সংগৃহীত চিত্র।
উচ্চ মাধ্যমিকের কয়েকটি বিষয়ের পাঠ্যক্রমে রদবদল করল শিক্ষা সংসদ। বেশ কিছু জিনিস যেমন বাদ পড়ল, আবার নতুন বেশ কিছু বিষয় সংযোজন করা হয়েছে এই পাঠ্যক্রমে। ইংরেজি, বাংলা, ইতিহাস-সহ ১৯টি বিষয়ে পাঠ্যক্রমে সামান্য অদলবদল করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ভাবে এই পাঠ্যক্রমে ইতিহাসের চতুর্থ সিমেস্টারে নন ল্যাব প্রজেক্ট ওয়ার্কে নিকটবর্তী ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ এবং মিউজ়িয়ম পরিদর্শনের বিষয়গুলি যুক্ত করা হয়েছে। শুধু ভ্রমণ নয়, ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে পরীক্ষায় লিখতে হবে পড়ুয়াদের। এই বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য ২০ নম্বর ধার্য করা হয়েছে ।
চলতি বছরের শুরুতে যখন উচ্চমাধ্যমিকের নয়া পাঠ্যক্রম তৈরি করা হয়, তখন ইতিহাসের সিলেবাসে এই ধরনের কোনও প্রশিক্ষণ বা কর্মসূচির উল্লেখ ছিল না। পাঠ্যক্রম পরিমার্জনের পর এই নতুন বিষয় সংযোজন করা হল।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এই নতুন বিষয় যুক্ত করায় খুশি ইতিহাসের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, ইতিহাস মানে শুধু পাঠ্য বই মুখস্থ করা নয়। স্কুলের চৌহদ্দি পেরিয়ে স্থানীয় ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি। তাতে পড়ুয়াদের যেমন জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি সেই জায়গার ঐতিহাসিক গুরুত্বের সঙ্গেও পরিচিত হবে তারা।
এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের ইতিহাসের শিক্ষক পার্থসারথি বাছাড় বলেন, “এই ধরনের কার্যকরী বিষয় পাঠ্যক্রমে যুক্ত হওয়ায় পড়ুয়াদের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি, ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্বন্ধে আগ্রহ বাড়বে। ইতিহাস পড়্যাদের নিজের দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতির নিদর্শন চাক্ষুষ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এতে পড়ুয়ারা বিভিন্ন ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং স্থাপত্যের বিবর্তন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হবে।”
শুধু স্থানীয় স্তরে ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণ এবং মিউজ়িয়ম পরিদর্শন নয়। পরিবর্তিত পাঠ্যক্রমে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে ভারতের কি পরিস্থিতি হয়েছিল, তা-ও যুক্ত করা হয়েছে।
আবার বাদ পড়েছে আমেরিকা, চিন এবং পাকিস্তানের সাপেক্ষে পরিবর্তিত বিদেশনীতি। এর জায়গায় আনা হয়েছে ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।
শুধু ইতিহাস নয়, উল্লেখযোগ্য ভাবে ইংরেজি বিষয়েও পরিবর্তন করা হয়েছে । ইংরেজির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় সিলেবাসে যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলগুলিকে বলা হয়েছে, তারা যে বিষয়বস্তুগুলিকে কঠিন মনে করছে সেগুলি বাদ দিয়ে এই বিষয়গুলি পড়াতে পারে। প্রশ্নপত্রে সব বিষয়বস্তু থেকেই প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার্থীরা বাছাই করে উত্তর দিতে পারবে। এত দিন পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকে প্রবন্ধ রচনা বাধ্যতামূলক ছিল। পরিবর্তিত পাঠ্যক্রমে এই বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক না রেখে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে অপশন হিসাবে ই-মেল ড্রাফটিং বা খসড়া লেখার কথা বলা হয়েছে। এই পরিবর্তন করা হয়েছে বাংলা মাধ্যমে ইংরেজি বি ক্ষেত্রে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীলতা বা লেখার দক্ষতা পরীক্ষা করতে হলে রচনা বা অনুচ্ছেদ লেখা বাধ্যতামূলক করা উচিত ছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সেটা অপশনাল করে দেওয়াতে ইংরেজি লেখার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের গভীরতা কমবে।”
ইংরেজি যাদের প্রথম ভাষা, তাদের ক্ষেত্রেও প্রবন্ধ রচনাকে অপশনাল করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে, পড়ুয়ারা তার পরিবর্তে ভাবার্থ লিখতে পারবে।