হামাসের ডেরায় হার্শ গোল্ডবার্গ-পোলিন। ছবি: সমাজমাধ্যম।
শীর্ণ চেহারা। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। বছর ২৩-এর ইজ়রায়েলি-আমেরিকান যুবক একটি ভিডিয়োতে জানাচ্ছেন, তাঁর নাম হার্শ গোল্ডবার্গ-পোলিন। ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলের নোভা মিউজ়িক ফেস্টিভ্যাল থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাজ়ায় বন্দি করে রেখেছে প্যালেস্টাইনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস। ভিডিয়োটি প্রকাশ করেছে হামাসই। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, হার্শ বেঁচে রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর এক হাতের নীচের দিকের অংশ নেই। দেখে মনে হচ্ছে বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে। চিৎকার করছেন হার্শ। গলায় যেন কান্না চেপে রাখা। কাটা হাতটা দেখিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘ইজ়রায়েলিরা যে এই অবস্থায় বন্দি রয়েছেন, তাঁদের উদ্ধারের কোনও চেষ্টাই করছে না বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার।’’
গোটা বিষয়টিকে ‘সাইকোলজিক্যাল টেররিজ়ম’ বলে উল্লেখ করেছে ইজ়রায়েল। তাদের বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এ ধরনের ভিডিয়ো প্রকাশ করে মানসিক সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে হামাস। উত্তেজনা ছড়িয়েছে গোটা ইজ়রায়েল জুড়ে। বন্দিদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সেখানে এমনিতেই বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। তাতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে এই ভিডিয়ো। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-সহ আরও ১৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অবিলম্বে বন্দিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন— ‘‘গাজ়ার সাধারণ মানুষ ও সেখানে বন্দি থাকা ইজ়রায়েলিরা এখন গোটা বিশ্বের চিন্তার কারণ। দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি ও বন্দি-মুক্তি নিয়ে যে চুক্তি আলোচনার টেবিলে আটকে রয়েছে, সেটার অগ্রগতিতে জোর দিচ্ছি আমরা। এতে গাজ়া ভূখণ্ডে ঠিকমতো ত্রাণ ঢুকতে পারবে। সাধারণ মানুষ ঘরে ফিরতে পারবেন। হামাসকেও আমরা বলছি, বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হোক। এই বিপর্যয়ের শেষ হোক। শান্তি ফিরে আসুক।’’
ছ’মাস হয়ে গেল হার্শ গাজ়ায় জঙ্গিদের ডেরায় বন্দি। তিনি বেঁচে আছেন না মরে গিয়েছেন, তা-ই জানতেন না তাঁর মা-বাবা। ভগ্ন চেহারা, একটা হাত নেই, তা-ও বেঁচে তো আছে ছেলে। হার্শের বাবা জন পোলিনের মুখে সে কথাই শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওকে দেখতে পেলাম, ওর গলা শুনতে পেলাম। কিছুটা স্বস্তি লাগছে। ও বেঁচে আছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আশা করি ভিডিয়োটা পুরনো নয়। আমাদের বিশ্বাস ও বেঁচে রয়েছে।’’
হামাসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা খালিল আল-হায়া আজ জানিয়েছেন, তাঁরা আগামী পাঁচ বছর কিংবা তারও বেশি সময়ের জন্য অস্ত্র নামিয়ে রাখতে প্রস্তুত। কিন্তু শর্ত হল, ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্তরেখা মেনে প্যালেস্টাইনিদের তাঁদের দেশ ফিরিয়ে দিতে হবে। খালিল আরও জানিয়েছেন, তাঁদের দেশ ফিরিয়ে দেওয়া হলে হামাস একটি রাজনৈতিক সংগঠনে পরিবর্তিত হবে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই প্রথম হামাসের মুখে অস্ত্র সংবরণের কথা শোনা গেল, যা রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ-ও সত্যি, ইজ়রায়েল কোনও ভাবেই এই শর্ত মানবে না। তারা মৈত্রী কিংবা শান্তি চুক্তিতেই যেতে চায় না। বরং ইজ়রায়েল ঘোষণা করেছে, দক্ষিণ গাজ়ায় রাফা শহরের দিকে এগোচ্ছে সেনাবাহিনী। রাফায় স্থল-অভিযান শুরু করা হবে। গাজ়া ভূখণ্ডে এখন সবচেয়ে বেশি মানুষের বাস রাফায়। এত দিন ইজ়রায়েলি বাহিনীই নির্দেশ দিচ্ছিল, উত্তর ও মধ্য গাজ়া ফাঁকা করে দিয়ে দক্ষিণের চলে যেতে হবে। তারাই জানিয়েছিল, মিশর সীমান্ত ঘেঁষা রাফা নিরাপদ। কিন্তু তা-ও যে কথার কথা ছিল, সেটা স্পষ্ট। আশঙ্কার প্রহণ গুনছেন সাধারণ মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy