তিন বছরের সংঘাতের পর শেষমেশ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেড্ডায় আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকের পর এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। জ়েলেনস্কির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছে, এ বার রাশিয়াকেও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানতে বলবে ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুন:
মঙ্গলবার জেড্ডায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি এবং খনিজচুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের পরেই ইউক্রেন জানিয়ে দেয়, তারা আমেরিকার দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানতে রাজি। রাশিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় বসতেও রাজি হয়েছেন জ়েলেনস্কি। ইউক্রেনের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পরেই মনে করা হচ্ছে, এ বার ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার উপর স্থগিতাদেশ তুলে নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মানলে শেষ হতে পারে তিন বছরের যুদ্ধও।
বুধবার যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেনের সম্মতিকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট আশাপ্রকাশ করেছেন যে শীঘ্রই মস্কোও এতে ইতিবাচক সাড়া দেবে। ওয়াশিংটন থেকে সংবাদমাধ্যমকে ট্রাম্প বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণ আগে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ বার রাশিয়ার পালা। আশা করি, পুতিনও এতে সম্মত হবেন। দুই দেশেই বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমরা এই যুদ্ধের অবসান চাই।’’ ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, তিনি জ়েলেনস্কিকে হোয়াইট হাউসে আবার স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। চলতি সপ্তাহেই পুতিনের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন তিনি।
আরও পড়ুন:
গত বেশ কিছু দিন ধরেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিভের উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছিল আমেরিকা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয় জ়েলেনস্কির। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন দুই রাষ্ট্রনেতা। ভেস্তে যায় আমেরিকা-ইউক্রেন খনিজ চুক্তি। মধ্যাহ্নভোজ না করেই হোয়াইট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তার পর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করতে ইউক্রেনকে ‘চাপে রাখতে’ একের পর এক সাহায্য বন্ধের ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সাহায্যে এগিয়ে আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। পরে অবশ্য জ়েলেনস্কি জানান, ওই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য তিনি ‘অনুতপ্ত’। রাশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি হন তিনি।
যদিও জেড্ডায় বৈঠকের আগেও ইউক্রেনের উপর হামলা বন্ধ করেনি রুশ বাহিনী! সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিভে রাতভর চলেছে বিমানহামলা। মঙ্গলবার রাতে কিভ থেকেও রাশিয়াকে লক্ষ্য করে পাল্টা ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবি, গত তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত এটিই ইউক্রেনের তরফে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা।