Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ওয়াশিংটন থেকে দিল্লি, খেল দেখাচ্ছে দুষ্টুই

এত দিন হা-পিত্যেশ চলছিল, সে কখন দেখা দেবে। শেষমেশ সে এল। এবং এল প্রবল পরাক্রমে। বিলম্বিত শীতের সেই দাপটে ওয়াশিংটন থেকে নয়াদিল্লি রীতিমতো থরহরি কম্পমান!

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৪
Share: Save:

এত দিন হা-পিত্যেশ চলছিল, সে কখন দেখা দেবে। শেষমেশ সে এল। এবং এল প্রবল পরাক্রমে। বিলম্বিত শীতের সেই দাপটে ওয়াশিংটন থেকে নয়াদিল্লি রীতিমতো থরহরি কম্পমান!

এ বার আমেরিকা যেমন, তেমন ভারতীয় উপমহাদেশও নতুন বছরে পা দিয়েছে উষ্ণতার চাদরে মুড়ে। মানুষের হতাশার শেষ ছিল না। বড়দিনের আগেই শীত বেবাক উবে গিয়েছিল। মার্কিন মুলুকে বরফের নামগন্ধ ছিল না, কিছু শহরে তো বড়দিন পালিত হয়েছে কুড়ি ডিগ্রির গরমে! ভারতে হতাশার সঙ্গে জুড়েছিল আশঙ্কা। হিমাচলের আপেল চাষি থেকে বাংলার ফুলকপি চাষি— সকলে লোকসানের হিসেব কষতে বসে গিয়েছিলেন। শীতের অভাবে ফলন যে বিপর্যস্ত!

হারিয়ে যাওয়া শীত ভীষণ ভাবে ফিরে আসায় চাষের কতটা সুরাহা হবে, এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এটা দেখা যাচ্ছে যে, তার দাপটে বিশ্বের দু’প্রান্তে তোলপাড় চলছে। আমেরিকার একাংশ ইতিমধ্যে তুষারঝড়ে বিধ্বস্ত। অন্য দিকে শৈত্যপ্রবাহের চোটে তামাম উত্তর ভারতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বেলাইন হয়ে গিয়েছে। হিমালয়ের কনকনে বাতাসে কাঁপছে কাশ্মীর থেকে সুন্দরবন। আবহবিদেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিও এল নিনো’র দৌলতে। প্রশান্ত মহাসাগরের সেই ‘দুষ্টু ছেলে’র চঞ্চলতায় বিশ্ব-আবহাওয়া এত অস্থির হয়ে গিয়েছে যে, দেরিতে আসা শীতেই নড়ে যাচ্ছে অর্ধেক দুনিয়া!

আঁচ পাচ্ছে কলকাতাও। এই সে দিন মহানগরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ঘোরাফেরা করছিল। সোমবার তা নেমে গিয়েছে ১১.৩ ডিগ্রিতে। দমদমে ৯.৬। বস্তুত পারদ আর একটু নামলেই উত্তর ২৪ পরগনার শহরঘেঁষা এলাকা শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়বে। মেদিনীপুর (৯.৫) ও পুরুলিয়ায় (৭.১) শৈত্যপ্রবাহ ঘোষিত হয়ে গিয়েছে। বীরভূম, বাঁকুড়া, বর্ধমান কার্যত শৈত্যপ্রবাহের দোরগোড়ায়। উপকূলবর্তী দিঘা, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিংয়ে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রির কাছে নেমেছে। বিহার-ঝাড়খণ্ডেও জাঁকিয়ে ঠান্ডা। রাঁচির রাতের তাপমাত্রা ৫.৫ ডিগ্রি ছুঁয়ে ফেলেছে। সেখানেও বইছে শৈত্যপ্রবাহ।

শৈত্যপ্রবাহ জিনিসটা কী?

আবহবিদদের ব্যাখ্যা: শীতকালে কোথাও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের অন্তত পাঁচ ডিগ্রি নামলেই তা শৈত্যপ্রবাহ। পুরুলিয়া-মেদিনীপুরে যেমন হয়েছে। সারা দক্ষিণবঙ্গে এখন দিনে ঝলমলে রোদ আর রাতে কড়া ঠান্ডা। উত্তরবঙ্গে অবশ্য একটু অন্য রকম। সম্প্রতি সান্দাকফুতে তুষারপাতের জেরে পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সে দিনের তাপমাত্রা কমেছে। উপরন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যে দিনে কুয়াশা থাকছে, রোদে তেজ নেই। সব মিলিয়ে ওই তল্লাটে দিনে-রাতে সর্বক্ষণই কনকনে ঠান্ডা।

আবহবিদেরা বলছেন, এ যাবৎ দুর্বল পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সুবাদে মধ্য ভারতে পরের পর ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছিল, যা পাঁচিল তুলে দিচ্ছিল দক্ষিণবঙ্গে শীতের পথে। কিন্তু সম্প্রতি একটা জোরালো ঝঞ্ধা এসেছে কাশ্মীরে। তার দাক্ষিণ্যে উত্তর ভারতে দুরন্ত ঠান্ডা পড়েছে। অন্য দিকে মধ্য ভারতের ঘূর্ণাবর্ত বৃষ্টি ঝরিয়ে মিলিয়ে গিয়েছে। ফলে উত্তরের বরফ-শীতল বাতাস বিনা বাধায় হু হু করে ছুটে আসছে দক্ষিণবঙ্গের দিকে। বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকায় মেঘ নেই। এতে রাতে মাটির তাপ দ্রুত বিকিরিত হয়ে ঠান্ডা নামাচ্ছে।

পরিণামে রবিবার দিনভর কনকনে উত্তুরে হাওয়ায় মহানগর কেঁপেছে। তুলনায় সোমবার সকাল থেকে উত্তুরে বাতাসের শিরশিরানি ততটা মালুম না-হলেও ঠান্ডা ভালই ছিল। আলিপুর হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, আগামী ক’দিন শীতের পথে তেমন বাধা নেই।

অর্থাৎ, সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় সামান্য হেরফের হলেও সামনের কয়েকটা দিন শীতের আমেজ চুটিয়ে উপভোগ করা যাবে বলে আলিপুর আশাবাদী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy