গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
লোকসভা ভোটের পরেই জল্পনা শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা হাজির না হওয়ায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন ‘মহাজুটি’র অন্দরের ফাটল নিয়ে আলোচনা আরও দানা বাঁধল।
মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি পার্কে মোদীর সভায় মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অঠওয়ালের মতো সহযোগী দলের শীর্ষনেতারা হাজির ছিলেন। ছিলেন শিন্ডেসেনা এবং আরপিআই(এ)-এর মুম্বইয়ের নেতারাও। কিন্তু অজিত বার তাঁর দলের মুম্বই শাখার তিন মুখ— জিশান সিদ্দিকি (নিহত বাবা সিদ্দিকির পুত্র), নবাব মালিক এবং সানা মালিককে দেখা যায়নি জোটের ওই কর্মসূচিতে। এই পরিস্থিতিতে জল্পনা, ভোটের পরে অজিত আবার কাকা শরদের সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন।
চলতি সপ্তাহে অজিত একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটের পরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএতে যোগদানের জন্য তৎকালীন অবিভক্ত এনসিপি নেতৃত্ব সক্রিয়তা শুরু করেছিল। অজিতের দাবি, সে সময় তিনি এবং তাঁর কাকা শরদ পওয়ারকে (অবিভক্ত এনসিপির তৎকালীন সভাপতি) সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছিলেন। এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘শিল্পপতি আদানি মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন।’’ অজিতের ওই মন্তব্যের পরেই ভোটের মহারাষ্ট্রে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর উপর ক্ষুব্ধ বলেও গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। ঘটনাচক্রে, তার পরেই মোদীর সভায় এনসিপি নেতৃত্বের এই অনুপস্থিতি।
লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে এনডিএ-র সার্বিক খারাপ ফলের জন্য অজিতের এনসিপি-র সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের হাত মেলানোকে দায়ী করে জুলাই মাসে আরএসএস মুখপত্রে একটি নিবন্ধ প্রকাশের পরেই দু’দলের সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছিল। লোকসভায় মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে এনডিএ পেয়েছে ১৭টি আসন। বিজেপি সাতটি, দুই শরিক শিবসেনা (শিন্ডে) এবং এনসিপি (অজিত) গোষ্ঠী যথাক্রমে জিতেছে ন’টি ও একটি আসন। পাঁচ বছরের আগের ফল থেকে প্রায় দু’ডজন আসন কম পেয়েছে এনডিএ জোট। এই পরিস্থিতিতে আরএসএসের মুখপত্রে লেখা হয়, অহেতুক রাজনীতির ঘুঁটি সাজাতে গিয়ে দল ভাঙানো মহারাষ্ট্রে বিজেপির ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়েছে। অজিত ‘কংগ্রেস ভাবাদর্শের অনুসারী’ এবং ‘দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত’ বলেও খোঁচা দেওয়া হয় ওই নিবন্ধে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২০ নভেম্বরে এক দফায় মহারাষ্ট্রে ২৮৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। গণনা ২৩ নভেম্বর। মূল লড়াই বিজেপি-শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত)-এর জোট ‘মহাজুটি’এবং কংগ্রেস-শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (শরদ)-এর ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’র মধ্যে। অজিতের দল ৫৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ন’টিতে বিজেপি বা শিন্ডেসেনার সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হচ্ছে তাদের। এর মধ্যে রয়েছে মুম্বইয়ে নবাব মালিকের আসন মানকুর্ড-শিবাজিনগরও! সেখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ে নবাবের বিরুদ্ধে শিন্ডেসেনার প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি।