Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

মার্কিন ধাক্কা ইমরানকে, আবার ছাঁটাই ৪৪ কোটি ডলার সাহায্য  

ইমরান কি তা হলে নিজেদের চাপ কাটাতেই কাশ্মীর প্রশ্নে ট্রাম্পকে পাশে পেতে এ ভাবে মরিয়া হয়ে ফ্রন্টফুটে নেমেছেন? 

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।—ছবি এএফপি।

পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।—ছবি এএফপি।

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

কার্যত মাঠে মারা গেল মার্কিন সফর। গত মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক টেবিলে বসেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানে তো বটেই, গত কালও কাশ্মীর নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর একপ্রস্ত কথা হয়েছে ফোনে। বিষয়টিকে সবে যখন নিজেদের ‘কূটনৈতিক জয়’ কিংবা ‘আমেরিকার আস্থা অর্জন’ বলে ঢাক পেটাতে শুরু করেছিল ইসলামাবাদ, আজ তখনই এল ধাক্কাটা। এক ধাক্কায় পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ আর্থিক সাহায্যের অনেকটাই কমিয়ে দিল আমেরিকা। সরাসরি ৪৪ কোটি ডলারের কোপ। সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের ভূমিকায় যে তারা অখুশি, ফের জানাল আমেরিকা।

তবে এমনটা যে হওয়ারই ছিল, ইমরান বিলক্ষণ জানতেন। তাঁর মার্কিন সফরের অন্তত তিন সপ্তাহ আগে এই সিদ্ধান্তের কথা তাঁকে জানিয়েছিল ওয়াশিংটন। আজ শুধু ঘোষণাটা হল। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠে গেল— ইমরান কি তা হলে নিজেদের চাপ কাটাতেই কাশ্মীর প্রশ্নে ট্রাম্পকে পাশে পেতে এ ভাবে মরিয়া হয়ে ফ্রন্টফুটে নেমেছেন?

গত মাসে ইমরানের সঙ্গে যৌথ বৈঠকে কাশ্মীরে মধ্যস্থতার ইচ্ছে প্রকাশ করে বিতর্ক জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সে বার দাবি করেছিলেন, নরেন্দ্র মোদীই নাকি তাঁকে সেই আর্জি জানিয়েছিলেন। পরে ভারত চেপে ধরায় ঢোক গিলতে বাধ্য হয় ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, কাল ফোনেও ইমরানকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় কাশ্মীর সমস্যা মেটানোর কথাই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নয়াদিল্লির একাংশের দাবি, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের নাগাড়ে নালিশ আর শুনতে চাইছে না আমেরিকা।

এ দিকে ভারতও নিজের অবস্থানেই অনড়। বারবার বলা হচ্ছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ না-করলে কোনও আলোচনা সম্ভব নয়। ফের একপ্রস্ত

অর্থনৈতিক অনুদান ছেঁটে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিল আমেরিকাও। ২০১০-এর ‘পাকিস্তান এনহ্যান্সমেন্ট পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট’ মেনে এত দিন ইসলামবাদকে বছরে ৪৫০ কোটি ডলার করে দিয়ে আসছিল আমেরিকা। এ বার কমছে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে সামরিক খাতে পাকিস্তানের ৩০ কোটি ডলার বরাদ্দ বাতিল করেছিল আমেরিকা। সন্ত্রাস দমনে গাফিলতির অভিযোগে তারও আগে ১০০ কোটি ডলারের অনুদান ছাঁটাই হয়েছে। হোয়াইট হাউসে ইমরানকে মুখোমুখি বসিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। চিনের থেকে নেওয়া ঋণের ভারে জর্জরিত পাকিস্তান তাই এ দিন ফের বিপাকে পড়ল বলেই মনে করছেন অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে মরিয়া ইসলামাবাদ। কাল ট্রাম্প-ইমরানের ফোনালাপের পরেই পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চারটি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাঁরা।

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার সংক্রান্ত পাকিস্তানের অভিযোগ নিয়ে অন্যতম ক্ষমতাশালী সদস্য চিনের অনুরোধেই গত কাল রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। বৈঠক শেষে চিনা দূত ঝ্যাং জুন কাশ্মীর পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর ও বিপজ্জনক’ বলে দু’পক্ষকেই একতরফা পদক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার আর্জি জানান।

আজও রাষ্ট্রপুঞ্জে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চিনা দূত। বিবৃতি দেন পাক দূত মালিহা লোধি। তবে সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নেরও জবাব দেননি তাঁরা। আর এখানেই নিজে এগিয়ে এসে তিন পাক সাংবাদিককের সঙ্গে হাসিমুখে হাত মিলিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতীয় দূত সইদ আকবরউদ্দিন। বললেন, ‘‘নিশ্চিন্তে প্রশ্ন করুন। আমি উত্তর দিতে তৈরি।’’ ভারত কি পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে রাজি? পাক সাংবাদিকের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন— সন্ত্রাস বন্ধ হলেই কথা হবে।

কিন্তু কবে? ফের হাসিমুখে পাক সাংবাদিকদের উত্তর দিলেন আকবরউদ্দিন— ‘‘আমি তো এখানেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলাম। শিমলা চুক্তির প্রতি আমরা বরাবর দায়বদ্ধ। এখন পাকিস্তান কী বলে, সেটাই শোনার অপেক্ষা।’’

সংবাদ সংস্থা

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan USA Donald Trump Imran Khan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy