আভড়াপুনেই উৎসব
আশ্বিনের শেষ পূর্ণিমায় লক্ষ্মীপুজোয় মেতে ওঠে গ্রামবাংলা থেকে শহর। জানেন কি, এই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনেই এক অন্য উৎসবে মেতে ওঠেন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দারা। আভড়াপুনেই উৎসব। নাম শোনেননি নিশ্চয়ই? না শোনারই কথা! গ্রামবাংলার প্রাচীন লোকসংস্কৃতির অঙ্গ এই উৎসব, যা যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছেন ঝাড়গ্রামের সুবর্ণরেখা নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এই আভড়াপুনেই উৎসব বা অব্যূঢ়া পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। লিঙ্গবৈষম্যহীন এই লোক উৎসব শুধুমাত্র এই অবিবাহিত ছেলে মেয়েদের জন্যই। অব্যূঢ়া অর্থাৎ অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতে ভাল জীবনসঙ্গী পাওয়ার কামনায় মা, দিদা, ঠাকুমারা এই ব্রত পালন করে আসছেন।
পড়শি রাজ্য ওড়িশার 'কুমার পূর্ণিমা'-এর সঙ্গে এই আভড়াপুনেই উৎসবের প্রচুর মিল। মনে করা হয়, ওড়িশার এই উৎসব থেকেই গ্রাম বাংলার এই উৎসবের উৎপত্তি। এই পুজোর দিনে বাড়ির সবাই নিরামিষ খাবার খান। অনেকে উপোসও করেন। এ দিন পিঠে, পায়েস, লুচি, সুজি, ক্ষীরের মতো হরেক রকম নিরামিষ পদ রান্না করে সপরিবারে আনন্দ করে খাওয়াদাওয়া হয়। গ্রামীণ এই লোক উৎসবের রীতি অনুযায়ী, পুজোর দিনে বাড়ির অবিবাহিত ছেলে মেয়েরা মুড়ি খেতে পারেন না। লোকবিশ্বাস বলে, মুড়ি খেলেই এই ব্রত নষ্ট হয়। যাকে স্থানীয় ভাষায় 'বুড়ি যাওয়া' বলা হয়ে থাকে।
দিনের বেলায় স্নান সেরে বাড়ির মা-ঠাকুমারা বাড়ির অবিবাহিত পুত্র-কন্যাদের কপালে চন্দনের মঙ্গল টীকা দেন। কামনা করেন, তারা যেন লক্ষ্মীর মতো স্ত্রী আর কার্তিকের মতো স্বামী পায়। সারা দিন ধরেই চলে এই ব্রত পালন। সব শেষে সন্ধে বেলায় কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ ওঠার পরে তুলসী গাছে জল ঢেলে শেষ হয় পুজোর আচার।
আধুনিকতার যুগে এই ধরণের গ্রাম বাংলার লোক উৎসব আজ প্রায় বিলুপ্তের পথে। আভড়াপুনেই উৎসবের এই রীতিনীতি সবারই বেশ নজর কাড়ে প্রতিবছর।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy