এ বছর পুজো না হয় বেশ দেরিতে! ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী। আবার এই তো বছর কয়েক আগে সেপ্টেম্বরের ভেতর দুগ্গা পুজো চুকেবুকে গিয়েছিল। সেবার ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমী ছিল।
কিন্তু সাধারণত পুজো অক্টোবরের প্রথম পক্ষেই বেশি পড়ে। মানে পয়লা থেকে পনেরো অক্টোবরের মধ্যে। আর কী আশ্চর্য! গোটা শহর যখন আলোয়-আলোয় ঝলমল করে, ঠিক তখন কলকাতা ময়দানে সন্ধে বেলা থেকে জমাট অন্ধকার!
যে ময়দানের ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিং তিন প্রধানের ঘেরা মাঠ, বিশালাকায় ইডেন গার্ডেন্স বছরের নানা সময় নানান বড় বড় ফুটবল-ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে গমগম করে, সেই ময়দানই বেশিরভাগ বছর ঠিক দুর্গাপুজোর সময় আঁধারে ঢাকা হয়ে নিঝুম পড়ে থাকে। এমনিতেই পুজোর সময় ময়দানে খেলার পাঠ থাকে না। আগে পুজোর ঠিক আগে আইএফএ শিল্ড শেষ হয়ে যেত। ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ কালীপুজোর পর শীতের আমেজে ইডেনে হত। কিন্তু তখনও ১-১৫ অক্টোবর, মানে পুজো বা তার আশপাশের সময়টায় সূর্য ডুবলেই গোটা ময়দান অন্ধকারে ডুবে যেত। কোথাও কোনও আলোকবিন্দুও দেখা যেত না। ঘেরা মাঠগুলির টেন্ট থেকে এক চিলতে আলো বাইরে বেরনোর জো ছিল না!
এখনও ময়দানের সেই ট্র্যাডিশন চলেছে! কেন? আসলে গোটা ময়দান এখনও ফোর্ট উইলিয়ামের সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন জায়গা। আর সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের আইনের পরম্পরা চলে আসছে, ১-১৫ অক্টোবর ময়দানের বাৎসরিক ছুটি। ওই ১৫ দিন ময়দানে কোনও খেলাধুলো তো দূর অস্ত, সূর্যাস্তের পর ময়দানের কোথাও আলো পর্যন্ত জ্বালানো নিষেধ। যে জন্য ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান তাদের মালিদের ঠিক ওই ১৫ দিন ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিত। লাল-হলুদের শঙ্কর মালি আর সবুজ-মেরুনের ভাসিয়া মালির মতো ময়দানের প্রবাদপ্রতিম চরিত্রগুলিকে বাধ্য হয়ে ১-১৫ অক্টোবর তাঁদের প্রাণপ্রিয় ক্লাব-তাঁবু ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে হত। এখনকার ইস্ট-মোহনের মালিদের বা মহামেডান কিংবা ইডেনের মাঠকর্মীদেরও কপালে একই বিধান লেখা থাকে। তবু সিএবি তাদের মালিদের কাছাকাছি গেস্ট হাউসে স্থানান্তরিত করে। তিন প্রধানও ইদানীং তাই করছে। কারণ ফুটবল-ক্রিকেট খেলা দুই'ই এখন বছরভর চলে এখানে।
তবুও ময়দানের অক্টোবরের ‘অন্ধকার’ দিনের সেই আইন বলবৎই আছে। তিন প্রধানের শীর্ষকর্তারা ছাড়াও সিএবি কর্তারাও অনেক বার ফোর্ট উইলিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এই মান্ধাতা আমলের নিয়ম তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিধি বাম! ময়দানের সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলিতেছে!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy