Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Rohinga

ফিরতে চান রোহিঙ্গারা, ফেরা কি এতই সহজ

শরণার্থীরা ফিরুন চায় না পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসা। ঘরে ফিরতে ইচ্ছুকদের নামের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনকে দিয়েছিলেন জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লা।

উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের একটি স্কুল।

উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের একটি স্কুল। নিজস্ব চিত্র।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
উখিয়া শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:১৮
Share: Save:

ঢাকার ‘লিট ফেস্ট’-এ শুক্রবার ৬ জানুয়ারি হাজির তিন রোহিঙ্গা কবি। আব্দুল্লা হাবীব, শাহিদা উইন এবং আইলা আক্তার কবিতা লেখেন মাতৃভাষা রোয়াইঙ্গা-য়। হাবীব নিজের কবিতা শুনিয়েছেন নিজেই ইংরেজি তর্জমা করে, বাকিদের কবিতা বাংলায় অনুবাদ করে পাঠ করা হয়। সে কবিতায় মায়ানমারের রাখাইন (সাবেক আরাকান)-এ বসবাসের সময়ের আজন্ম দুচ্ছাই-অভিজ্ঞতা, দেশছাড়া হওয়ার সেই রাতের কাহিনি থেকে পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে সফেদ ঝুপড়িতে দুঃস্বপ্নের দিন যাপনের টুকরো ছবি। তার পরেও কবিদের আকুতি— শরণার্থী জীবন শেষ করে এখনই ফিরতে চান তাঁরা। দেশে, মায়ানমারে, রাখাইনে।

প্রৌঢ় আবদুল্লা চিন্তিত ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ১৯ বছরের হাকিম দিনরাত আড্ডা দিয়ে দিন কাটায়। কাজের সুযোগ নেই এখানে। কিন্তু চোরাচালানে টাকা কামানোর হাতছানি আছে। রাতের নাফ নদীর কালো জল পেরিয়ে মায়ানমারে থেকে মাদক, অস্ত্র ও সোনার একটা চালান আনতে পারলেই মোটা আয়। রয়েছে মৌলবাদী জঙ্গিদের নিত্য কানভাঙানি। ১১ লক্ষ মানুষকে সামলাতে কত আর পুলিশ! আবদুল্লার সাফ কথা— দেশে ফিরতে পারলে চাষবাসে ব্যস্ত রাখা যেত ছেলেটাকে।

ক্যাম্প ওয়ান-এর মুখিয়া বা হেড মাঝি মহম্মদ আমিন তাঁদের দুর্দশা বর্ণনার পাশাপাশি এক নিঃশ্বাসে ধন্যবাদ দেন ‘বাংলাদেশ সরকার ও মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’-কে। জানাতে ভোলেন না তাঁর সৌজন্যেই পাঁচটা বছর খেয়ে পরে বেঁচে রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আর নয়, আমিন বলেন, “একটু নিরাপত্তার আশ্বাস পেলেই আমরা ফিরে যাই।”

ফিরতে তো অনেকেই চান, ফেরা কি সহজ?

শরণার্থীরা ফিরুন চায় না পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি)। ঘরে ফিরতে ইচ্ছুকদের নামের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনকে দিয়েছিলেন জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লা। গত সেপ্টেম্বরের শেষে আরসা গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় মুহিবুল্লাকে। তাঁর পরিবারের ৩৫ জনকে আশ্রয় দিয়েছে কানাডা। কিন্তু আবদুল্লা বা আমিনের মতো মুহিবুল্লার সহকারীরা রয়েছেন আতঙ্কে। উখিয়ার এক পুলিশকর্মী জানালেন, গত ১৪ দিনে ৭টি খুন হয়েছে ক্যাম্পে। উদ্ধার হয়েছে আধুনিক রাইফেল, ম্যাগাজিন ও গ্রেনেড, বিপুল মাদক। এ সবই আরসা-র বাড়বাড়ন্তের পাথুরে প্রমাণ।

সরকারি অফিসারেরা অবশ্য জঙ্গি সমস্যা নিয়ে সফরকারী ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে নারাজ। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা যে জটিল হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে একমত তাঁরা। কোভিডের সময়ে বাংলাদেশ ছেড়ে আর ফেরেনি বহু বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ইউক্রেনের বিপর্যয় নিয়ে তারা এখন ব্যস্ত। রাষ্ট্রপুঞ্জের শরণার্থী বিষয়ক শাখা ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশের শাখার আবাসিক প্রধান গোয়েন লুইস জানিয়েছেন, ২০২২-এ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য ৮৮ কোটি ডলার খরচ হয়েছে। বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তার মাত্র ৪৪ শতাংশই সাহায্য হিসেবে আদায়ের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। লুইসের মতে, যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণেও পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য মিলছে না। সেই বোঝা চেপেছে বাংলাদেশের কাঁধে।

এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ফের তৎপর হয়েছে ঢাকা। কিন্তু সাড়া মিলছে সামান্যই। বিবর্ণ হচ্ছে শিবিরের সাদা রং। টান পড়ছে ত্রাণে। ফিকে হচ্ছে বাসিন্দাদের দেশে ফেরার স্বপ্নও। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের তাই আক্ষেপ— বিশ্ব যেন ভুলেই গিয়েছে রোহিঙ্গাদের!

অন্য বিষয়গুলি:

Rohinga Camp Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE