Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

হোলি আর্টিজান: ৭ ফাঁসি, আইএস টুপি পরে আসামি হাজির কোর্টে

রেস্তরাঁয় হামলার পরে আইএসের ওয়েবসাইটে তার দায় স্বীকার করে তাদের মুখপত্র ‘দাবিক’-এ হামলার কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুলের টুপিতে আইএসের লোগো।ঢাকার আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুলের টুপিতে আইএসের লোগো।ঢাকার আদালত চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪১
Share: Save:

ঢাকার কূটনেতিক এলাকায় অভিজাত রেস্তরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হানার চক্রান্তের দায়ে ৮ জন আসামির ৭ জনকেই বুধবার প্রাণদণ্ড দিয়েছে ঢাকার বিশেষ সন্ত্রাস-বিরোধী আদালত। এক জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। প্রাণদণ্ড পাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে খাগড়াগড় মামলার অন্যতম প্রধান আসামি সোহেল মাফুজ, ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা। কিন্তু পুলিশ হেফাজতে থাকা জঙ্গিদের অন্তত দু’জনকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর লোগো দেওয়া টুপি পরে আদালতে দেখা যাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, কড়া পুলিশি পাহারায় থাকা আসামিদের কাছে এই টুপি পৌঁছল কী করে? কোনও উদ্দেশ্যে বা কাউকে বার্তা দিতে কি ভরা আদালতে এই টুপি-নাটকের অবতারণা করল প্রশাসনের কোনও মহল?

রেস্তরাঁয় হামলার পরে আইএসের ওয়েবসাইটে তার দায় স্বীকার করে তাদের মুখপত্র ‘দাবিক’-এ হামলার কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ প্রশাসন সে দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলে, ঘরোয়া জঙ্গি সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’-ই প্রচারের জন্য এই হামলা চালিয়েছে। আইএস বা কোনও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই। এ দিন টুপি-নাটকের পরে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের সে দিনের দাবিকে নাকচ করতেই কি জঙ্গিদের আইএসের লোগো দেওয়া টুপি পরানো হল? এ ভাবে কি প্রমাণ করার চেষ্টা হল, সরকার স্বীকার না-করলেও বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব রয়েছে? পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ আসামিদের কাছে টুপি পৌঁছে দিয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। কারণ, কঠোরতম পাহারায় থাকা আসামিদের কাছে পৌঁছনোর উপায় আর কারও ছিল না। জঙ্গি-সংগঠনের টুপি কোথা থেকে এল, সাংবাদিকেরা সেই প্রশ্ন করায় পাহারাদার পুলিশ যে ভাবে তাদের দাবড়েছে, তাতে স্পষ্ট টুপি-কাণ্ড নিয়ে তারা বিলক্ষণ অবহিত ছিল। দুই জঙ্গির টুপি খোলার কোনও চেষ্টাও পুলিশকে করতে দেখা যায়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এই কি সন্ত্রাসবাদের প্রতি পুলিশের ‘জিরো টলারেন্স’?

ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা গুলশন ২ নম্বরে অভিজাত রেস্তরাঁ হোলি আর্টিজান বেকারিতে পাঁচ জঙ্গি হানা দিয়েছিল ২০১৬-র ১ জুলাই, স্থানীয় সময় রাত ৮.৪৫ নাগাদ। রাতভর রেস্তরাঁর দখল নিয়ে ৯ জন ইটালীয়, ৭ জন জাপানি, ১ ভারতীয় এবং ৩ জন বাংলাদেশি— সব মিলিয়ে ২০ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে জঙ্গিরা। তাদের ছোড়া বোমায় প্রাণ হারান দুই পুলিশ অফিসারও। এর পরে ভোর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রেস্তরাঁটি জঙ্গিদের দখলমুক্ত করে। পাঁচ জঙ্গিই মারা যায়। ১৩ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরের দিনই গুলশন থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত বিচারের জন্য মামলাটি বিশেষ সন্ত্রাস-বিরোধী আদালতে পাঠানো হয়।

২১ জনের নাম চার্জশিটে থাকলেও তার মধ্যে জীবিত ৮ জনকে আসামি করে তদন্তকারী সংস্থা, পুলিশের জঙ্গি দমন শাখা। বিচারক এ দিন রায় ঘোষণার পরে প্রাণদণ্ড পাওয়া জঙ্গিরা আদালতে উল্লাস প্রকাশ করে। এর পরে আদালত থেকে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময়ে রাকিবুল ইসলাম ও জাহাঙ্গির আলম রাজীবের মাথায় আইএসের লোগো দেওয়া টুপি দেখা যায়। বিতর্ক ওঠার পরে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফা কামাল পাশা বলেন, ‘‘আসামিরা কারাগার থেকে এই টুপি নিয়ে এসেছিল কি না, তা জানতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গড়ে ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’ তবে পুলিশের জঙ্গি দমন শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম বিষয়টিকে লঘু করে দাবি করেছেন, আইএসের কোনও টুপিই নেই। ওই টুপিতে সাধারণ কিছু ধর্মীয় শব্দ আরবিতে লেখা আছে। তার পরেও এই টুপি কী করে তাদের হাতে গেল, তা জানতে তদন্ত হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Dhaka Attack Capital Punishssment Gulshan ISIS Cap Holey Artisan Bakery Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy