Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Kamala Harris

বেজ়োসের সিদ্ধান্তে দৈনিক ছাড়ার হিড়িক আমেরিকায়

স্থানীয় সময় গত কাল দুপুর থেকে সাবস্ক্রিপশন বাতিলের হিড়িক শুরু হয়েছে এবং তা বেড়েই চলেছে বলে খবর। দৈনিকটির মোট ২০ লক্ষ পাঠকের মধ্যে অন্তত ৮ শতাংশ কাগজটি আর পড়তে চান না বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন।

কমলা হ্যারিস।

কমলা হ্যারিস। —ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ০৫:৩৪
Share: Save:

এক জন দু’জন নয়। একসঙ্গে অন্তত ২ লক্ষ পাঠক প্রথম সারির আমেরিকান দৈনিক, ওয়াশিংটন পোস্টের সাবস্ক্রিপশন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দৈনিকের অভ্যন্তরীণ কাজকর্মের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত দুই ব্যক্তি জানাচ্ছেন, শুধু ডিজিটাল বা অনলাইন সাবস্ক্রিপশনই নয়, যাঁরা এখনও ছাপা কাগজ বাড়িতে নেন, তাঁদের মধ্যেও বহু পাঠক আর ওই দৈনিক নেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে আগে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে আমেরিকা জুড়ে। স্থানীয় সময় গত কাল দুপুর থেকে সাবস্ক্রিপশন বাতিলের হিড়িক শুরু হয়েছে এবং তা বেড়েই চলেছে বলে খবর। দৈনিকটির মোট ২০ লক্ষ পাঠকের মধ্যে অন্তত ৮ শতাংশ কাগজটি আর পড়তে চান না বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন।

বিতর্কের সূত্রপাত দৈনিকের মালিক তথা ধনকুবের জেফ বেজ়োসের একটি সিদ্ধান্তকে ঘিরে। অনলাইন শপিং সংস্থা অ্যামাজ়নের প্রতিষ্ঠাতা বেজ়োস ২০১৩ সাল থেকে ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক। তাঁর দৈনিকের সম্পাদকীয় বিভাগে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সমর্থনে একটি প্রবন্ধ বেরোনোর কথা ছিল। আচমকাই গত শুক্রবার সম্পাদক বিভাগকে বেজ়োস জানান, কমলার সমর্থনে কোনও লেখা বার করা যাবে না। তাঁর বক্তব্য ছিল, শুধু কমলাই নন, কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সমর্থনই তাঁর দৈনিক এর পর থেকে আর করবে না। এ খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই বহু ক্ষুব্ধ পাঠক দৈনিকটি না পড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। শুধু তাঁরাই নন, দীর্ঘদিন ধরে ওই কাগজে লিখে আসছেন এমন অনেক লেখক-লেখিকা এবং প্রবন্ধ লেখকও পদত্যাগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের কর্পোরেট বিভাগের কোনও মুখপাত্র বেজ়োসের এই সিদ্ধান্ত এবং তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্যে রাজি হননি। তবে শুক্রবারই দৈনিকের চিফ এগ্‌জ়িকিউটিভ এবং প্রকাশক উইল লিউইস জানিয়েছেন, এটা তাঁদের দৈনিকের পুরনো নীতিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। এই নির্বাচন তো বটেই, ভবিষ্যতেও কোনও নির্বাচনে প্রার্থীর সমর্থনে তাঁরা কোনও লেখা ছাপবেন না। তাঁরা পুরোপুরি আগের মতো নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন এক দৈনিক চালাতে চান বলেও ব্যাখ্যা করেছেন লিউইস।

তবে লিউইসের এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন কাগজটির সঙ্গে যুক্ত লেখক ও কলামিস্টদের একাংশ। পাঠকদের একটা বড় অংশও এই ‘নীতিগত’ সিদ্ধান্তের সময় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেরই বক্তব্য, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সরাসরি পক্ষপাতিত্ব না দেখিয়ে ঘুরিয়ে হ্যারিসের প্রতি সমর্থন সংক্রান্ত লেখা আটকে দিয়েছেন বেজ়োস। লেখিকা মলি রবার্টস নিজের সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও একনায়ক হয়ে ওঠেননি। কিন্তু আমরা যত নীরব থাকব, তত দ্রুত উনি তা হয়ে উঠবেন’। ওয়াশিংটন পোস্টের ‘এডিটোরিয়াল বোর্ড’ ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পুলিৎজ়ার জয়ী লেখক ডেভিড হফম্যান। তাঁর বক্তব্য, ‘গত কয়েক দশক ধরে অত্যাচারিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত, রাজনৈতিক বন্দি এবং কণ্ঠস্বরহীন মানুষের কাছে আশার আলো ছিল ওয়াশিংটন পোস্ট’। নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় এক চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘যখন নির্যাতিতদের আরও হেনস্থা হতে হয়, আমাদের উচিত সারা বিশ্বকে সত্যিটা জানানো। আমার মনে হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে আমাদের এক জন একনায়কের অধীনে থাকতে হবে এবং তা ভয়ঙ্কর’। ওই দৈনিকের প্রাক্তন এক প্রবন্ধ লেখক, রবার্ট কাগান এক আমেরিকান চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ-ও বলেছেন যে, ‘‘আমরা আসলে হাঁটু মুড়ে নিজেদের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সমর্পণ করছি। কারণ আমাদের ভয় আছে যে, ক্ষমতায় এলে উনি কী কী করতে পারেন।’’

একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে দিন বিকেলে বেজ়োস ওই লেখা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন, সেই শুক্রবার সকালেই তাঁর এরোস্পেস সংস্থা ‘ব্লু ওরিজিন’-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়েছিল। গত কাল বিকেলে বিষয়টি নিয়ে নীরবতা ভেঙেছেন বেজ়োস। তিনি জানিয়েছেন, ওই সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের কথা তিনি জানতেন না। কমলাকে নিয়ে লেখা না ছাপানোর সিদ্ধান্তকে তিনি কাগজের ‘নিরপেক্ষ নীতি’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। তবে সেই সঙ্গেই বেজ়োস লিখেছেন, ‘দ্বন্দ্বের কথা যখন আসে, তখন মনে হয় পোস্টের মালিক আর আমার থাকা উচিত নয়। তবে আমি সবাইকে আশ্বাস দিতে পারি যে, আমার এই কাগজ ২০১৩ সাল থেকেই কিছু মূল নীতির ভিত্তিতে চলে এসেছে এবং আগামী দিনেও সে ভাবেই চলবে’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE