Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Protest

অসহযোগের ডাক ঘিরে শঙ্কা ঢাকায়

এ দিন ঢাকায় পুলিশকে অনেক সংযত আচরণ করতে দেখা গিয়েছে। সায়েন্স ল্যাবের মোড়ে ছাত্ররা পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি গিরে ধরে তার গায়ে লেখা পুলিশ-এর আগে ‘ভুয়া’ লিখে দেয়। পুলিশের আর একটি গাড়ির গায়ে লাল রং দিয়ে লেখা হয়— খুনি।

কোটা-সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে মিছিল। শুক্রবার ঢাকায়।

কোটা-সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে মিছিল। শুক্রবার ঢাকায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২৬
Share: Save:

কোটা-বিরোধী আন্দোলনে হিংসাত্মক ঘটনায় নিহতদের স্মরণে কর্মসূচিকে ঘিরে শুক্রবার ফের উত্তপ্ত হল রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের নানা এলাকা। সিলেটের হবিগঞ্জে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক জন। খুলনায় আন্দোলনকারীরা এক জন পুলিশকে পিটিয়ে মেরেছে। ঢাকার উত্তরায় সারা দিন ধরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। তাতে এক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। অভিযোগ, উত্তরায় বেসরকারি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এ দিন বিক্ষোভ মিছিল বার করলে পুলিশের আড়ালে থাকা সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্র লীগের সশস্ত্র কর্মীরা হামলা করে। তাদের হাতে পিস্তল ও তরোয়াল থাকার কথাও জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রবিবার থেকে ছাত্ররা অনির্দিষ্টকালীন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পরে বিএনপি-সহ সব বিরোধীরা তাকে সমর্থন জানানোয় ফের বাংলাদেশ জুড়ে হিংসা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ দিন ঢাকায় পুলিশকে অনেক সংযত আচরণ করতে দেখা গিয়েছে। সায়েন্স ল্যাবের মোড়ে ছাত্ররা পুলিশের একটি সাঁজোয়া গাড়ি গিরে ধরে তার গায়ে লেখা পুলিশ-এর আগে ‘ভুয়া’ লিখে দেয়। পুলিশের আর একটি গাড়ির গায়ে লাল রং দিয়ে লেখা হয়— খুনি। উইন্ড স্ক্রিনও লাল রং দিয়ে ঢেকে দেওযা হয়। গাড়ির ভিতরে থাকা পুলিশ যেমন কোনও আক্রমণাত্মক আচরণ করেনি, ছাত্রদের ঘিরে রাখা হেলমেটধারী পুলিশকেও দেখা গিয়েছে শান্ত ভাবে ছাত্রদের নিরন্তর বোঝাতে। তবে সিলেট, খুলনা, বরিশাল, নরসিংদী, চট্টগ্রাম থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের খবর মিলেছে। এর ফলে অন্তত ৩০০ জন জখম হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ দিন বলেন, “পুলিশকে বলা হয়েছে ছাত্রদের উপরে বলপ্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে। মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু তৃতীয় কোনও পক্ষ যাতে তার সুযোগ না নেয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকা দরকার।”

ছুটির দিন শুক্রবারে জুম্মার নমাজের পরে হিংসায় প্রাণ হারানো তরুণদের স্মরণ এবং এঁদের খুনিদের নিরপেক্ষ বিচারের দাবিতে বহু সংগঠন জমায়েত ও মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছিল। ঢাকার পাশাপাশি দেশের সর্বত্রই এমন কর্মসূচি নেওয়া হয়। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ নিহত আন্দোলনকারীদের স্মরণে এ দিন রাস্তায় নামেন। ঢাকার বিরাট মিছিলে একটা সময়ে শেখ হাসিনা সরকারের ইস্তফার দাবি উঠতে থাকে। ভারত-বিরোধী স্লোগানও দেওয়া হয়। কোটা আন্দোলন ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে তরুণদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। ঢাকার উত্তরায় এর আগে সংঘর্ষে ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এ দিনও এখানে সংঘর্ষ বেধে যায়। ১০ জন পুলিশ-সহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এখানে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ৬ সমন্বয়ক গোয়েন্দা পুলিশের দফতরে বিবৃতি পাঠ করে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছিলেন, শুক্রবার তাঁরা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন— পুলিশ চাপ দিয়ে তাঁদের এই বিবৃতি পড়তে বাধ্য করেছিল। নিরাপত্তার যুক্তি দিয়ে তাঁদের যে ভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তারও বর্ণনা দিয়েছেন সমন্বয়করা। তাঁরা বলেছেন, গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশিদ তাঁদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিয়ো তুলে প্রচার করেছেন। সমন্বয়করা জানান, বাড়ির লোকেরা দেখা করতে গেলে তাঁদের ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরা অনশন শুরু করলে পুলিশ তা যেমন বাড়ির লোককে জানায়নি, সাংবাদিকদের কাছেও গোপন করে গিয়েছে। এই ভাবে চার দিন তাঁদের আটকে রাখা হয়। শেষে বলা হয় আন্দোলন তুলে নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বিবৃতি পাঠ করতে। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ছেড়ে দিতে আর্জি জানালে বলা হতো আদালত নির্দেশ না দিলে তা করা যাবে না। নিজেদের মধ্যেও যোগাযোগ করতে দিত না পুলিশ।”

এই ঘটনার পাশাপাশি শুক্রবার ফের আন্দোলন থামাতে পুলিশের বলপ্রয়োগ এবং প্রাণহানির নিন্দা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। সরকারকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন— মানুষের ক্ষোভকে মর্যাদা দিয়ে তাদের উচিত অবিলম্বে ইস্তফা দেওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Protest Bangladesh violence Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE