অয়নের রহস্যমৃত্যুতে গ্রেফতার তাঁর বান্ধবী-সহ সাত জন। ফাইল চিত্র।
ক্রমেই খুলে যাচ্ছে রহস্যের জট। একাদশীর দিন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিট। হরিদেবপুরে নিহত যুবক অয়ন মণ্ডলের মাকে ফোন করেন তাঁর বান্ধবী। ‘ভিকি (অয়নের ডাকনাম) কোথায়? ওকে ফোনে পাচ্ছি না’— অয়নের মাকে অস্থির হয়ে এ কথাই জিজ্ঞাসা করছিলেন বান্ধবী। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই অয়নের বাড়িতে গিয়ে রীতিমতো ‘কুম্ভীরাশ্রু’ বর্ষণ করেন অয়ন-বান্ধবী! এমন দাবিই করেছেন অয়নের মা মঞ্জু মণ্ডল। দশমীর রাতে অয়নকে মারধর করে তাঁর দেহ মগরাহাটে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনা জানার পরও ‘কিছু না জানার ভান’ করে একাদশীতে অয়নের বাড়িতে গিয়ে যে আচরণ করেছেন অয়নের বান্ধবী, তা দেখে বিস্মিত মঞ্জুদেবীরা।
অয়নের পরিণতির কথা প্রকাশ্যে আসার পর একাদশীর দিন অয়নের বান্ধবীর তাঁদের বাড়িতে আসার ‘আসল উদ্দেশ্য’ এখন স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে অয়নের পরিবারের সদস্যদের কাছে। অয়নের সঙ্গে তাঁর বান্ধবীর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। তা সত্ত্বেও অয়নকে কেন খুন করা হল? এই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। সেই সঙ্গে অয়ন-হত্যার পরও যে ভাবে তাঁর বাড়িতে গিয়ে ‘ভিকি কোথায়’ বলে চোখেমুখে উদ্বেগের রেখা টেনে উপস্থিত হন বান্ধবী, তা জেনে বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকেই।
অয়নের মায়ের কথায়, ‘‘ফোন করে ও (বান্ধবী) বলে, ভিকি কোথায়? ওর ফোন স্যুইচড অফ। ফোনে পাচ্ছি না। এর পর ১২টা নাগাদ আমাদের বাড়িতে আসে ও। এসে বলে যে কোথাও ভিকির (অয়নের ডাকনাম) খোঁজ পাচ্ছে না। আমি বলি, হয়তো বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছে।’’
মঞ্জুদেবী আরও বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকেই ওকে অস্থির দেখাচ্ছিল। বসে ক্রমাগত পা নাচাতে থাকে। খারাপ কিছু করে মানুষের মনের অবস্থা যে রকম হয়, ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছিল ওকে। আমরা কেউই বুঝতে পারিনি কী হয়েছে।’’ মঞ্জুদেবী আরও বলেন, ‘‘দুপুর ১টার সময় যখন ছেলের খোঁজ পেলাম না, তখন আমিও অস্থির হয়ে পড়ি। কোথায় গেল আমার ছেলে! সে সময় ও (বান্ধবী) বলে যে, পুলিশ মনে হয় ধরে নিয়ে গিয়েছে। তোমরা থানায় খবর নাও। আমি বলি, কেন ও কী করেছে? পুলিশ কেন?’’
শকুন্তলা মৈত্র নামে অয়নের এক প্রতিবেশীও বলেন, ‘‘ও বসে ক্রমাগত পা নাচাচ্ছিল। ওকে জিজ্ঞাসা করি কিছু কী হয়েছে? কিন্তু কিছুই বলেনি।’’ দশমীর রাতে তাদের বাড়িতে যে গিয়েছিলেন অয়ন এবং সেখানে তাঁকে তাঁর মা যে মারধর করেছেন, সে কথা অয়নের মাকে বলেন বান্ধবী। এ কথা জানার পরই অয়নের মা বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে চান যে, তাঁদের মধ্যে কি কোনও ঝামেলা হয়েছে? মঞ্জুদেবীর কথায়, ‘‘ও বলে যে, আমি যদি কিছু করতাম, তা হলে কি এখানে আসতাম!’’ মঞ্জু প্রশ্ন করেন, ‘‘আমার ছেলে কি নেশা করেছিল?’’ ও বলল, ‘না, ও ঠিক ছিল।’’’
প্রায় ঘণ্টা দুয়েক অয়নের বাড়িতে ছিলেন তার বান্ধবী। পরে শুক্রবার মগরাহাটে অয়নের দেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রাতেই গ্রেফতার করা হয় অয়নের বান্ধবী, তাঁর মা, ভাইকে। শনিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় বান্ধবীর বাবা, ভাইয়ের দুই বন্ধু ও এক গাড়িচালককে। গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর অয়নের পরিবার মনে করছে, তাঁদের ছেলেকে খুন করেছেন বান্ধবীর পরিবারের সদস্যরা। গোটা ঘটনা জানার পরও কী ভাবে ‘না জানার ভান’ করে অয়নের খোঁজে ব্যাকুল হয়ে তাঁদের বাড়িতে গেলেন, এ কথাই এখন ভাবাচ্ছে অয়নের মা ও স্বজনদের। অয়নের ওই প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘পরিকল্পনা করেই ও এসেছিল। তা হলে কি সবটাই তার অভিনয়!’’