জর্জ ফ্লয়েডের খুনে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে হোয়াইট হাউসে বিশেষ বিবৃতি দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পিটিআই
‘‘আর্তনাদ করতেও তো অক্সিজেন লাগে। তা হলে ও নিঃশ্বাস নিতে পারল না কেন!’’ কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছিল যে পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিন, এই ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য তারই। ৪৫ বছর বয়সি এই প্রাক্তন পুলিশ অফিসারকে ফ্লয়েডের খুনের দায়ে মঙ্গলবার অভিযুক্ত করল মিনেসোটার এক আদালত। ‘অনিচ্ছাকৃত খুন’, ‘অসতর্কতা থেকে খুন’ এবং ‘নরহত্যা’— এই তিনটি ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে শভিনকে। কম পক্ষে ৪০ বছরের কারাদণ্ড হবে তার। জুরি রায় ঘোষণার পরে মিনিয়াপোলিস থেকে ২৫ মাইল দূরে স্টিলওয়াটারের সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয় এই প্রাক্তন পুলিশ অফিসারকে। আট সপ্তাহ পরে সাজা ঘোষণা করা হবে।
গত বছর ২৫ মে-র ঘটনা। পাড়ার একটি দোকানে গিয়েছিলেন বছর ছেচল্লিশের ফ্লয়েড। অভিযোগ, দোকানে একটি ২০ ডলারের জাল নোট চালানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। দোকানের সামনে ফ্লয়েডকে আটকায় তিন পুলিশ অফিসার। তারপর তাকে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে অফিসার শভিন। ৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এ ভাবেই ফ্লয়েডকে চেপে ধরে রেখেছিল সে। এই সময়ে অন্তত ২৭ বার ‘নিঃশ্বাস নিতে পারছি না’ বলতে বলতে থেমে যান ফ্লয়েড। সে কথায় কর্ণপাত করেনি শভিন বা তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। একদম নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ার পরে ফ্লয়েডকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় তাঁকে। পুলিশ সে দিনই বিবৃতি দিয়ে জানায়, গ্রেফতারিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল
ফ্লয়েড। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতেই আঘাত লেগেছিল তার।
পুলিশের এই বিবৃতি যে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, তা প্রমাণ হয়ে যায় পরের দিনই। সপ্তদশী ডার্নেলা ফ্রেজ়িয়ার তার মোবাইলে তোলা একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ইন্টারনেটে। আগের দিন ঘটনাস্থলেই ছিল সে। শভিন যখন হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডকে চেপে ধরেছে, তখন সেই ভিডিয়ো তুলে রেখেছিল মেয়েটি। যে ভিডিয়ো থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সে দিন কোনও রকম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি ফ্লয়েড।
এই ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ার পরেই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে ঘৃতাহুতি পড়ে। চাপের মুখে পড়ে শভিন ও তার দুই সঙ্গীকে বরখাস্ত করে মিনেসোটা পুলিশ দফতর। কিন্তু তাতে আন্দোলন থামেনি। মিনেসোটা প্রদেশ ছাড়িয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আন্দোলনকারীদের উপরে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দমনমূলক নীতি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছিল।
প্রচারের সময়ে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন বারবার কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছিলেন। কাল আদালত রায় ঘোষণার আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ফ্লয়েডের পরিবারকে বার্তা দিয়েছিলেন— ‘‘আপনাদের সঙ্গে আমিও প্রার্থনা করছি, আদালত যেন ঠিকঠাক রায় দেয়।’’ শভিনকে দোষী ঘোষণা করার কিছু ক্ষণের মধ্যে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে বিশেষ বিবৃতি দেন প্রেসিডেন্ট। পাশে দেশের প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানান, বর্ণবৈষম্য রুখতে কংগ্রেস যা আইন আনার চেষ্টা করছে, আজকের রায় সেই আইন পাশ করতে সাহায্য করবে। পরে ফ্লয়েডের আইনজীবী বেন ক্রাম্প টুইটারে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেন। সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ফোনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে কথা বলছেন ফ্লয়েডের পরিবারের লোকজন। বাইডেন তাঁদের বলেন, ‘‘কিছুটা স্বস্তি পেলাম। বিচার মিলল, তবু অস্বস্তিটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।’’ প্রায় এক বছর ধরে চলা আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁদের নিরন্তর সাহায্যের
জন্য বাইডেন-হ্যারিসকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ক্রাম্প।
ফ্লয়েড-মামলায় শভিনকে অভিযুক্ত করার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল কিশোরী ডার্নেলার তোলা ভিডিয়ো। এই মামলায় আর এক কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে, ডার্নেলার বোনঝির অবদানও ভোলার নয়। সে দিন ঘটনাস্থলে সে-ও ছিল তার মাসির সঙ্গে। তার চোখের সামনেই ঘটে গিয়েছিল ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ড। ছোট্ট মেয়েটির মুখে সে দিনের ঘটনার বিবরণ শুনে চোখে জল এসে গিয়েছিল জুরিমণ্ডলীর সব সদস্যের।
ফ্লয়েডের স্মরণসভায় তাঁর ভাইঝি, কিশোরী ব্রুক উইলিয়ামস ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেছিল— ‘‘এক জন খালি বলেন আমেরিকাকে আবার মহান করতে হবে। আমেরিকা মহান ছিল কবে? কাদের জন্য মহান ছিল? নিঃশ্বাস নিতে পারেন না যে সব কালো মানুষ, তাঁদের কাছে তো কখনওই মহান ছিল না এই দেশ!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy