Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Nabin Bhaskar the legendary sculptor

ব্যতিক্রমী সাধক নবীন ভাস্কর, দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী থেকে নিস্তারিণী, জানুন এক অন্য সাধনার কথা

এই শিল্পীই কিংবদন্তি নবীনচন্দ্র ভাস্কর। সারদা মা স্বয়ং যাঁর প্রসঙ্গে বলছেন, “ঠাকুরের মুখে শুনেছি, নবীন ভাস্কর সারা দিনে বেলা তিনটের সময়ে এক বার মাত্র হবিষ্যান্ন ভোজন করতেন। অত সংযত হয়ে, অত তপস্যা করে তবে দক্ষিণেশ্বরের মা কালীকে বানিয়েছেন।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২৪
Share: Save:

ঠক ঠক ঠক…স্নান সেরে, স্তব করে, হবিষ্যি নিয়ে পাথর কুঁদতে বসেছেন শিল্পী। ঠক ঠক… শুধু জেগে থাকে ছেনি হাতুড়ির আঘাত আর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। প্রতিটা ফুলকিতে ঠিকরে উঠছে মাতৃনাম। বিশাল এক কারখানা, চতুর্দিকে কেবল মাতৃ মূর্তি! কোথাও কষ্টি পাথর, কোথাও কুমারী বেলে পাথর, কোথাও মার্বেল।মায়ের অপূর্ব মুখভঙ্গিতে খেলে যায় স্মিত হাসি। আলো হয়ে থাকে ঘরের চতুর্দিক। মায়ের মূর্তি গড়া তো সহজ কাজ নয়। সে-ও এক রকমের সাধন বটে। একাগ্র চিত্তে মাতৃভাব কুঁদে তোলা কোথাও গিয়ে মাতৃ আরাধনাই তো! তাইতো শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “যে যার ধ্যান করে, সে তার সত্তা পায়। যার যে রূপ ভাবনা, তার সেই মতো সিদ্ধি হয়।”

এই শিল্পীই কিংবদন্তি নবীনচন্দ্র ভাস্কর। সারদা মা স্বয়ং যাঁর প্রসঙ্গে বলছেন, “ঠাকুরের মুখে শুনেছি, নবীন ভাস্কর সারা দিনে বেলা তিনটের সময়ে এক বার মাত্র হবিষ্যান্ন ভোজন করতেন। অত সংযত হয়ে, অত তপস্যা করে তবে দক্ষিণেশ্বরের মা কালীকে বানিয়েছেন। তাই তো অত জীবন্ত!” কাটোয়ার দাঁইহাটের কেনারাম ভাণ্ডারী ছিলেন পাথর শিল্পী। পাথর কুঁদে খল, বাটি, উদুখল তৈরি করে মাথায় করে বেচতেন। সে ভাবেই খানিক টাকা করেছিলেন। কেনারামের পুত্র রামধন সেই অর্থ আর শিল্প জ্ঞানকে মূলধন করে গড়লেন পাথর খোদাইয়ের কারখানা। তিনিই যাকে বলে অগ্রদূত। নিঃশব্দ বিপ্লব হল যেন! ধীরে ধীরে ঘরে ঘরে শুরু হল এই শিল্পচর্চা।

বর্ধমানের মহারাজা উপাধি দিলেন ‘ভাস্কর’। রামধনের পুত্র নবীনচন্দ্র। এ বিদ্যা তার নাড়িতে, জন্মাধিকার। ১৮৩৫ খ্রীস্টাব্দে জন্ম। সুদক্ষ কারিগর পিতার শিল্পকে সৌকর্য ও সাধনার স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন নবীনচন্দ্র। কালো কষ্টি পাথর, মার্বেল, বেলেপাথর, চান্ডিল অঞ্চলে নরম স্তর পাথরকে তিনি প্রাণ দিলেন নিজের যন্ত্রের ছোঁয়ায়। যেন সাক্ষাৎ বিশ্বকর্মার বরপুত্র!

প্রতিনিয়ত নিরীক্ষা করে গিয়েছেন। বিপ্লব এনেছেন। অষ্টধাতুর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নবীনচন্দ্র গড়লেন মাতৃমূর্তি। প্রথম গড়া মাতৃমূর্তি ‘শ্রী নিস্তারিণী মাতা ঠাকুরানী’। দ্বিতীয়টি, বরাহনগরের দে প্রামাণিক পরিবারের ‘ব্রহ্মময়ী মা’। ১৮৫৩ অব্দে সে বাড়ির খুড়ো-ভাইপো মা-কে প্রতিষ্ঠা করেন। তৃতীয় মূর্তি গড়লেন নবীনচন্দ্র। রাজেশ্বরী কালী, দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী। সাড়ে তেত্রিশ ইঞ্চির অপূর্ব মাতৃবিগ্রহ। ধাপে ধাপে সিঁড়ি দিয়ে উঠে বেদির উপরে পদ্মাসনে শায়িত শিব। বক্ষে করুণাময়ী মা দক্ষিণাকালী আদ্যা।

শ্রীরামকৃষ্ণ তাই তো অপর দুই মা-কে ডাকতেন মাসি। মা ভবতারিণীর দুই বোন। এর পরে একে একে বর্ধমান রাজবাড়িতে গোপাল ও কালী মূর্তি, সিউড়ি ও জেমো রাজবাড়ির কালী মূর্তি, মুক্তাগাছার রানির হাতে কাশীতে প্রতিষ্ঠিত কালীমূর্তি, নাটোর রাজবাড়ির আনন্দকালী ও মণিপুর বংশের কালীমূর্তি প্রমুখ। প্রায় সাধনার স্তরে নিজেকে নিয়োজিত করে কঠিন অনুশাসনের মধ্যে দিয়ে মাতৃমূর্তি গড়ে গিয়েছেন এ ভাবেই। ওই যে, যে যেমন ধ্যান করে, সে তেমন সত্তা পায়। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব পেয়েছিলেন মা ভবতারিণী, বামাঠাকুর পেয়েছিলেন মা তারা আর নবীন ভাস্কর পেলেন মায়ের মাতৃভাব ফুটিয়ে তোলার সত্তা। ১৯০৮ সালে ৭৩ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন নবীন ভাস্কর। রেখে গেলেন তাঁর সাধনা। মা রইলেন ছেলের কথা বলতে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2024 Myth Sculptor Ananda Utsav 2024
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE