শৃঙ্গে ফাল্গুনী। নিজস্ব চিত্র
ইউরোপের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুস (৫৬৪২মিটার) জয় করলেন আউশগ্রামের অমরপুরের বাসিন্দা ফাল্গুনী দে। রবিবার ভারতীয় সময় সকাল ৯টা নাগাদ তিনি দক্ষিণ রাশিয়ার ককেসাস পর্বতমালার এই শৃঙ্গের শিখর স্পর্শ করে সেখানে দেশের জাতীয় পতাকা তুলে গেয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’।
১৩ অগস্ট কলকাতা থেকে রওনা দিয়ে মস্কো পৌঁছন উত্তর কলকাতার বাগবাজার উইমেন্স কলেজের ভূগোলের শিক্ষক ফাল্গুনী। তার পরে রাশিয়ার মাকালু এক্সট্রিম নামে এক সংস্থার মাধ্যমে শুরু করেন পর্বত অভিযান। আউশগ্রামের আদুরিয়া দিবাকর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীনই পাহাড়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল তাঁর। পাহাড়ের টানেই ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন ফাল্গুনী। বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা বছর ঊনচল্লিশের ফাল্গুনী কলেজে পড়ানোর পাশাপাশি, পাহাড় চড়ার নেশায় ছুটে গিয়েছেন লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশের দুর্গম বহু এলাকায়। সিকিমের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলে অভিযান করেছেন তিনি। গত বছর জয় করেন আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো। তার আগে লাদাখের স্টক কাংরি, গোলাপ কাংরি, হিমাচলের কানামো, উত্তরাখণ্ডের ফাচুকান্দি পাস, সিকিমের গোয়েচে লা ভি ওয়ানের মতো শৃঙ্গও জয় করেন ফাল্গুনী।
ফাল্গুনী বলেন, “দেশ-বিদেশের নানা পর্বতারোহীদের অভিযানের গল্প শুনে আসছি বহু বছর ধরে। ভূগোলের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে বইয়ের পাতা থেকেই প্রথম পাহাড় চড়ায় নেশা জাগে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার পাহাড়ে হেঁটেছি বহুবার। ২০১৪ থেকে টানা প্রায় দশ বছর হিমালয়ে যাচ্ছি।”
তাঁর দাবি, “মাউন্ট এলব্রুস অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল মূলত দু’টি। জি-টোয়েন্টিতে ভারতের নেতৃত্বকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা এবং যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে মানবতাবাদের প্রচার করা। মাউন্ট এলব্রুসের শিখর স্পর্শ করে আনন্দ এবং তৃপ্তি অনুভব করছি। দীর্ঘ এক বছরের প্রস্তুতিতে এই আগ্নেয় পর্বত অভিযানে সাফল্য মিলেছে।”
অভিযান খুব একটা সহজ ছিল না। ফাল্গুনী জানান, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ ছিল অভিযানের সবচেয়ে বড় বাধা। যুদ্ধের কারণে ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। তবে সে সব অগ্রাহ্য করেই ভিসার আবেদন করে ফেলেন তিনি। পাহাড়ের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং বারবার ওঠানামা করে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল বেসক্যাম্পে। তিনি বলেন, ‘‘টানা ১১ ঘণ্টা পথ হেঁটে শৃঙ্গ আরোহণ করি। বরফের উপরে জুতোয় ভারী ক্রাম্পন পরে হাঁটতে হয়েছে। তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২০ ডিগ্রি। তার মধ্যে অনবরত তুষারপাত হয়েছে। হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এ সব যুঝে এগিয়ে যাওয়া ছিল রীতিমতো কঠিন ও চ্যালেঞ্জের।”
আদুরিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ ঘোষ বলেন, “ফাল্গুনীবাবুর সাফল্যে স্কুল গর্বিত। স্বাধীনতার মাসে ইউরোপের পর্বতশৃঙ্গে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেশের মর্যাদা
বাড়িয়েছেন তিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy