজের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন
Advertisement