ক্যালেন্ডার-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার আট দিনের মাথায় মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নতুন বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডার-কাণ্ড নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। গত শুক্রবার সেই খবর প্রথম প্রকাশ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তার আট দিনের মাথায় শুক্রবার তা নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছিল, যে ক্যালেন্ডার নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তা বিতরণ করা হয়েছিল অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর থেকেই।
সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে শুক্রবার বিকাল নাগাদ দিল্লি রওনা দেন অভিষেক। তার আগে বিমানবন্দরে ক্যালেন্ডার-কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। কী হয়েছে? দু’টি ক্যালেন্ডারেই দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-র ছবি ছিল। আমি শুনেছি কিছু সংবাদমাধ্যম একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ (অ্যাঙ্গল) থেকে খবরটা পরিবেশন করেছে। সেটা ঠিক নয় বলেই আমি মনে করি।’’ তার পরেই অভিষেক বলেন, ‘‘একটি ক্যালেন্ডার বিশেষ ভাবে ডায়মন্ড হারবারে দেওয়া হয়েছিল। অন্য একটি ক্যালেন্ডার দলের মাধ্যমে পৌঁছেছিল। পরে জানতে পারি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিটি পছন্দ নয়। তাই তিনি ক্যালেন্ডারটি ব্যবহার করতে বারণ করেছেন। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।’’
প্রসঙ্গত, তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছিল, অভিষেকের দফতর থেকে ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার পাঠানো হয়েছিল দলের জেলা সভাপতিদের। সেই ক্যালেন্ডারে মমতা এবং অভিষেক দু’জনেরই ছবি ছিল। কিন্তু অভিষেকের ছবিটি ছিল তুলনায় মমতার থেকে মাপে বড়। জেলায় জেলায় ক্যালেন্ডার পৌঁছনোর পরে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বড়-ছোট ছবির খবর যায়। পত্রপাঠ পদক্ষেপ করা হয়। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে তৃণমূলের জেলা সভাপতিদের কাছে বার্তা যায়, ওই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা যাবে না। তৃণমূলের একাধিক জেলা সভাপতি আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে ‘অভিন্ন বার্তা’ এসেছিল রাজ্য নেতৃত্বের তরফে। বার্তার মোদ্দা কথা ছিল, ‘দিদি’ এই ছবি ব্যবহার করেন না। তাই ওই ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা যাবে না। শাসকদল সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছিল যে, তার পরে পৃথক একটি ক্যালেন্ডার বিতরণ করা হয়েছিল। তাতে অবশ্য মমতার তুলনায় অভিষেকের ছবি ছিল মাপে ছোট। সেই সময় স্পষ্ট ছিল না, পরিবর্তিত নকশায় রাজ্য নেতৃত্বের সিলমোহর রয়েছে কি না। যদিও শুক্রবার অভিষেক দাবি করেছেন, একটি ক্যালেন্ডার দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের জন্য। অন্যটি পার্টির মাধ্যমে সর্বত্র। অভিষেক মেনে নিয়েছেন যে, মমতার তরফেই ওই ক্যালেন্ডার ব্যবহারে দলীয় স্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ক্যালেন্ডার-কাণ্ডকে শাসকদলের অনেকেই সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বর্তমান সমীকরণের প্রেক্ষাপটে দেখেছিলেন। যা দলের মধ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। যদিও অভিষেক বলেছেন, কিছু সংবাদমাধ্যম যে দৃষ্টিকোণ থেকে খবরটি পরিবেশন করেছিল, তা ঠিক বলে তিনি মনে করেন না। কিন্তু একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘মমতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর মধ্যে কোনও বিরোধ নেই।’’