ঘটনার সূত্রপাত আমার দিদির এক বন্ধুর মায়ের আকস্মিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করেই। স্বাভাবিকভাবেই ওই বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল আমার দিদি। এমনিতে খুব একটা ভীতু না হলেও সেই দিনের পর থেকে কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকছিল দিদি। যত দূর মনে পড়ে, দিদিকে ওর সেই বন্ধু হয়তো বলেছিল যে তার মায়ের চলে যাওয়ার পরেও বাড়িতে মাকে অনুভব করতে পারছে সে। ভূত না বসলেও ঠিক এই ভাবনাটাই চেপে বসেছিল দিদির ঘাড়ে।
এর পর একদিন আমার দিদির অন্য আর এক বন্ধু আমাদের বাড়ি আসে ওর মাথা থেকে এই ভাবনা তাড়াতে। ‘ভূত বলে আসলেই কিছু হয় না, সবটাই মনে ভুল’, সে বলে চলে নিজের মতো। কিন্তু বন্ধুর বাড়িতে তার মৃত মায়ের ‘উপস্থিতি’র এই কথা একেবারে উড়িয়ে দিতে নারাজ ছিল আমার দিদি। আর আসল ঘটনা ঘটে সেই দিনই।
সেই দিন ঘরে আমি, আমার দিদি এবং দিদির সেই বন্ধু। একসঙ্গেই বসে ছিলাম। এখানে বলে রাখি, আমাদের সেই সময় এক তলা বাড়ি ছিল। এখনকার মতো পাশে টানা ‘স্লাইডিং’ জানালা তো দূরঅস্ত, ছিল দু’পাল্লার জানালা। সঙ্গে লোহার রডের মতো গ্রিল। আমার মনে আছে নীচের পাল্লাটা তখন পুরোপুরি বন্ধ আর উপরের পাল্লাটা সামান্য ভেজানো ছিল।
দিদির বন্ধু তখন ব্যস্ত লৌকিকতা-অলৌকিকতা নিয়ে জ্ঞান কপচাতে! এমন সময় ওই বন্ধুটির এবং আমার চোখে পড়ে এমন একটি জিনিস, যার জন্য হয়তো আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। আর দিদি তো একেবারেই নয়।
হঠাৎ করেই দেখতে পাই জানলার দু’টো গ্রিল ধরে রয়েছে একটি বাচ্চার হাত। শুধু ধরেই নেই, একবার ধরছে এবং একবার ছাড়ছে! সেটা দেখে ভয়ে আমি এবং সেই বন্ধু দু’জনেই দিদির উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ি। আর ওই মুহূর্তে দিদির অবস্থা কী হয়েছিল, তা আর আশা করি বলে দিতে হয় না! এই অবধি পড়ে যদি আপনি ভয় পেয়ে থাকেন তাহলে আমার ঘটনাটি লেখা সার্থক! আসলে কি জানেন তো, ওই ছোট্ট দু’টো হাত আমারই পাড়ার এক জন বন্ধুর ছিল।
আজ্ঞে হ্যাঁ। ও জানলা দিয়ে উঁকি মেরে হয়তো দেখতে চাইছিল আমি আছি কিনা ঘরে! জানলার নীচের পাল্লা বন্ধ থাকায় উপরের গ্রিলের নাগাল পাওয়াটা তার কাছে কিছুটা মুশকিল হয়ে পড়ছিল। যার কারণেই গ্রিলটাকে তার বারবার ধরা-ছাড়া!
ঘটনাটা আজ মনে পড়লে খুবই হাসি পায়। কিন্তু সেই দিন অত্যন্ত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা। আমার খোঁজ নিতে আসা বেচারা বন্ধুটিরও তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy