অবস্থানরত কৃষকেরা। — ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের তরফে মৌখিক আশ্বাস পেয়ে ৫৫ দিন পর ‘আমরণ অনশন’ ভাঙলেন কৃষক নেতা জগজিৎ সিংহ ডাল্লেওয়াল। সঙ্গে অনশন ভেঙেছেন আরও ১২১ জন কৃষক। কেন্দ্র আগামী মাসে কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলতে চাওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আন্দোলনরত কৃষকেরা। তবে অনশন উঠলেও আন্দোলন এখনই থামছে না।
শনিবার খানাউড়ি সীমানায় ভারতের বন পরিষেবা আধিকারিক তথা কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দফতরের যুগ্মসচিব প্রিয় রঞ্জনের নেতৃত্বে কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দল অবস্থানরত কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। সীমানার পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর অনশনরত কৃষকনেতা ডাল্লেওয়ালের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা। এর পরেই কেন্দ্রের তরফে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কৃষক নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরেই অনশন ভেঙেছেন ডাল্লেওয়াল। চিকিৎসা পরিষেবা নিতেও রাজি হয়েছেন। ডাল্লেওয়ালের পাশাপাশি অনশন ভেঙেছেন আরও ১২১ জন কৃষক। ডিআইজি মনদীপ সিংহ সিধু এবং পটীয়ালার এসএসপি নানক সিংহের উপস্থিতিতে ফলের রস খেয়ে অনশনে ইতি টেনেছেন কৃষকেরা।
তবে অনশন শেষ হলেও আন্দোলন এখানেই শেষ নয়। কৃষকেরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র আইনি স্বীকৃতি না মেলা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু স্পষ্ট করে জানাননি কৃষক নেতারা। বৈঠকে কৃষকদের প্রতিনিধি হিসাবে কারা যাবেন, সে সব নিয়েও কিছু জানানো হয়নি। শনিবার এ নিয়ে দু’ঘণ্টার বৈঠকও করেছিলেন কৃষকেরা। বৈঠকের পর কৃষক নেতা কাকা সিংহ কোটালা জানিয়ে দেন, প্রস্তাবটি নিয়ে সংযুক্ত কিসান মোর্চা (অরাজনৈতিক) এবং কিসান মজদুর মোর্চার মধ্যে আলোচনা চলছে। আলোচনার পর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
ফসলের এমএসপি, কৃষিঋণ মকুব, পেনশনের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতের বিল না-বাড়ানোর মতো বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কৃষকদের আন্দোলন চলছে। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দিল্লি সংলগ্ন পঞ্জাব এবং হরিয়ানার শম্ভু এবং খানাউড়ি সীমানায় অবস্থানে বসেছেন কৃষকেরা। নভেম্বরের শেষ থেকেই কৃষকেরা শম্ভু সীমানা থেকে দফায় দফায় দিল্লির উদ্দেশে মিছিল করে এগোনোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে পুলিশ-প্রশাসনের বাধায় বার বারই কৃষকদের সেই ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পঞ্জাবে ‘রেল রোকো’ কর্মসূচিও পালন করেছেন কৃষকেরা। মাঝে শম্ভু সীমান্তে আত্মহত্যা করেছেন দুই কৃষকনেতা। তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। এর পর দাবি আদায়ে খানাউড়ি সীমান্তে গত ২৬ নভেম্বর আমরণ অনশন শুরু করেন কৃষক নেতা ডাল্লেওয়াল। ক্রমে তাঁর শারীরিক অবস্থাও সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। সেই আবহেই কৃষকদের প্রতি সুর নরম করেছে কেন্দ্র। তাই কেন্দ্রের আশ্বাস পেয়ে ৫৪ দিন পর অনশন ভাঙলেন কৃষকেরা।