Follow us on

Download the latest Anandabazar app

© 2021 ABP Pvt. Ltd.

Advertisement

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ই-পেপার

বেড়ানো

Unique places: বই পড়া, সিনেমা দেখা, বেড়ানো, পেটপুজো: কলকাতার এই প্রান্তে পায়ে হাঁটা দূরত্বেই সব কিছু

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:২৫
মন খারাপ? শহর বুকে জগদ্দল পাথর হয়ে বসেছে? এর ওষুধ কিন্তু রয়েছে শহরের এই প্রান্তেই। গ্রন্থাগার, রেস্তরাঁ, উদ্যান, সংগ্রহশালা, সঙ্গে পেটপুজোর নানা আয়োজন এখানে। কলকাতার রাজারহাট নিউ টাউন যেন শহরের মধ্যেই এক অন্য জগৎ।

নিউটাউনের অন্যতম আকর্ষণই হল ইকো ট্যুরিজম পার্ক। 'প্রকৃতি তীর্থ' বলে পরিচিত এই উদ্যানটি হল এখনও পর্যন্ত ভারতের বৃহত্তম পার্ক।
Advertisement
পার্কটির তিনটি অংশ-- পরিবেশগত অঞ্চল যেমন জলাভূমি ও ঘাসজমি,  থিম গার্ডেন আর খোলা জায়গা এবং বিনোদনমূলক স্থান। বিশ্ববিখ্যাত আশ্চর্য ভ্রমণ-স্থানের অনুকরণে নির্মিত থিম-বাগানে আপনি এক চক্করে ঘুরে নিতে পারেন আগ্রার তাজ মহল থেকে মিশরের পিরমিড।

এখানে আপনি সাইক্লিং, প্যাডেল বোটিং, শিকারায় ঘোরাঘুরি, পাখি দেখা, আর্চারি, রোয়িং, বন্দুক ছোড়া প্রভৃতি বিবিধ কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন। রয়েছে গোলাপ বাগান। এখানকার প্রজাপতি বাগান আর সাঙ্গীতিক ফোয়ারাও মন ভাল করে দিতে পারে বিনা শর্তে।
Advertisement
ইকো পার্কের মধ্যেই ‘সবুজসাথী’ নামে একটি দ্বীপ রয়েছে। দ্বীপের মধ্যে একটি ২৮০০ বর্গফুট ভবনের চারটি দিকই কাচের তৈরি। এই চমত্কার গ্লাস হাউস ছাড়াও এখানে রয়েছে 'ক্যাফে একান্তে' নামের একটি রেস্তরাঁ।  সেখানে বাঙ্গালির চিরচেনা তেলেভাজা থেকে চাইনিজ-- বিবিধ খাবারের আয়োজন।

ইকো পার্কের উল্টোদিকেই রয়েছে মাদার্স ওয়াক্স মিউজিয়াম। এটি কলকাতা শহরের নতুন দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম।

লন্ডনের মাদাম তুসো-র 'মোম মূর্তি'-র সংগ্রহশালাকে মাথায় রেখে নির্মিত এই জাদুঘরে আপনি দেখা পেতে পারেন বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রমাণ আকৃতির প্রতিমূর্তির।

বাঙালির মিষ্টান্নপ্রীতিকে সম্মান জানিয়েই তৈরি নিউ টাউনের মিষ্টি হাব। ইকো পার্কের তৃতীয় গেটের পাশের এই হাব-এ এক ছাদের নীচে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও বিরল মিষ্টির সন্ধান পেতেই পারেন যখন-তখন।

এই মিষ্টি হাবে আপনি পাবেন কলকাতার ১১টি বিখ্যাত দোকানের মিষ্টি। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা, শক্তিগড়ের ল্যাংচা, বহরমপুরের ছানাবড়া, কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত সরপুরিয়া, সরভাজা ইত্যাদি।

রবীন্দ্র তীর্থ। এই সংস্কৃতি কেন্দ্রটি সামগ্রিক ভাবে রবীন্দ্রনাথের জীবনের বিভিন্ন দিক, চিন্তাভাবনা, নৈতিকতা এবং শিক্ষার উপর আধারিত। এখানে রয়েছে একটি প্রেক্ষাগৃহ, শিল্প প্রদর্শনশালা, এমনকি সিনেমা হলও।

এখানে নিয়মিত চলে বিবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই রবীন্দ্র তীর্থে প্রবেশের জন্য টিকিট কাটতে হবে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাউন্টার খোলা থাকে। তবে এখানকার গ্রন্থাগারে প্রবেশের জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয়।

নজরুল তীর্থ কাজী নজরুল ইসলামকে নিবেদিত একটি সংস্কৃতি ও শিক্ষা কেন্দ্র। এর স্থাপত্যে বিবিধ হরফ ব্যবহার করা হয়েছে, যার নকশা করেছেন স্থপতি অবিন চৌধুরী।

কবি-ব্যবহৃত বিখ্যাত শব্দ খোদাই করে একটি আদিবাসী ভাস্কর্য বিশিষ্ট প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে এখানে। নজরুলের 'বিদ্রোহী' কবিতাটি থেকে ‘উন্নত মম শির’ শব্দ তিনটি সংযুক্ত করা হয়েছে। এখানকার সাতটি ব্লকের মধ্যে তিনটিতে জাদুঘর, একটি ব্লকে একটি গ্রন্থাগার এবং অন্যটিতে একটি প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। বর্তমানে, এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটিকে আংশিক ভাবে সিনেমা হল, প্রদর্শনী ও অভিনয়ের জন্য মুক্ত মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

নজরুল তীর্থেরই দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তল জুড়ে রয়েছে নিউ টাউন লাইব্রেরি। এই গ্রন্থাগারটিও দেখার মতো একটি জায়গা। এখানে বইগুলি ডিজিটাল ক্যাটালগের মাধ্যমে লভ্য। ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই গ্রন্থাগারের কার্যনির্বাহ করা হয়।

নিউ টাউন লাইব্রেরি মানুষকে বইয়ের কাছে আবার ফিরিয়ে আনতে চায়। এর সমসাময়িক অন্দরসাজ নতুন প্রজন্মের পড়ার প্রতি ভালবাসা ফিরিয়ে দেবে নিশ্চিত। এই গ্রন্থাগারটি তিনটি বিভাগে বিভক্ত-- সাধারণ, শিশু এবং কিশোর। দ্বিতীয় তলায় শিশুদের ও কিশোর-কিশোরীদের বিভাগ এবং অডিও ভিজ্যুয়াল রুম রয়েছে। এখানে সিনিয়র রিডিং রুম, আরও দু'টি অডিও-ভিজ্যুয়াল রুম আর ক্যাফে ও লাউঞ্জ তৃতীয় তলায় রয়েছে।

বসন্তকাল শুরু হয়েছে সবে, তবুও এখনই কলকাতায় দিনের বেলায় বেশ গরম বোধ হয়। এই সময় বরফে ঘেরা পাহাড়ে না যেতে পারলেও ঘুরে আসতে পারেন স্নো পার্কে। কলকাতার নিউটাউনে অ্যাক্সিস মলের মধ্যে অবস্থিত এই পার্কে সমস্ত বয়সের মানুষই রীতিমতো আনন্দ পাবেন এই সময়ে। সবার জন্য উপযুক্ত বিভিন্ন ধরনের রাইডও রয়েছে এখানে।

গোটা পার্কই বরফকুচি দিয়ে আবৃত এবং এখানে আপনি বরফ মানুষ বানানোর আনন্দে মেতে উঠতে পারেন অন্য সবার সঙ্গে। উপযুক্ত প্রবেশ মূল্য দিয়ে বেশ অনেকটা সময় আপনি সপরিবারেও কাটাতে পারেন এখানে।

কলকাতা কফি হাউসের ধাঁচে নিউ টাউনেও সম্প্রতি খোলা হয়েছে নিউ টাউন কফি হাউস। দু'টি তলায় বেশ ভাল বসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। প্রি-বুকিংয়ের বন্দোবস্ত থাকায় জায়গা পাওয়ার দুশ্চিন্তা আর নেই। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই রেস্তরাঁয় জানলার কাছে একটি ছোট পড়াশোনার জায়গাও রয়েছে। মান্না দে-র বিখ্যাত 'কফি হাউস' গানটির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি সুন্দর দেয়াল-শিল্প দেখতে পাওয়া যাবে।

নিউ টাউন কফি হাউসে পরিবেশকদের পোশাক কিন্তু আদি কফি হাউসের মতোই। এর স্থাপত্য বেশ রাজসিক। আটটি বাঁশিওয়ালার মূর্তি এখানকার স্তম্ভগুলিকে বহন করছে। স্থাপত্যটি তৈরি করেছেন হায়দ্রাবাদের এক বিখ্যাত স্থপতি। সন্ধেবেলায় আলোকোজ্জ্বল নিউ টাউন কফি হাউস যেন এক অচিন-নগর।

'স্বপ্ন ভোর সিনিয়রস পার্ক' পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকদের জন্য একটি ক্লাব। এখানে সদস্যদের জন্য বিভিন্ন আয়োজন রয়েছে, যেমন গ্রন্থাগার, সংস্কৃতি কেন্দ্র, ইনডোর গেমস, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যোগব্যায়াম, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য সঙ্গীত শিক্ষার ব্যবস্থা, সকাল ও সন্ধ্যায় হাঁটা ইত্যাদি। নিউটাউন বইমেলাও গত কয়েক বছর ধরে এখানেই হচ্ছে।

প্রায় ৪ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটিতে দু'টি ব্যাঙ্কোয়েট হল এবং একটি খোলা সবুজ লন রয়েছে যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়া হয়। অন্য দিকটি সম্পূর্ণ সবুজ। চারটি সোনালি বুদ্ধমূর্তি এই পার্কের অভিজ্ঞান। এখানে একটি বড় অ্যাকোয়ারিয়াম পার্কের অন্যতম আকর্ষণ।

কলকাতা গেট বা বিশ্ব বাংলা গেট নিউ টাউনের অন্যতম দ্রষ্টব্য জায়গা। এখানে একটি ঝুলন্ত রেস্তরাঁও রয়েছে। এখানে সংগ্রহশালা এবং রেস্তরাঁর চারপাশ কাচ দিয়ে ঘেরা, যেখানে চোখ রাখলে আপনার সামনে দিগন্ত বিস্তৃত 'নতুন কলকাতা'।

পুরো জায়গাটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।  এখানকার রেস্তরাঁয় পাবেন বাঙালি ও অন্যান্য বিভিন্ন ক্যুইজিনের খাবার। দেশের বাইরে থেকে আসা ভ্রমণার্থীরাও বিশ্ব বাংলা গেট এবং ঝুলন্ত এই রেস্তরাঁ দেখতে আসেন।