Chinese PLA on LAC

চিনের মুখোশে হ্যাঁচকা টান! এলএসি-তে দাঁড়িয়ে ১.২ লক্ষ লালফৌজ, দিল্লিকে সতর্ক করল আমেরিকা

‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা’ বা এলএসি-তে মোটেই সৈন্য সংখ্যা কম করেনি বেজিং। এখনও সেখানে মোতায়েন রয়েছে পিএলএ-র প্রায় দেড় লাখ ফৌজি। আমেরিকার জারি করা এই রিপোর্ট ঘিরে তুঙ্গে উঠেছে তরজা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:০৭
Share:
০১ ১৯

ফের চিনের ‘শয়তানি’র পর্দাফাঁস করল আমেরিকা। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দফতর ‘পেন্টাগনে’র জারি করা রিপোর্টে রক্তচাপ বেড়েছে ভারতের। ওয়াশিংটনের দাবি সত্যি হলে লাদাখ থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা’ বা এলএসি-তে ফের ড্রাগনের আগ্রাসনের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ১৯

চলতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর ‘মিলিটারি অ্যান্ড সিকিউরিটি ডেভেলপমেন্টস ইনভলভিং দ্য পিপল্‌স রিপাবলিক অফ চায়না’ শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করে পেন্টাগন। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের গলওয়ান সংঘর্ষের পর এলএসি-তে সৈন্য সমাহার মোটেই হ্রাস করেনি বেজিং। লাদাখ থেকে অরুণাচল পর্যন্ত ৩,৪৮৮ কিলোমিটার বিস্তৃত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় পিপল্‌স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি ফৌজি মোতায়েন রয়েছে।

Advertisement
০৩ ১৯

শুধু তা-ই নয়, এলএসি-তে চিনের লালসেনা কী কী হাতিয়ার জমা করেছে, তারও বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে পেন্টাগনের রিপোর্টে। আমেরিকার দাবি, ওই এলাকায় মোতায়েন থাকা পিএলএ অফিসার ও জওয়ানদের কাছে রয়েছে ট্যাঙ্ক, হাউইৎজ়ার কামান, ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য উন্নত সামরিক সরঞ্জাম।

০৪ ১৯

পেন্টাগনের রিপোর্টের সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল, পিএলএ-র অন্তত ২০টি সম্মিলিত অস্ত্র ব্রিগেডের (কমবাইন্ড আর্মস ব্রিগেড বা সিএবি) উপস্থিতির উল্লেখ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার পূর্ব, পশ্চিম এবং মধ্যবর্তী একাধিক কৌশলগত এলাকায় যুদ্ধের জন্য তাঁদের মজুত রেখেছে ড্রাগন। সংঘর্ষ বাধলে লাদাখ বা অরুণাচলের জমি কব্জা করার ক্ষেত্রে ওই ব্রিগেডকে তুরুপের তাস হিসাবে ব্যবহার করতে পারে বেজিং।

০৫ ১৯

ভারতের সঙ্গে থাকা লম্বা এলএসি-র তদারক করে চিনা লালফৌজের পশ্চিমি (ওয়েস্টার্ন) থিয়েটার কমান্ড। পেন্টাগন জানিয়েছে, সেখানকার ফৌজি অফিসাররা সীমান্তের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বেশ কয়েক বার নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে যুদ্ধ বাধার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সীমান্তে সামরিক পরিকাঠামো নির্মাণ বাড়িয়ে দেয় ড্রাগন সেনা।

০৬ ১৯

তবে, পিএলএ-র সম্মিলিত অস্ত্র ব্রিগেডের কয়েকটি ইউনিট যে ইতিমধ্যেই এলএসি থেকে ছাউনিতে ফিরে গিয়েছে, তারও উল্লেখ রয়েছে ওয়াশিংটনের বার্ষিক প্রতিরক্ষা মূল্যায়ন রিপোর্টে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সূত্রে খবর, এখনও বিপুল সংখ্যায় লালফৌজ মোতায়েন রয়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায়। আর এ ভাবেই ভয় দেখিয়ে বা ক্ষমতা জাহির করে নিজের উঁচু অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া চিন।

০৭ ১৯

২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে প্রথম বার আগ্রাসী মনোভাব দেখায় বেজিং। আচমকাই পিএলএ-র আক্রমণে প্রাণ হারান ভারতীয় সেনার এক কর্নেল-সহ মোট ২০ জন সৈনিক। পাল্টা প্রত্যাঘাতে ৪০-৪৫ জন চিনা ফৌজির প্রাণহানির কথা জানায় আমেরিকা। যদিও তা কখনওই স্বীকার করেনি ড্রাগন।

০৮ ১৯

ওই ঘটনার পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বিপুল পরিমাণে বাহিনী মোতায়েন করে নয়াদিল্লি। এলএসি-তে পিএলএর চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে যায় ভারতীয় সেনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দু’তরফেই চলে ফৌজি অফিসার পর্যায়ে বৈঠক। শেষে এ বছরের নভেম্বরে প্রকাশ্যে আসে বরফ গলার খবর। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দেয়, ২০২০ সালে গলওয়ান সংঘর্ষের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে রাজি হয়েছে চিনা লালফৌজ।

০৯ ১৯

ঠিক তার এক মাসের মাথাতেই পেন্টাগনের এই রিপোর্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের শিরদাঁড়া দিয়ে যে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। যদিও কিসের ভিত্তিতে আমেরিকা এই সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। সরকারি ভাবে অবশ্য এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি নয়াদিল্লি।

১০ ১৯

এলএসি-তে সেনা মোতায়েন ছাড়াও পেন্টাগনের রিপোর্টে বেজিংয়ের পরমাণু শক্তিবৃদ্ধির উল্লেখ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এ বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পিএলএর কাছে আণবিক অপারেশনাল ওয়ারহেডের সংখ্যা ছিল ৬০০। ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি হাজার ছাড়াবে বলে মনে করছে আমেরিকার পদস্থ সেনা অফিসাররা।

১১ ১৯

পাশাপাশি পেন্টাগনের আরও দাবি, দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল বা আইসিবিএম) সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছে চিন। পরমাণু অস্ত্রের হামলা চালানোর ক্ষেত্রে বৈচিত্র রাখার দিকে নজর রয়েছে লালসেনার অফিসারদের। সেই মতো নতুন নতুন সামরিক প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছেন তাঁরা।

১২ ১৯

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, মোট আট থেকে ১০টি ক্ষেত্রে সেনার আধুনিকীকরণের নির্দেশ দিয়েছেন চিনের চেয়ারম্যান তথা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। স্থল-বায়ু-নৌসেনাকে অত্যাধুনিক অস্ত্রে সাজিয়ে তোলার পাশাপাশি পরমাণু হাতিয়ার, মহাশূন্যে সামরিক সক্ষমতা, ইলেকট্রনিক যুদ্ধকৌশল এবং সাইবার হামলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইছেন তিনি। শির এই সিদ্ধান্তে রাতের ঘুম উড়েছে পেন্টাগনের।

১৩ ১৯

সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক সময়ে মহাশূন্যে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশ স্টেশনের রক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হয়েছে চিন। সেই মতো উন্নত হাতিয়ার তৈরি করছে বেজিং। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া ডাইরেন্ট এনার্জি ওয়েপন বা লেজারের মতো অস্ত্র নির্মাণে রাতদিন এক করছেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

১৪ ১৯

আমেরিকার রিপোর্টে তাইওয়ানের উল্লেখ রয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিকে দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে আসছে চিন। পেন্টাগন জানিয়েছে, তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে ড্রাগনের নৌসেনা। দ্বীপটিকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ও বেজিংয়ের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পদস্থ সেনাকর্তারা।

১৫ ১৯

এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক রাশিয়ার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। গত দু’বছরে মস্কোকে একাধিক সামরিক সরঞ্জাম লাগাতার সরবরাহ করে গিয়েছে বেজিং। পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধে সেগুলি যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

১৬ ১৯

রিপোর্টের একেবারে শেষ অংশে চিনা লালফৌজের দুর্নীতির কথা বলেছে পেন্টাগন। পিএলএ-র নিয়ন্ত্রণকারী সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারি জিনপিংয়ের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে বলে মনে করছে ওয়াশিংটন। এ বছরের জুনে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি সাংফুকে দল থেকে বহিষ্কার করে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। এর আগে তাঁর পদে থাকা ওয়েই ফেংহেরও একই পরিণতি হয়েছে। এই দু’জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে জিনপিং প্রশাসন।

১৭ ১৯

পেন্টাগনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘দুর্নীতির ঢেউ পিএলএ-র প্রতিটা পরিষেবাকে স্পর্শ করে ফেলেছে। ফলে যখন-তখন সেনার উপর থেকে বেজিংয়ের রাজনৈতিক নেতাদের আস্থা নড়ে যেতে পারে। এর জেরে চিনা লালফৌজের সেনাকর্তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। এতে ভিতর থেকে ড্রাগনের শরীরে পচন ধরার সম্ভাবনা রয়েছে।’’

১৮ ১৯

কিন্তু, তা সত্ত্বেও সামরিক আধুনিকীকরণের নিরিখে অন্য দেশগুলির তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বেজিং। জিনপিংয়ের ড্রোন শক্তিকে নিজেদের সমান বলে মনে করে ওয়াশিংটন। যদিও ফৌজের অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ড্রাগনের পিছিয়ে থাকার উল্লেখ রয়েছে পেন্টাগনের রিপোর্টে।

১৯ ১৯

আমেরিকার এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে বিবৃতি দিয়েছে চিন। বেজিংয়ের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যে ভাল হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের সহ্য হচ্ছে না। আর তাই উস্কানি দিতে এই ধরনের ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’’ আমেরিকাকে ‘যুদ্ধবাজ’ দেশ বলে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি তিনি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement