লহমা ভট্টাচার্যের ভৌতিক অভিজ্ঞতা
ভূতে ভয় পান? আত্মায় বিশ্বাস রাখেন? হয় তো বলবেন, ‘না’। এই একই প্রশ্ন যদি আমায় ছোটবেলায় করা হত আমার উত্তরও বোধহয় একই হত। কিন্তু লন্ডনে পড়াশোনা করার সময়ে আমি যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম, তার পর থেকে তেনাদের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করার মতো দুঃসাহস আমি আর কখনও দেখাইনি। লন্ডনের ‘হাইগেট’ কবরস্থানের কথা যাঁরা জানেন না, তাঁদের বলে দিই, সেখানকার অত্যন্ত বিখ্যাত এক সমাধিক্ষেত্র। যেখানে কার্ল মার্ক্স-সহ অন্যান্য স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের সমাধি রয়েছে।
তবে আমি যেখানে থাকতাম, সেখান থেকে ট্রেনে করে গেলেও পৌঁছতে প্রায় ১ ঘণ্টার কাছাকাছি লেগেই যেত। এক দিন আমার বন্ধুরা ফন্দি আঁটে, সমাধিক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রাতের অন্ধকারে পিছনের একটি রাস্তা দিয়ে সেই সমাধিতে ঢুকব। আমি নিজে খুব একটা সাহসী ছিলাম না। কিন্তু আমরা এত জন ছিলাম যে ভয়কে জয় করাটা তখন কঠিন লাগছিল না।
ঘড়ির কাঁটায় স্থানীয় সময় অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার কাছাকাছি। স্টেশন থেকে নেমে ১৫ মিনিটের হাঁটা পথ ওই কবরস্থান পর্যন্ত। ‘হাইগেট’-এর দিকে যতই এগোচ্ছি, ততই যেন ভয় জাঁকিয়ে বসছে আমায়। ক্রমশ ছোট ছোট পাঁচিল টপকে এগিয়ে চলেছি গন্তব্যের দিকে। শেষ পর্যন্ত মূল পাঁচিলের দিকে পৌঁছতেই ভাবলাম, এ বার হয় তো বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া যাবে। কিন্তু কোথায় কী! আমার বন্ধুদের মাথায় তখন অভিযানের ভূত! এসেছি যখন, কার্ল মার্ক্সের সমাধি দেখেই ফিরব! অগত্যা আমি আর আমার এক বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা বাইরেই অপেক্ষা করব এবং বাকিরা চলল কবরস্থানের ভিতরে।
আমার এখন আর মনে নেই কত ক্ষণ ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শুধু এইটুকুই মনে আছে, প্রতিটি মুহূর্ত ছিল দমবন্ধ হয়ে আসার মতো। কখনও মনে হচ্ছে, কেউ যেন পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। অথচ আমরা দু’জন ছাড়া সেখানে কেউ নেই। আবার কখনও শুনতে পাচ্ছি কারও ফিসফিসানি! আমরা চাইলেও সেখান থেকে উঠে চলে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ যাবই বা কোথায়? আশেপাশে কোনও বাড়ি নেই। অ্যাপ ক্যাব বুক করলেও সেখানে আসা সম্ভব নয়। এই সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ লক্ষ করলাম কোথা থেকে যেন একটা কালো বেড়াল আমাদের সামনে এসে বসল। ব্যস! আর এক মুহূর্তও নয়!
হুড়মুড়িয়ে সেখান থেকে উঠে আশেপাশে বাড়ি খুঁজতে শুরু করলাম। অবশেষে ওই সমাধিক্ষেত্রেরই একজন দারোয়ানের বাড়িতে ঢুকে পড়ি। আমাদের অবস্থা থেকে তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি কোনও এক সমস্যায় পড়েই সেখানে ছুটে গিয়েছি আমরা। পুরো ঘটনাটা খুলে বলি তাঁকে। সব শুনে তিনি হতচকিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, “তোমাদের কি মাথা খারাপ? ওখানে এক মুহূর্তও থাকা বিপজ্জনক!” তিনি এতটাই অমায়িক ব্যক্তি ছিলেন যে, আমাদের বন্ধুদের ফিরে না আসা পর্যন্ত ওই বাড়িতেই অপেক্ষা করতে বলেন আমাদের।
অনেক পরে আমার বন্ধুরাও ফিরে আসে সেখান থেকে। পরে শুনেছিলাম আমাদের সঙ্গে যা হয়েছিল সেই দিন, এমন ঘটনার উদাহরণ প্রচুর। আমি বলব, লন্ডনে থাকলে এক রাত কাটিয়ে আসুন ওই জায়গায়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy