মোটরকালী
বালুরঘাট এলাকায় কালীপুজোগুলির মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হল মোটরকালী পুজো। নাম শুনে একটু অন্য রকম ঠেকলেও এখানে কিন্তু চিরাচরিত কালী মায়েরই পুজো করা হয়। অন্য জায়গার মতোই ভিড় করেন বহু মানুষ। তবে এই পুজো ঘিরে আছে এক অন্য গল্প।
বালুরঘাট বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা বর্তমানে খুবই জমজমাট হলেও এক সময়ে এই জায়গা ছিল আতঙ্কের কারণ। চার দিকে জলা-জঙ্গল, জনশূন্য ছিল এই জায়গা। শোনা যায়, সেই আতঙ্কের হাত থেকে রক্ষা পেতেই নাকি শুরু হয়েছিল এই মোটরকালীর পুজো। সেই ঐতিহ্য মেনেই আজও পূজিত হন দেবী।
প্রথমত, এই কালীর নাম নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে, এই মোটরকালীর অর্থ কি? আসলে বালুরঘাটের যে জায়গায় এই পুজো হয়, সেটি বাসস্ট্যান্ডের পাশেই। সে কারণেই দেবীকে এই নামে ডাকেন স্থানীয়রা। এই পুজো শুরু হওয়ার নেপথ্যেও আছে একটি গল্প। লোকমুখে শোনা যায়, বর্তমান বালুরঘাট শহরের বড় বাজার সংলগ্ন এলাকায় এই জায়গার আগে নাম ছিল ফটিকগঞ্জ। আর বর্তমান বালুরঘাট হাইস্কুলের কাছে একটি হাসপাতাল ছিল, যার কিছুটা দূরেই ছিল হাসপাতালের মর্গ বা লাশকাটা ঘর। পরবর্তীতে কোনও কারণে জেলা হাসপাতালটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রঘুনাথপুর এলাকায়। সঙ্গে সেই মর্গও স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু পরিত্যক্ত মর্গ এবং মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি আগের জায়গাতেই থেকে যায়। ফলে এই পরিত্যক্ত মর্গ ঘিরে ভূতের ভয় ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়। অনেকেই যেতে ভয় পেতেন।
স্থানীয় মানুষের মন থেকে সেই ভয় দূর করতেই এলাকায় একটি কষ্টি পাথরের কালীমূর্তি স্থাপন করা হয়। সেই সূত্রেই এখানে এই পুজো শুরু।
আবার এই মূর্তির নেপথ্যেও আছে এক কাহিনি। স্থানীয় মানুষদের কাছে জানা যায়, এই কষ্টি পাথরের মা কালীর মূর্তিটি বহু বছর আগে কুমারগঞ্জ ব্লকের বরাহার জমিদার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এক দিন সেখান থেকেই হঠাৎ তা চুরি যায়।পরবর্তীতে সেই মূর্তি পাওয়া যায় পরিত্যক্ত মর্গের পাশেই আত্রেয়ী খাঁড়িতে। সেখান থেকে পুলিস প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্ধার করা হয় মূর্তিটি। কথিত, যে স্থানে এই মূর্তিটি উদ্ধার হয়, তার পাশেই একটি জলাশয় আছে। যার জল নাকি কোনও দিন শুকোয় না। বর্তমানে সেই অঞ্চল থেকে মূর্তিটি সরিয়ে নিয়ে আসা হলেও সেই স্থানে এখনও পুজো করা হয়। প্রত্যেক বছর চৈত্র সংক্রান্তি ও দীপাবলীতে মহা ধুমধামের সাথে পূজিত হন মোটর কালী।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy