ভোলানাথ পাণ্ডে। ছবি: সংগৃহীত।
জরুরি অবস্থার পরে কেন্দ্রে তখন ক্ষমতাচ্যুত কংগ্রেস। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে। জেলবন্দি ইন্দিরাকে মুক্ত করতে একটি বিমান অপহরণ করেছিলেন কংগ্রেসে নেতা ভোলানাথ পাণ্ডে। স্রেফ একটি খেলনা বন্দুক নিয়ে। গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলে পরিচিত সেই ভোলানাথ গত কাল প্রয়াত হয়েছেন।
৭১ বছর বয়সি এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা লখনউয়ে নিজের বাসভবনে গত কাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তাঁর বাসভবনে ভোলানাথকে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। উত্তরপ্রদেশের দোয়াবা (বর্তমানে বাইরিয়া) বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দু’বার তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন ভোলানাথ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একটা বড় অংশের মতে, কংগ্রেস এবং দেশের রাজনীতিতে ভোলানাথের অবদানের চেয়েও ইন্দিরা গান্ধীকে তিহাড় জেল থেকে মুক্ত করতে তাঁর খেলনা বন্দুক নিয়ে বিমান ছিনতাইকে মানুষ অনেক বেশি করে মনে রাখবেন।
১৯৭৮ সালের ২০ ডিসেম্বর। গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ভোলানাথ তাঁর সহযোগী দেবেন্দ্র পাণ্ডেকে নিয়ে একটি খেলনা বন্দুক এবং একটি বল দিয়ে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের উড়ানটি ছিনতাই করেছিলেন। কলকাতা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার আইসি-৪১০ উড়ানটি দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। সেটি দিল্লি পৌঁছনোর মাত্র ১৫ মিনিট আগে আসনের ১৫তম সারিতে গোলমাল শুরু হয়। পরে ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্র ককপিটে গিয়ে বিমানচালককে নির্দেশ দেন, বিমানটি ছিনতাই হয়েছে বলে ঘোষণা করতে। বলতে বলা হয়েছিল, বিমানটি দিল্লির পরিবর্তে পটনা যাচ্ছে। ওই বিমানে ১৩২ জন আরোহী এবং দুই প্রাক্তন মন্ত্রী এ কে সেন এবং ধর্মবীর সিংহ ছিলেন।
বিমানের ক্যাপ্টেন এম এন ভাট্টিওয়ালা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্র পাইলটদের প্রথমে নেপালে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অপ্রতুল জ্বালানির কথা বলে তা প্রত্যাখ্যান করায় তাঁরা তখন বাংলাদেশে উড়ে যেতে বলেন। পরে তা-ও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পাইলট। তখন ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্র নিজেদের যুব কংগ্রেসের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে ইন্টারকমে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরা অহিংসায় বিশ্বাসী, যাত্রীদের কোনও ক্ষতি হবে না। তাঁদের দাবি ছিল, জেলবন্দি ইন্দিরা গান্ধীকে মুক্তি দিতে হবে এবং ইন্দিরা-পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
বিমানটি বারাণসীতে পৌঁছলে ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রামনরেশ যাদবের সঙ্গে দেখা করেন। কয়েক ঘণ্টা আলোচনা এবং ইন্দিরা গান্ধীকে মুক্তি দেওয়ার আশ্বাসের পর উড়ানটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আত্মসমর্পণ করেছিলেন দুই পাণ্ডে। ১৯৮০ সালে ইন্দিরা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
পরে ভোলানাথ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাদের ছিনতাই ছিল একটি প্রতিবাদ। উদ্দেশ্য ছিল, ইন্দিরা গান্ধীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জনতা পার্টির সরকারের উপরে চাপ তৈরি করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy