গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
শুধুই ভারত নয়, আমেরিকা ও তার মিত্রদের মধ্যে অন্তত ২০টি দেশের উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার ও সেনাকর্তারা হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারির শিকার হয়েছেন। ব্যক্তিগত তথ্যাদি জানার জন্য এ বছরের গোড়ার দিকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের ফোনে নজরদারি চালানো হয়েছে। ওই ঘটনার তদন্তে জড়িতদের সূত্রে এই খবর পাওয়া গিয়েছে।
ফেসবুক তদন্তে জানতে পেরেছে, ভারত ছাড়াও ওই নজরদারির শিকার হয়েছেন আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাহরাইন, মেক্সিকো ও পাকিস্তানের মতো আরও কয়েকটি দেশের উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার ও সেনাকর্তারা। পাঁচটি মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা যে দেশগুলির বেশির ভাগই আমেরিকার বন্ধু বলে পরিচিত। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, যাঁরা নজরদারির শিকার হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই অত্যন্ত উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসার ও সেনাকর্তা।
তদন্তকারীদের ধারণা, ওই হোয়াটসঅ্যাপ নজরদারির পিছনে কোনও সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অভিসন্ধি থাকতে পারে। নজরদারির অভিযোগে ইজরায়েলি হ্যাকিং টুল ডেভেলপার ‘এনএসও গ্রুপ’-এর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার মামলা দায়ের করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।
হোয়াটস্যাপের অভিযোগ, ইজরায়েলি সংস্থাটি ওই হ্যাকিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। পরে তা অন্য সংস্থাকে বিক্রিও করেছে। তাদের সার্ভারে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল, সেটা স্বীকার করে নিয়ে হোয়াটস্যাপ জানিয়েছে, হ্যাকাররা সেই ফাঁকফোকর দিয়েই নজরদারি চালিয়েছে। আর এই ভাবেই এ বছরের ২৯ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত ১২ দিনে সেলফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন এমন অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন ওই নজরদারির শিকার হয়েছেন।
আরও পড়ুন- ভারতীয় সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে আড়ি! ব্যাখ্যা চাইল কেন্দ্র
আরও পড়ুন- গ্যাস স্টোভ ফেটে বিস্ফোরণ ট্রেনে, পাক পঞ্জাবে মৃত ৭৪
তবে নজরদারির পিছনে ঠিক কারা জড়িত, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। কারণ, ইজরায়েলি সংস্থা এনএসও জানিয়েছে, তারা স্পাইওয়্যারটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করেছিল।
স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতানোর চেষ্টার জন্য ইজরায়েলি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা এনএসও-র বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বুধবারই ঘোষণা করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে যাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল, তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবেও সতর্কও করে দেয় মার্ক জাকারবার্গের সংস্থাটি। নামের সেই তালিকা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে হইচই, প্রশ্ন উঠেছে— কাদের হয়ে কাজ করছিল ইজরায়েলি সংস্থাটি? ভারত সরকারই তাদের দিয়ে আড়ি পাতাচ্ছিল না তো? সব নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসর ও গোপনীয়তার অধিকারের পক্ষে সওয়াল করা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আর্জি জানিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে সর্বোচ্চ আদালতের উচিত সরকারকে নোটিস দেওয়া।
অ্যাকাউন্টে আড়ি পাতার চেষ্টা হচ্ছে বলে গত এক সপ্তাহ ধরে হোয়াটসঅ্যাপের কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেয়েছেন প্রায় দু’ডজন বিশিষ্ট মানুষ। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় কেন্দ্রের ‘শহুরে নকশাল’ তকমা দেওয়া বেশ কয়েক জনের আইনজীবী নিহাল সিংহ রাঠৌর, আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা আইনজীবী বেলা ভাটিয়া, মানবাধিকার কর্মী ডেগ্রিপ্রসাদ চৌহান। এ ছাড়া বেশ কয়েক জন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপের তরফে জানানো হয়েছে, ভিডিয়ো কলের সময়ে ‘পেগেসাস’ নামে একটি স্পাইওয়্যার এঁদের ফোনে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও বা কিউ সাইবার টেকনোলজিস। সংস্থাটির বিরুদ্ধে ৭৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছেন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকের অজান্তে ফোনে ঘাঁটি গেড়ে এই স্পাইওয়্যার তাঁর সব ব্যক্তিগত তথ্য ইজরায়েলি সংস্থাটিকে পাচার করত। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy