প্রতীকী ছবি।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে বদলে দিয়েছে জীবনের গতি। মারণ করোনাভাইরাসের ‘উৎসস্থল’ হিসেবে চিহ্নিত চিনের উহান শহরের বাসিন্দাদের একাংশের হাল আরও শোচনীয়। প্রিয়জনকে হারানোর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বঞ্চনারও শিকার হয়েছেন তাঁরা।
গত বছরের নভেম্বরে উহানে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী লিউ পেইনের বাবা লি ওউকিং ছিলেন আক্রান্তদের একজন। জানুয়ারিতে বাবার মৃত্যু বদলে দিয়েছিল লিউকে। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন তিনি। বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা।
প্রায় ১০ মাস আগে করোনা আক্রান্ত ছেলের মৃত্যুর পরে কার্যত নির্বাসনে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ঝং হ্যানেং। দীর্ঘদিন ধরে পরিজন এবং বন্ধুদের থেকে দূরে সরে থাকায় মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছেন তিনি। আদালতে গিয়েও সুবিচার পাননি।
কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত একদলীয় চিন থেকে করোনা সংক্রমণের খবর তেমন সামনে আসেনি। কিন্তু তারই মধ্যে উহানের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির ক্ষোভের আঁচ সামনে এসেছে। করোনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে।
লিউয়ের অভিযোগ, প্রথম পর্যায়ে উহানে করোনা পরীক্ষার কিট ছিল অমিল। ফলে সঠিক সময়ে তাঁর বাবার করোনা পরীক্ষা হয়নি। সময়মতো হয়নি চিকিৎসাও। লিউ বলেন, ‘‘প্রথমে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়েছিল। প্রতিশোধের ভাবনা এসেছিল। কিন্তু বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেওয়ার পরে আর সেই চিন্তা আসে না। এমনকি, ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার পরে আর অর্থের চিন্তাও মনে ঠাঁই পায় না।’’
তবে মৃতদের পরিজনেরা সকলে লিউয়ের মতো নন। করোনা আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের অনেকেরই অভিযোগ, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর গোপন করেছিল উহান পুরসভা এবং স্থানীয় প্রশাসন। আর প্রথম কয়েক সপ্তাহের এই গোপনীয়তার কারণে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল সংক্রমণ। তার ফলে মৃত্যু হয় প্রায় ৪,০০০ শহরবাসীর।
আরও পড়ুন: করোনার উৎস ভারতীয় উপমহাদেশ! এ বার দাবি চিনের
৬৭ বছরের ঝংয়ের অভিযোগ, তাঁর ছেলে পেং ওইয়ের মৃত্যু হয়েছে সরকারি গাফিলতিতে। তিনি বলেছেন, ‘‘করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরে শহরের একটি ছোট, অপরিসর সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আমার ছেলেকে রাখা হয়েছিল। তেমন কোনও চিকিৎসাই মেলেনি। দু’সপ্তাহ পরে ও মারা যায়।’’ ৩৯ বছরের পেং ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান তেমন কোনও সরকারি সাহায্যও পাননি।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের করোনা টিকা নিরাপদ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ ওড়াল সেরাম ইনস্টিটিউট
সরকারি উদাসীনতার বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় কয়েকজন উহানবাসী আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন। ঝংও ছিলেন সেই দলে। কিন্তু স্থানীয় আদালত পত্রপাঠ সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। মনে একরাশ ক্ষোভ থাকলেও তাই সুবিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। ঝংয়ের কথায়, ‘‘শুধু ছেলেকে নয়, করোনাভাইরাস আমাকেও মেরে ফেলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy