আদ্যা মা
কলকাতার সর্বত্র কালী মন্দিরের ছড়াছড়ি। প্রতিটি মন্দিরের রয়েছে বিশেষ মাহাত্ম্য। কালীপুজোর সময়ে বহু মন্দিরেই ভিড় জমান ভক্তরা। বিশেষত কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বরে।
কলকাতার পুরনো কালী মন্দিরগুলির অন্যতম আদ্যাপীঠ মন্দির। দক্ষিণেশ্বর থেকে হাঁটাপথেই এই মন্দির, যার সঙ্গে জুড়ে আছে নানা ইতিহাস ও অলৌকিক ঘটনা।
এই আদ্যাপীঠ মন্দিরে শুধু দেবী কালী নন, একই বিগ্রহ মঞ্চে অবস্থান করেন রাধা-কৃষ্ণ ও রামকৃষ্ণ। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন অন্নদাচরণ ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম থেকে ১৩২১ বঙ্গাব্দে কলকাতায় আয়ুর্বেদিক চর্চা ও পড়াশোনার জন্য এসেছিলেন তিনি। আমহার্স্ট স্ট্রিটে এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতেন। পড়াশোনা শেষ করে সেই বন্ধুর বাবার সহায়তায় একটি ডিসপেনসারি খোলার জন্য দোকান ভাড়া নেন তিনি।
পরে এক সময়ে শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে এসে সাধনায় মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন অন্নদাচরণ। শোনা যায়, পরবর্তীতে এক রাতে স্বপ্নাদেশে স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে ইডেন গার্ডেনসে গিয়ে ঝিলের পাশে নারকেল এবং পাকুড় গাছের মাঝখান থেকে একটি কালীমূর্তি উদ্ধার করে আনতে বলেন। অন্নদাচরণ ওই জায়গায় গিয়ে দেখেন সত্যিই একটি ১৮ ইঞ্চির কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি সেখানে রয়েছে। তিনি মূর্তিটি উদ্ধার করে আনে
সেই দিন ছিল রাম নবমী। রাতে দেবী দেখা দিয়ে বলেন, বিজয়া দশমীর দিনে তাঁকে মাঝ গঙ্গায় বিসর্জন দিতে হবে। অন্নদাচরণ ভয় পেয়ে ভাবেন মা তাঁর কাছে থাকতে চান না। তাই তিনি চলে যেতে চাইছেন। তখন কালী আবার দেখা দিয়ে বলেন, ‘আমি শুধু শাস্ত্র বিহিত মতে পুজো পেতে চাই, তা নয়। মা খাও, মা পড়ো – এমন সহজ সরল প্রাণের ভাষায় যে ভক্ত নিজের ভোগ্যবস্তু এবং ব্যবহার্য বস্তু আমাকে নিবেদন করেন, সেইটিই আমার পুজো।'
মা কালী আদ্যাস্তোত্র শোনালে তা লিখে রাখেন অন্নদাচরণ, যা আজও বর্তমানে পাঠ করা হয়। এর পরে দেবী মূর্তিটি দশমীর দিন বিসর্জন দেন তিনি। দেবীর কথা মতো সেই মূর্তির একটি ছবি তুলে রাখেন। যে ছবির আদলে এখনকার আদ্যা মূর্তি তৈরি করা হয়। ১৩২৫ বঙ্গাব্দে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে স্বপ্নে সন্ন্যাস দীক্ষাও দেন। রামকৃষ্ণদেব অন্নদাকে বলেন, 'তোর কবিরাজি ব্যবসা হবে না।'
পরবর্তীতে আদ্যাপীঠ মূলত অন্নদাচরণ ভট্টাচার্যের অনুগামীদের দ্বারাই ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এখনকার মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে অন্নদাচরণ পুরীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর পরেও অনুচরেরা তাঁর বাণী ও নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছেন আজও। আদ্যাপীঠ হয়ে উঠেছে এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy