স্মিত হাসলেন উইলিয়ামসন। —ফাইল চিত্র
২০১৯ সালে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনাল। ২০২১ সালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী। ২০২১ সালেই টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড। তিন ধরনের ক্রিকেটের ফাইনালেই তারা। আইসিসি-র পর পর তিনটি প্রতিযোগিতায় নিউজিল্যান্ডের এই সাফল্যের পর এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা দল বলে নিজেদের দাবি করতেই পারেন কেন উইলিয়ামসনরা।
কেন উইলিয়ামসন। এই মুহূর্তে ‘জেন্টেলম্যান্স গেমের’ সেরা বিজ্ঞাপন তিনিই। ঠাণ্ডা মাথায় দলকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন একের পর এক প্রতিযোগিতায়। আইসিসি-র প্রতিযোগিতায় চোকার্স তকমা পাওয়া নিউজিল্যান্ডকে পাল্টে দিয়েছেন তিনিই।
২০১৯ সালে এক দিনের বিশ্বকাপের ফাইনালে উইলিয়ামসনরা হেরে ছিলেন কম বাউন্ডারি মারার জন্য। আইসিসি-র এমন ‘অদ্ভুত’ নিয়মের বিরোধিতা করে সোচ্চার হয়েছিলেন সকলে। দুঃখ পেয়েছিলেন উইলিয়ামসনদের হারে। স্মিত হেসে উইলিয়ামসন সে দিন বলেছিলেন, “ছেলেরা ভেঙে পড়েছে। গোটা প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত খেলেছে ওরা। এক রানের ব্যাপার নয়। নিউজিল্যান্ড দলকে ধন্যবাদ এই ভাবে গোটা প্রতিযোগিতায় খেলার জন্য।” বিশ্বকাপ হেরে যাওয়া অধিনায়কের গলায় ভেঙে পড়া নয়, আত্মবিশ্বাসের সুর শুনেছিল গোটা বিশ্ব।
এই মুহূর্তে ‘জেন্টেলম্যান্স গেমের’ সেরা বিজ্ঞাপন উইলিয়ামসনই। —ফাইল চিত্র
কেন এত আত্মবিশ্বাসী উইলিয়ামসন? কারণ তিনি জানেন তাঁর দলের ক্ষমতা। তিনি বিশ্বাস করেন এই দল বিশ্বজয়ের ক্ষমতা রাখে। সেটাই করে দেখালেন এই বছরের জুনে। প্রবল (অতিরিক্ত) আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় দলকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিলেন সাদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়ামে। সেই ম্যাচে গতির আগুন ঝরিয়েছিলেন কাইল জেমিসনরা। প্রথম টেস্ট বিশ্বকাপ জিতে উইলিয়ামসনের মুখে সেই স্মিত হাসি। নিজেরা জিতে জয়গান করেছিলেন কোহলীদের। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বিপক্ষকে সম্মান না করলে বড় হওয়া যায় না। নিজের দল সম্পর্কে উইলিয়ামসন বলেন, “প্রত্যেকে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে।”
কুলীন (টেস্ট) ক্রিকেটে নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করে খেলতে নামলেন টি২০ বিশ্বকাপে। পাকিস্তানের কাছে গ্রুপ পর্বে হারলেও ভারতের বিরুদ্ধে ভেঙে পড়েননি উইলিয়ামসরা। ৮ উইকেটে জিতে নেন সেই ম্যাচ। শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকেও দাপটের সঙ্গে হারিয়ে জায়গা করে নেন সেমিফাইনালে। সেখানে খেলা ছিল সেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে। জীবনচক্রে ফের দেখা অইন মর্গ্যানদের সঙ্গে। হোক না টি২০ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ তো। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে উড়িয়ে দু’বছর আগের বদলা নিলেন উইলিয়ামসন। মুখে সেই স্মিত হাসি। প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে কিউয়ি অধিনায়ক বলেন, “ওদের বিরুদ্ধে অনেক বার খেলেছি। জানতাম দুর্দান্ত ম্যাচ হবে। গোটা ম্যাচ জুড়ে হৃদয় দিয়ে খেলল সকলে। দুর্দান্ত খেলল ড্যারিল মিচেল। এরকম ম্যাচে ওপেন করতে নেমে খেলা বেশ কঠিন। নিজের চরিত্র বুঝিয়ে দিল ও। টি২০ ক্রিকেট এমন খেলা যেখানে ছোট ভুল ম্যাচের ফল ঘুরিয়ে দিতে পারে। হাতে উইকেট ছিল, সেটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। জিমি নিশাম এসেই মারতে শুরু করল এবং খেলার রং পাল্টে দিল। সেটাই ম্যাচ জেতার মূল কারণ।”
কেন এত আত্মবিশ্বাসী উইলিয়ামসন? কারণ তিনি জানেন তাঁর দলের ক্ষমতা। —ফাইল চিত্র
তিনি জিতলেন। সেই সঙ্গে জিতল হাজার ক্রিকেট ভক্ত। সেই সব ভক্ত যারা দেশের গণ্ডি দিয়ে ক্রিকেটকে ভালবাসে না। উইলিয়ামসনের জয় আসলে সেই সব ক্রিকেট ভক্তের জয়, ক্রিকেটের জয়।