চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন অয়নের মা। নিজস্ব চিত্র।
হরিদেবপুরের যুবক অয়ন মণ্ডলের রহস্যমৃত্যুতে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আনলেন তাঁর মা মঞ্জু মণ্ডল। মঞ্জুর দাবি, অয়নের বান্ধবী অন্তঃসত্ত্বা, সে কথা নিজে মুখে তাঁকে জানিয়েওছিলেন! একাদশীর দিন এ কথা অয়নের মাকে জানিয়েছিলেন তাঁর বান্ধবী। শনিবার এমনটাই দাবি করলেন সন্তানশোকে পাথর মঞ্জুদেবী।
দশমীর রাত থেকে নিখোঁজ হয়ে যান অয়ন। মঞ্জুর দাবি, পরের দিন, অর্থাৎ একাদশীর দিন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫০ নাগাদ প্রথমে অয়নের মাকে ফোন করেন বান্ধবী। ফোন করে বান্ধবী বলেন যে, অয়নের ফোন স্যুইচড অফ। ফোনে পাচ্ছেন না। কোথায় আছে অয়ন, সে ব্যাপারে মঞ্জুদেবীর কাছে জানতে চান। অয়নের মা বলেছেন, ‘‘ফোনের পর একাদশীর দিন ১২টা নাগাদ আমাদের বাড়িতে আসে ও। এসে বলে যে কোথাও ভিকির (অয়নের ডাকনাম) খোঁজ পাচ্ছে না। আমি বলি, হয়তো বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছে।’’
কিন্তু ঘড়ির কাঁটা যত ঘুরতে থাকে, ততই অস্থিরতা শুরু হয় অয়নের বান্ধবীর। অয়নের মায়ের কথায়, ‘‘আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকেই ওকে অস্থির দেখায়। বসে ক্রমাগত পা নাচাতে থাকে। খারাপ কিছু করে মানুষের মনের অবস্থা যে রকম হয়, ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছিল ওকে। আমরা কেউই বুঝতে পারিনি কী হয়েছে।’’ মঞ্জুদেবী আরও বলেন, ‘‘দুপুর ১টার সময় যখন ছেলের খোঁজ পেলাম না, তখন আমিও অস্থির হয়ে পড়ি। কোথায় গেল আমার ছেলে! সে সময় ও (বান্ধবী) বলে যে, পুলিশ মনে হয় ধরে নিয়ে গিয়েছে। তোমরা থানায় খবর নাও। আমি বলি, কেন ও কী করেছে? পুলিশ কেন?’’
অয়নের মায়ের এ কথা শুনে খানিকটা ভাঙেন তাঁর বান্ধবী। দশমীর রাতে যে অয়ন তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে গোলমাল হয়, সে কথা জানান ওই বান্ধবী। এ-ও বলে যে, অয়নকে মেরেছেন তাঁর মা। এ কথা জানার পরই অয়নের মা বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে চান যে, তাঁদের মধ্যে কি কোনও ঝামেলা হয়েছে? মঞ্জুদেবীর কথায়, ‘‘ও বলে যে, আমি যদি কিছু করতাম, তা হলে কি এখানে আসতাম!’’ মঞ্জু প্রশ্ন করেন, ‘‘আমার ছেলেকে কি নেশা করেছিল?’’ ও বলল, ‘না, ও ঠিক ছিল।’’
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে অয়নের মাকে ফোন করেন তাঁর বান্ধবী। নিজস্ব চিত্র।
যত সময় গড়াতে থাকে, ছেলের জন্য অস্থিরতা বাড়তে থাকে অয়নের মায়ের। এই অবস্থায় মঞ্জুদেবীকে দেখে আচমকা তাঁর হাত ধরে বান্ধবী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার কথা জানান বলে দাবি করেছেন অয়নের মা। তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ আমার হাত ধরে ও বলে, এই অবস্থায় কী করব আমি! আমি প্রেগন্যান্ট। তোমাকেই প্রথম বললাম।’’ আমি বললাম, সে কারণেই কি তোমাদের মধ্যে রাগারাগি হয়েছে? এ জন্যই কি ও সামনে আসছে না? আমি বললাম, এখন কাউকে বোলো না। আগে আমার ছেলে ফিরুক, কথা বলে তার পর কোনও একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ একাদশীর দিন প্রায় ঘণ্টা দুয়েক অয়নের বাড়িতে তাঁর বান্ধবী ছিলেন বলে দাবি করেছেন মঞ্জুদেবী। মাঝেমধ্যেই মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন বান্ধবী, এমন দাবিও করেছেন তিনি।
অয়নের মায়ের প্রশ্ন, ‘‘ও তো হস্টেলে থাকে। তা হলে কী করে অন্তঃসত্ত্বা হল?’’ অয়নের বান্ধবী সত্যিই অন্তঃসত্ত্বা কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক আধিকারিক। দশমীর রাতে গোলমালের আগে অষ্টমীর দিন, সোমবার অয়নের বাড়িতে তাঁর বান্ধবী এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন মঞ্জুদেবী। তিনি বলেন, ‘‘অষ্টমীতে ও আমাদের বাড়িতে এল। তার পর সেজেগুজে দু’জনে মিলে ঘুরতে বেরোল। আনন্দ করল। তখন এ সব কথা তো জানাল না।’’
অয়নের এক প্রতিবেশী শকুন্তলা মৈত্র বলেন, ‘‘ভিকিকে পছন্দ করতেন না ওর বান্ধবীর বাবা। আগেও এক বার ওকে বাঁশ দিয়ে মেরেছিলেন।’’
শুক্রবার মগরাহাট থেকে অয়নের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অয়নের বান্ধবী, তার মা, ভাই, বাবা, বান্ধবীর ভাইয়ের দুই বন্ধু ও এক গাড়িচালক-সহ সাত জনকে। কী কারণে অয়নকে খুন করা হল, এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। তার মধ্যেই অয়নের মায়ের এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সত্যিই অয়নের বান্ধবী অন্তঃসত্ত্বা, না কি এমনিই হঠাৎ বলে ফেলেছিলেন সে, না কি অয়নের পরিবারের উপর চাপ তৈরি করতে এ কথা বলেছেন, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।