চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ছবি: পিটিআই।
ঘরের অন্দরে তো বটেই, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত বহির্বিশ্বেও। চিন-সহ আমেরিকা, ইউরোপ, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ। সমাজমাধ্যমে সরকারি ‘সেন্সরশিপ’ এড়িয়েও চলছে প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদী আগুনের স্ফুলিঙ্গ কি ‘ব্রিজম্যান’ ছড়িয়েছেন?
দলীয় এবং প্রশাসনিক স্তরে ক্ষমতা বৃদ্ধির আগে থেকেই অবশ্য চিনের বিভিন্ন শহরে জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে জোরালো হচ্ছিল বিরুদ্ধ স্বর। শনিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র সাধারণ সম্পাদক পদে টানা তৃতীয় বার আসীন হয়েছেন। মার্চে প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর নাম ঘোষিত হবে। মাও জে দঙের পর প্রথম নেতা হিসাবে দল এবং সরকারের শীর্ষপদে উঠে এলেও জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্তিমিত হয়নি।
সিপিসি-র বিংশ সম্মেলনের আগে থেকেই অবশ্য চিনের জিনপিং-বিরোধী স্বর শোনা গিয়েছে। উত্তর-পশ্চিম বেজিংয়ের হাইদিয়ান জেলায় সিটং ব্রিজে দু’টি পোস্টার ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। মূলত চিনা সরকারের কোভিড-নীতি নিয়ে কড়াকড়ির বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করা হয়েছিল। সমাজমাধ্যমে তা হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে। ওই পোস্টারগুলির একটিতে লেখা ছিল, ‘‘আমরা খাবার চাই, পিসিআর টেস্ট নয়। আমরা স্বাধীনতা চাই, লকডাউন ও নিয়ন্ত্রণ নয়। আমরা মর্যাদা চাই, মিথ্যা নয়!’’ অন্য পোস্টারে চিনা প্রেসিডেন্টকে ‘একনায়কে’র তকমা দেওয়া হয়েছিল। কে বা কারা ওই পোস্টার দু’টি সাঁটিয়েছিলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। যদিও ওই কাণ্ডে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে দাবি সংবাদমাধ্যমের। সরকারি ভাবে অবশ্য পোস্টার বা গ্রেফতারি— কোনও বিষয়েই মুখ খোলেনি চিনা প্রশাসন। তবে সিটং ব্রিজের পোস্টারগুলি ছড়িয়ে পড়েছিল সমাজমাধ্যমে। তার পর থেকেই তা ‘ব্রিজম্যানে’র কীর্তি বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। যদিও তাঁর নাম-পরিচয় সম্পর্কে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত সপ্তাহে ওই সেতুর পোস্টার-কাণ্ডের পর শেনঝেন, সাংহাই, বেজিং এবং গুয়ানঝৌ-সহ চিনের অন্তত ৮টি শহরে প্রায় একই ধাঁচের স্লোগান দেওয়া পোস্টার পড়েছে। তা ছড়িয়ে পড়েছে হংকং, আমেরিকার, ব্রিট্রেনের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। মূলত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শৌচালয়ে যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, সেখানেই এ ধরনের পোস্টার পড়ছে।
সমাজমাধ্যমে বেজিং সংক্রান্ত আলোচনা বা বেজিং শব্দটিই সাময়িক ভাবে চিনা নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি, সিটং ব্রিজের প্রতিবাদও মুছে সাফ করা হচ্ছে বলে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের দাবি। তবে কয়েক জন সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারী একটি প্রাচীন চিনা প্রবাদকে শেয়ার করেছেন। তাতে লেখা, ‘‘একটি ছোট্ট স্ফুলিঙ্গও তৃণভূমিতে আগুন ধরাতে পারে।’’ সংবাদমাধ্যমের দাবি, জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে পড়ুয়াদের প্রতিবাদের ঢেউ দেখে মনে হচ্ছে ‘ব্রিজম্যান’ যেন সে কাজটাই করেছেন!