বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী মিছিল পোর্টল্যান্ডে। ছবি: এএফপি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনেও বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী মিছিলের সাক্ষী থাকল ওরেগন স্টেটের শহর পোর্টল্যান্ড। জোরকদমে ভোটগণনা চলছে তখন। রাস্তায় নেমে পড়লেন কয়েকশো মানুষ। কেউ কেউ বাইক-গাড়িতেও! বেশির ভাগই নিরস্ত্র, তবে বেশ কয়েক জনের হাতে দেখা গেল অ্যাসল্ট রাইফেল। যদিও মাঝরাত পার করে প্রতিবাদী মিছিল যখন শহরের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তের রেভলিউশন হাউসে ফিরে গেল, বোঝা গেল মোটের উপর ‘শান্তিপূর্ণ’ ভাবেই মিটল ভোটের দিন। কিছু জায়গায় অবশ্য দেশের পতাকা পোড়াতে দেখা গেল বিক্ষোভকারীদের।
কাল ওয়াশিংটন ডিসি-র ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ প্লাজ়ায় জমায়েত করেন স্থানীয়দের একটা বড় অংশ। হোয়াইট হাউসের বাইরেও ভিড় করে বিক্ষোভ দেখান অনেকে। পুরোপুরি বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী না-হলেও, আমেরিকানদের একটা বড় অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মিনেসোটায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হলেও, তেমন অশান্তির খবর মেলেনি। এরই মধ্যে নজর কাড়ল পোর্টল্যান্ড।
গত মে মাসে মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাঁটুর চাপে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে আমেরিকার আর পাঁচটা শহরের মতো এখানেও বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু হয়। তার পরেও আরও করেকটি কৃষ্ণাঙ্গ-খুন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে দেশের নানা প্রান্তে। সময়ের সঙ্গে কিছু শহরে বিক্ষোভের আঁচ থিতুও হয়ে যায়। কিন্তু পোর্টল্যান্ড যে অনড়, তা ফের বোঝা গেল ভোটের দিনে।
এফবিআই আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, ৩ নভেম্বর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে পোর্টল্যান্ড। সেই মতো তৈরিও ছিল স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু আদতে দেখা গেল— আমেরিকার ভোট নয়, ‘বর্বর’ শ্বেতাঙ্গ পুলিশই মাথাব্যাথা পোর্টল্যান্ডের। ক’মাসের অন্তত ৪০০টি ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে কার্যত এই সুরটাই বাঁধা ছিল।
ভোট নিয়ে কি তা হলে কিছুই ভাবছেন না ছ’মাস ধরে রাতজাগা প্রতিবাদীরা! মিছিল থেকেই বছর কুড়ির এক তরুণ বললেন, ‘‘দু’জনের কেউই আমার পছন্দের নয়! লজ্জার মাথা খেয়ে তবু এ বার ভোটটা বাইডেনকেই দিলাম। কারণ, আরও চার বছরের জন্য ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে, মানুষ পাগলই হয়ে যাবে।’’ পাশ থেকে আর এক জন বললেন, ‘‘ট্রাম্প নাকি এগিয়ে শুনছি! তা হলে তো সর্বনাশ। ভয় পাচ্ছি, দেশ জুড়ে অশান্তি না শুরু হয়ে যায়।’’ ট্রাম্প-প্রশাসন আর পুলিশের বিরুদ্ধে ফুঁসছে পোর্টল্যান্ড। ভোটটা কি তা হলে বাইডেনকেই দিলেন! মিছিল থেকেই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এক প্রতিবাদী তরুণ বললেন, ‘‘এ বারের ভোট তো দুই শয়তানের মধ্যে এক জনকে বেছে নেওয়ার! তবু যদি মন্দের ভাল বাইডেন আসেন!’’
তার পরেই ট্রাম্প আর শহরের ডেমোক্র্যাট মেয়র টেড হুইলারের বিরুদ্ধে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠল মিছিল। একাংশ আবার প্রতিবাদে শামিল হলেন হিপ-হপে।
পোর্টল্যান্ডের বর্ণ-বিক্ষোভ নিয়ে তর্কে জড়িয়েছিলেন দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল হলেও, তেমন অশান্তি হয়নি বলে জানিয়েছে মেয়রের অফিস। এ দিনই আবার ভোটে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন টেড।
আপাতত ‘শান্ত’ পোর্টল্যান্ড। যদিও মিছিল থেকেই এক প্রতিবাদী গলা চড়িয়ে বললেন, ‘‘যাঁরা বাড়িতে বসে টিভিতে ভোটগণনা দেখছেন, তাঁরা রাস্তাতেও চোখ রাখুন। কী হল, জানাতে থাকুন। আর প্রয়োজন পড়লেই জুতো গলিয়ে নেমে পড়ুন রাস্তায়। আমরা থাকছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy