দোহায় তালিবানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে সই আমেরিকার। ছবি: রয়টার্স
তালিবানের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করল আমেরিকা। সিদ্ধান্ত হল, আল কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখবে না তালিবান। অন্য দিকে আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে ১৪ মাসের মধ্যে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। সব ঠিক থাকলে এর পরে কথা শুরু হবে আফগান সরকারের সঙ্গে তালিবানের। এ দিনের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পি কুমারন। এই প্রথম তালিবানের উপস্থিতিতে কোনও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ভাবে হাজির রইলেন ভারতীয় প্রতিনিধি। কাতার সরকার ভারতকে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর।
১৮ বছর ধরে চলা সংঘাতের অবসান হওয়ার প্রাথমিক ধাপ বলেই এই চুক্তিকে বর্ণনা করছেন বিশেষজ্ঞেরা। ওয়াশিংটনের আফগান বিষয়ক প্রধান দূত জ়ালমে খলিলজাদ এবং তালিবানের প্রাক্তন সেনাপতি এবং পরবর্তীকালে আলোচনাকারী মোল্লা বরাদর এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন আজ। তৎক্ষণাৎ বিবৃতি দিয়ে বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছি সরকার-সহ আফগানিস্তানের গোটা রাজনৈতিক শিবির, সমাজ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এই চুক্তির মাধ্যমে শান্তি এবং সুস্থিতি ফেরার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছে।’’ এর পরেই মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এমন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত কাবুলে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য সব রকম সহায়তা করবে।’’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতের এলাকা হিসেবে তুলে ধরে (যার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে আফগানিস্তানের) আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। এ কথা বলে কূটনৈতিক ভাবে পাকিস্তান সম্পর্কে মার্কিন-তালিবান শান্তি চুক্তির প্রথম দিনেই কড়া বার্তা দেওয়ার কৌশল নেওয়া হল বলেই দাবি করছে সূত্র। এর পরেই বিদেশ মন্ত্রক যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান সম্পর্কে পুরনো অবস্থানের প্রতিধ্বনি করে বলেছে, ‘‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যোগসূত্র ছিন্ন করা, হিংসামুক্ত আফগানিস্তানের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করা ভারতের ধারাবাহিক নীতির মধ্যে পড়ে। সে দেশে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সমাধান হোক আফগানিস্তানের নেতৃত্বে এবং আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে—এটাই আমাদের অবস্থান।’’ বস্তুত মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরে ফের আফগানিস্তানে পাক প্রভাব বাড়ার আশঙ্কা করছে ভারত। সে ক্ষেত্রে আফগানিস্তানে ভারতীয় প্রকল্প ও ভবনের উপরেও হামলা হতে পারে বলে মনে করছেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের কর্তারা। তবে এ দিনের অনুষ্ঠানে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি দিল্লির নীতিতে পরিবর্তনের ফল বলেই মনে করছেন কূটনীতিকেরা। কারণ, এর আগে তালিবানের সঙ্গে কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে হাজির ছিলেন না ভারতীয় প্রতিনিধি। পাকিস্তানের তরফে দোহায় হাজির ছিলেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান আফগানিস্তানে শান্তি ফেরানোর চেষ্টায় নিজের কর্তব্য পালন করেছে। এখনও পাকিস্তানে অনেক আফগান শরণার্থী রয়েছেন। তাঁদের আফগানিস্তানে ফেরার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার জন্য বিশ্বের উদ্যোগী হওয়া উচিত।’’
মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো তালিবানের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আল কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি আপনারা রক্ষা করুন।’’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায়, ‘‘যদি তালিবান এবং আফগান সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে তাহলে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হওয়ার দিকে এগোতে পারবো আমরা।’’
অবশেষে দোহায়
• তালিবান শর্ত মানলে, ১৪ মাসের মধ্যে আমেরিকা ও ন্যাটো সহযোগীরা সব সেনা সরিয়ে নেবে আফগানিস্তান থেকে
• ১৩৫ দিনের মধ্যে সরানো হবে ৮,৬০০ সেনা
• বন্দি বিনিময়ে সায়।
• ১০ মার্চের মধ্যে ৫,০০০ তালিবান জঙ্গিকে ছাড়বে কাবুল। তালিবান ছাড়বে ১০০০ আফগান সেনাকে
• ১৮ বছর পরে এ বার হয়তো আফগানিস্তান প্রশাসনের সঙ্গে এক টেবিলে বসবে তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী
এই সন্ধিক্ষণেই বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা দু’দিনের কাবুল সফর শেষ করলেন। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ছাড়াও অন্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। কথা হয়েছে
দু’দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করা এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলি নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy