(বাঁ দিকে) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। জগদীপ ধনখড়। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ধনখড়। ‘উষ্ণ’ শুভেচ্ছার জন্য পাল্টা ধন্যবাদও জানিয়েছেন কল্যাণ। নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এ কথা জানিয়েছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ নিজেই। কল্যাণ জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল ধনখড়। নিজের বাড়িতে নৈশভোজের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। নতুন সংসদ ভবনের বাইরে এই ধনখড়কেই ‘নকল’ করেছিলেন কল্যাণ। ধনখড় জানিয়েছিলেন, এ সব মেনে নেওয়া যায় না। কল্যাণ পাল্টা জানিয়েছিলেন, এটা আসলে শিল্পেরই ধরন। কাউকে আঘাত করতে চাননি।
শুধু সাংসদ নন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন ধনখড়। এ প্রসঙ্গে কল্যাণ এক্সে লিখেছেন, ‘‘আমার জন্মদিনে যে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়েছে উপরাষ্ট্রপতি, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। আমি আপ্লুত যে, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার পুরো পরিবারকে তাঁর আশীর্বাদ জানিয়েছেন।’’ তাঁকে ধনখড় যে সস্ত্রীক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সে কথাও জানিয়েছেন কল্যাণ। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার স্ত্রী এবং আমাকে তিনি দিল্লিতে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের সঙ্গে নৈশভোজের জন্য।’’
শীতকালীন অধিবেশনে সংসদের দুই কক্ষে একের পর এক সাংসদ সাসপেন্ড হয়েছিলেন। সেই সময় নতুন সংসদ ভবনের মকরদ্বারের সামনে জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূল, কংগ্রেস, ডিএমকে, আরজেডি-সহ বিরোধী দলগুলির সাংসদেরা। সেখানে কল্যাণ বিভিন্ন ভঙ্গি, শারীরিক ভাষায় কিছু দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের ‘নকল’ করছিলেন তিনি। কল্যাণের সেই ভঙ্গি দেখে হাসিতে লুটিয়ে পড়েন বিরোধী সাংসদেরা। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে সেই ঘটনার ভিডিয়ো করতে দেখা গিয়েছিল। সেই সময় সংসদের ভিতরে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক চলছিল। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিষয়টি কানে গিয়েছিল ধনখড়ের। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‘গোটাটাই হাস্যকর। এ জিনিস মেনে নেওয়া যায় না।’’ এই নিয়ে আসরে নামে বিজেপি। বিজেপি নেতা সুনীল দেওধর সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, এই হল ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আসল রূপ। ধনখড় জানিয়েছিলেন, কল্যাণের ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেন মোদী। এক্স হ্যান্ডলে ধনখড় লিখেছিলেন, ‘‘তিনি (মোদী) আমাকে বলেছেন, তিনি ২০ বছর ধরে এই ধরনের অপমান সয়েছেন।’’ এই নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি এক্সে লিখেছিলেন, ‘‘সংসদ চত্বরে আমাদের শ্রদ্ধেয় উপরাষ্ট্রপতিকে যে ভাবে অপমান করা হয়েছে, তা দেখে আমি হতাশ হয়েছি।’’
কল্যাণ এই অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি জানিয়েছিলেন, নকলনবিশি করা তো শিল্পের একটা ধরন। রাজনৈতিক প্রতিবাদের অনেক রকম ভাষা থাকে। প্রধানমন্ত্রীও সংসদের মধ্যে অতীতে মিমিক্রি করেছেন। তার জন্য কি তিনিও ক্ষমা চাইবেন? তিনি আরও জানিয়েছিলেন, কারও ভাবাবেগে আঘাত করার কোনও অভিপ্রায় ছিল না তাঁর। ধনখড় তাঁর সিনিয়র। তিনিও কল্যাণের মতোই আইনজীবী ছিলেন। কল্যাণের কথায়, ‘‘আমাদের পেশায় আমরা কারও ভাবাবেগে আঘাত করি না। আমি ওঁকে শ্রদ্ধা করি।’’
এ বার সেই সব ‘টানাপড়েন’কে পিছনে ফেলেই কল্যাণকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ধনখড়ের। তবে এই ধরনের কাজ এই প্রথম নয়। এর আগেও যাঁর বিরুদ্ধে একহাত নিয়েছেন, আবার তাঁকেই এগিয়ে গিয়ে সৌজন্য দেখিয়েছিলেন ধনখড়। এ রাজ্যে রাজ্যপাল থাকার সময় রাজ্য সরকারের সঙ্গে বার বার সংঘাতে জড়িয়েছিলেন তিনি। রেড রোডের কার্নিভাল থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের অবমাননা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কটাক্ষ করেছিলেন। তার পর ২০১৯ সালে সেই মুখ্যমন্ত্রীকেই চিঠি দিয়ে ভাইফোঁটায় তাঁর বাড়িতে সস্ত্রীক যেতে চেয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য কালীপুজোর দিন বিকেলে সস্ত্রীক রাজ্যপালকে তাঁর বাড়িতে আসার আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রাজভবনে। আমন্ত্রণ রক্ষা করে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েও ছিলেন ধনখড়। এ বার কল্যাণকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন তিনি।