Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2023

চাঁদমালায় পাকা ছাদের স্বপ্ন বুনে চলেছেন মণি

বাপের বাড়ি সমদ্রগড়ের নিমতলায়। কালনা শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বারুইপাড়ায় বিয়ে হয়ে এসেছিলেন মণি। শ্বশুর বাকুরাম দাস ভাগচাষি ছিলেন। স্বামী হলধর ঢাক বাজাতেন। বছর ছয়েক আগে তিনি মারা যান।

কালনার চাঁদমালা শিল্পী মণি।

কালনার চাঁদমালা শিল্পী মণি। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫২
Share: Save:

কাকভোরে প্রথমে বাড়ির কাজ সারা। তার পরেই বসে পড়া অভ্র, রঙিন কাগজ, চুমকি, জরি, রাংতা, ফিতে নিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বসে কাজ। যত্ন নিয়ে তা করে চলেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মণি দাস। কালনা শহরের বারুইপাড়ায় বসে তাঁর তৈরি চাঁদমালা পৌঁছে যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের নানা প্রান্ত ছাড়াও নদিয়া, হুগলি-সহ নানা জেলার মণ্ডপে। আর টালির চালের বদলে কংক্রিটের ছাদের স্বপ্নও তত বাড়ছে মণির।

বাপের বাড়ি সমদ্রগড়ের নিমতলায়। কালনা শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বারুইপাড়ায় বিয়ে হয়ে এসেছিলেন মণি। শ্বশুর বাকুরাম দাস ভাগচাষি ছিলেন। স্বামী হলধর ঢাক বাজাতেন। বছর ছয়েক আগে তিনি মারা যান। সংসার কী ভাবে চলবে, সে নিয়ে সাতপাঁচ ভাবতে থাকেন মণি। বাড়ির অদূরে চাঁদমালা তৈরি করতেন মঞ্জু পাল। তিনিই এই কাজে লাগিয়ে দেন মণিকে। মঞ্জুর বাড়িতে মণির চাঁদমালা তৈরির তালিম হয়। তার পরে মণি শুধু নিজে কাজ করে সংসার চালাননি, একই কাজ হাতে ধরে শিখিয়েছেন আরও অনেককে।

সারা বছর ধরেই তৈরি হয় প্রতিমার চাঁদমালা। ঝুলন্ত চাঁদমালার গায়ে লেখা থাকে দেবদেবীর নাম। মঞ্জুর বাড়ির দোতলায় বসেই মণি তৈরি করেন চাঁদমালা। নতুন চাঁদমালা থেকে ভেসে আসে পুজোর গন্ধ। চাঁদমালায় অভ্র দেওয়ার কাজ করার ফাঁকে মণি বলেন, ‘‘এ বার প্রচুর বরাত এসেছে। এখনও আসছে। তবে তাড়াহুড়োয় কাজ করছি না। কাজ যত নিখুঁত হবে, বরাত তত বাড়বে।’’ তিনি জানান, দুর্গাপুজোর সময় বরাত বেশি থাকায় বাড়তি পরিশ্রম হয় ঠিকই, তবে বহু প্রতিমায় নিজের তৈরি চাঁদমালা দেখে খুব ভাল লাগে।

চাঁদমালা গেঁথেই সংসারে অভাব ঘুচিয়েছেন মণি। ছোট্ট মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালের ঘর বদলে গিয়েছে ইটের গাঁথনির দেওয়াল ও টালির চালের বাড়িতে। বিয়ে দিয়েছেন এক নাতনির। মণি বলেন, ‘‘এক সময়ে স্বপ্ন দেখতে পারতাম না। এখন দেখি। বাড়িতে কংক্রিটের ছাদ দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। সঙ্গে চাঁদমালা তৈরির বড় একটা কারখানা গড়ারও স্বপ্ন আছে, যেখানে অনেক মেয়ে কাজ করবে।’’

মণির কাছে চাঁদমালা গড়ার কাজ শিখেছেন পূর্ণিমা দাস। তাঁর কথায়, ‘‘উনি বলেন, যতটুকু কাজ করবে, মন দিয়ে করো। ভাল কাজ করলে মানুষ ঠিক ভালবাসবে।’’ মঞ্জুর ছেলে সুব্রত পাল বলেন, ‘‘মণি কাকিমার বাড়িতে তেমন জায়গা ছিল না। তাই মা আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। ওঁরা এ বার দুর্গাপুজোর জন্য তৈরি করেছেন ২০ হাজারেরও বেশি চাঁদমালা। মায়ের মতো উনিও বহু মেয়ের কাছে অনুপ্রেরণা।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy