Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Tathagata Mukherjee Horror Story

ভাঙা রাজবাড়ি, ছাদে ভয়াবহ শব্দ, আর... ওটা কী দেখলাম! ভূতচতুর্দশীর আগে লিখলেন তথাগত

অ্যাসবেস্টারের উপর ১০-১২ জন দৌড়াদৌড়ি করলে যেমন আওয়াজ হবে, তেমন আওয়াজ হতে শুরু করে। ১০-১৫ মিনিট ধরে ওই আওয়াজ থেমে যায়। এবার শুরু হয় অন্য উৎপাত! গোটা ঘরের চারপাশে যেন কেউ প্লাস্টিক মোড়াচ্ছে।

তথাগত মুখোপাধ্য়ায়ের ভৌতিক অভিজ্ঞতা

তথাগত মুখোপাধ্য়ায়ের ভৌতিক অভিজ্ঞতা

তথাগত মুখোপাধ্যায়
তথাগত মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪ ০১:০৭
Share: Save:

আমি বিশ্বাস করি প্রকৃতি কোনও রহস্য পছন্দ করে না। অথচ প্রকৃতিই রহস্য তৈরি করে। কারণ বিভিন্ন ধরনের রহস্যময় ঘটনার সাক্ষী আমি ছোট থেকেই। কোন ঘটনাটা দিয়ে শুরু করব বলুন?

আচ্ছা, একদম ছোট বেলায় আমার ওড়িশা ভ্রমণের কাহিনি দিয়েই শুরু করি বরং। আমি আর আমার বাবা-মা এবং দিদা ঘুরতে গিয়েছিলাম। ঠিক কত বছর আগে তা সঠিক ভাবে মনে না থাকলেও এটা মনে আছে যে সেই বছর সেখানে ঝড় হয়েছিল। সেই ঝড় এমনই ভয়ানক যে ওড়িশার অর্ধেক বনই প্রায় ঝড়ের কবলে। ঘটনা ঘটেছিল কোনারক সূর্য মন্দির থেকে ফেরার পথে। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ৭টার কাছাকাছি। নিজেদের গাড়িতে ছিলাম আমরা সকলে। সেই সময় এতটাই নিকষ অন্ধকার যে নিজেদের লোমকূপ পর্যন্ত দেখতে পারছিলাম না আমরা। পেছনের সিটে আমি, মা আর দিদা এবং সামনের সিটে গাড়িচালক এবং বাবা বসে। বেশ যাচ্ছিলাম, আচমকা সজোরে গাড়িতে ব্রেক কষেন গাড়িচালক। অথচ রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। দেখলাম বাবা এবং গাড়িচালক দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় কী যেন একটা দেখলেন এবং আবার গাড়িতে চলে এলেন। আমাদের সকলেরই মাথায় তখন প্রশ্ন চিহ্ন। বাবাকে জিজ্ঞেস করলেও বাবা এড়িয়ে যান কথাটি। স্বর্গদ্বারের কাছে এসে গাড়িটা হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়।

রাতের বেলা বাবা শেষমেশ খোলসা করেন বিষয়টা। জানান সেই সময় রাস্তায় এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন তাঁরা। যার জন্য গাড়ির ব্রেকটা কষতে হয়েছিল। গাড়িটা যখন পুরোদমে এগোচ্ছে আমরা হেডলাইটে দেখতে পাই একজন সাদা কাপড় পরা মহিলা আমাদের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সে রাস্তার পাশ থেকে আমাদের গাড়ির একেবারে সামনে চলে আসেন। তড়িঘড়ি ব্রেক কষেন গাড়িচালক। অথচ পরে দেখা যায় সেখানে কোনও মানুষের অস্তিত্বই নেই। বাবা এবং ড্রাইভার দু’জনেরই তখন হতচকিত অবস্থা। একটাই প্রশ্ন, দু’জন একসঙ্গে কী ভাবে ভুল দেখতে পারে?

আরও একটা ঘটনা আমার স্পষ্ট ভাবে মনে পড়ে। আমরা বিহার সফরে গিয়েছিলাম তখন। আমি, মা, বাবা, আমাদের ড্রাইভার এবং তাঁর এক সহকারী। একদিন আমরা বেড়িয়েছিলাম ঘুরতে। ছিন্নমস্তা পর্যন্ত পৌঁছতে খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। বর্তমান সময়ের মতো তখন এতটাও আধুনিক হয়নি সেই সব জায়গা। রাত সাড়ে ৮টার সময়েও স্থানীয়রাও আমাদের বারংবার সাবধান করছিলেন এই সময় সেখানেই কোনও হোটেলে রাতটা থেকে যেতে। কারণ পথে বিপদ হতে পারে। রাজারাপ্পায় গিয়ে দেখি সত্যিই সেই জায়গাটা জনমাবনহীন। এমন সময় একটি ভাতের হোটেল খোলা দেখে সেখানে সবটা জানাতে তাঁরা বললেন আমাদের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমরা উঠলাম একটি রাজবাড়িতে। যার সামনের দিকটা অক্ষত থাকলেও পিছনের দিক প্রায় ধ্বংসাবশেষ। ভোগের ব্যবস্থা যে ঘরে করা হয়, তেমনই একটা ঘরে আমাদের রাত্রিতে থাকার ব্যবস্থা হয়। কেবল আমাদেরকে বলা হয়েছিল রাতের বেলা যদি কেউ দরজায় টোকা দেয় আমরা যেন দরজা না খুলি। তার কারণ মিলিটারিরা অনেক সময় নাকি সেখানে টহল দিতে আসেন। আমরাও মাদুর পেতে শুয়ে পড়ি। ঘড়িতে তখন রাত ১২টা। হঠাৎ করে বুট মার্চের আওয়াজ শুনতে পাই আমরা। ভেবেছিলাম মিলিটারির লোকই এসেছেন। একটা সময় আমাদের ঘরের দরজা এবং জানলাতেও আঘাত করতে থাকেন তাঁরা। এখানে বলে রাখি, ওই ঘরের ছাদের জায়গায় ছিল অ্যাসবেস্টার। এই অ্যাসবেস্টারের উপর ১০-১২ জন দৌড়াদৌড়ি করলে যেমন আওয়াজ হবে, তেমন আওয়াজ হতে শুরু করে। ১০-১৫ মিনিট ধরে ওই আওয়াজ থেমে যায়। এবার শুরু হয় অন্য উৎপাত! গোটা ঘরের চারপাশে যেন কেউ প্লাস্টিক মোড়াচ্ছে, এমন আওয়াজ হতে শুরু করে। আমার ভয় করছিল তো বটেই। কিন্তু সেই সঙ্গে কৌতূহলও আমার তখন তুঙ্গে। বুট মার্চের আওয়াজও থামেনি তখন। এই সব আওয়াজ শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। মাঝরাতে একবার ঘুম ভাঙে। তখন আওয়াজের ব্যবধানটা একটু কমেছিল। এর পর আবার ঘুম ভাঙে একদম সকালে। পরে ওই রাজবাড়ির বাসিন্দাদের আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম আগের দিন রাতে মিলিটারির লোকেরা এসেছিলেন কি না। তাঁদের সাফ জবাব, ‘কই না তো!’

আমাদের ওড়িশা ট্রিপেরই আরও একটা ঘটনার ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাই না। সেটা হল টোটা গোপীনাথ বলে একটা মন্দির আছে ওড়িশাতে। সেই মন্দিরে শুনেছি ছবি তোলা যায় না। সেই সময় আমার ‘কোডাক কে-১০’ ক্যামেরা ছিল। তখন তো ফ্ল্যাশ ক্যামেরার যুগ। মন্দির ফাঁকা থাকায় আমি নিষেধাজ্ঞা না মেনেই ছবি তুলেছি সেখানে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি বেশ ফ্ল্যাশ মেরেছি। পরে দেখি সবক’টি ছবিই সাদা এসেছে। বরাবরই আমি যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পছন্দ করি। কিন্তু এমন কিছু ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছে যার সত্যিই আমি আজ পর্যন্ত কোনও যুক্তি বা ব্যাখ্যা কিছুই খুঁজে পাইনি।

এই প্রতিবেদন ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE