গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়কে নকল করে শাসকদলের সমালোচনার মুখে পড়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ওই আচরণে ‘ব্যথিত’ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ধনখড় ফোনে ওই ঘটনার ব্যাপারে কথা বলেছেন। ধনখড় জানান, কল্যাণের ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেছেন মোদী।
বস্তুত, মঙ্গলবার সংসদ ভবনের মকরদ্বারের সামনে বিরোধী সাংসদদের অবস্থানে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ যে ভঙ্গিতে কথা বলেছেন, শরীরী ভাষার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, তা দেখে সমালোচনায় মুখর হয় বিজেপি। কল্যাণ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের কথা বলার ধরন, শরীরী ভাষা নকল করেন। আর সেটা দেখে হেসে লুটোপুটি খেতে থাকেন বিভিন্ন বিরোধী দলের সাংসদেরা। দেখা যায় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীও পকেট থেকে মোবাইল ফোন বার করে কল্যাণের ভিডিয়ো তুলছেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেও ভাল ভাবে নেননি ধনখড় নিজে। তিনি একে ব্যক্তিগত আক্রমণ বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর এ ব্যাপারে কথা হয়েছে জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন ধনখড়। এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘‘তিনি (মোদী) আমাকে বলেছেন, তিনি ২০ বছর ধরে এই ধরনের অপমান সয়েছেন।’’
অন্য দিকে, ধনখড়কে কল্যাণের নকল করার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদীও। তিনিও এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘সংসদ চত্বরে আমাদের শ্রদ্ধেয় উপরাষ্ট্রপতিকে যে ভাবে অপমান করা হয়েছে, তা দেখে আমি হতাশ হয়েছি।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই নিজেদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। তবে তাঁদের অভিব্যক্তি মর্যাদা এবং সৌজন্যের নিয়মের মধ্যে হওয়া উচিত। যে সংসদীয় ঐতিহ্যের জন্য আমরা গর্বিত এবং যা ভারতের জনগণ আশা করে, সেটি বজায় থাকা উচিত।’’
প্রসঙ্গত, কল্যাণ যখন উপরাষ্ট্রপতিকে নকল করছেন, বিরোধী সাংসদরা তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করছেন, তখন সংসদে বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠক চলছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্য দিকে, ধনখড়কে কল্যাণের নকল করার সময় সিঁড়ির ধাপে বসেছিলেন বিরোধী দলগুলির সাংসদেরা। তাতে ডিএমকে, আরজেডি, সিপিএম, তৃণমূল— ‘ইন্ডিয়া’ভুক্ত সব দলের সাংসদই ছিলেন। ছিলেন রাহুল গান্ধীও। তিনি ফোনে কল্যাণের অঙ্গভঙ্গি রেকর্ড করেন। বিরোধী সাংসদদের সাসপেন্ডের ঘটনায় ধনখড়ের নাম করে নানাবিধ স্লোগান চলছিল ওই জমায়েতে।
কল্যাণের এ হেন আচরণ ধনখড় প্রথমে বলেছিলেন, ‘‘গোটাটাই হাস্যকর। এ জিনিস মেনে নেওয়া যায় না।’’ তার মধ্যে কল্যাণের ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয় আলোচনা এবং সমালোচনা। বুধবার ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে কল্যাণকাণ্ডে ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই দুঃখের যে এক জন সাংসদ ভিডিয়ো করার মাধ্যমে ওই অসম্মানজনক কাজটিকে (কল্যানের নকল করার দৃশ্য) প্রসারিত করছেন। এটা খারাপ এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী কেউ এই ঘটনার প্রশংসা করবেন না।’’