(বাঁ দিকে) মুহাম্মদ ইউনূস। ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
বিপাকে বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) থেকে যে সাহায্য এত দিন পেত বাংলাদেশ, এ বার তা বন্ধ হল। ক্ষমতায় আসার পরে বেশ কয়েকটি নির্দেশিকা (একজিকিউটিভ অর্ডার)-তে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার জেরেই বাংলাদেশে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করল ইউএসএইড। শনিবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে তারা। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি, প্রকল্প বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশের তরফে দাবি করা হয়েছে, শুধুমাত্র তাদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করেছে আমেরিকা, এমন নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেন এ-ও দাবি করেছেন যে, এটা ‘প্রত্যাশিত’ ছিল। কারণ, প্রচারের সময়েই বিদেশে সাহায্য পাঠানো নিয়ে পর্যালোচনার কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। যদিও তাঁর দাবি, এই নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানায়নি আমেরিকা। শপথ নিয়ে প্রথম দিনেই একটি নির্দেশিকা সই করেন ট্রাম্প। সেখানে একাধিক দেশের অনুদান বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর খবরে প্রকাশ, ভারতের ক্ষেত্রে অনুদান দেওয়া জারি থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনও ‘পর্যালোচনা’ করছে নয়াদিল্লির আমেরিকান দূতাবাস।
প্রায় ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশকে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা-সহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য দিয়েছে আমেরিকা। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের দাবি, ৮০০ কোটি ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা সাহায্য দিয়েছে আমেরিকা। এ বার সেই সাহায্য দেওয়ার বন্ধ করল ট্রাম্প সরকার।
গত ২৪ জানুয়ারি ইজরায়েল এবং মিশর ছাড়া সব দেশের জন্যই আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্পের প্রশাসন। আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, নতুন করে সাহায্যের বিষয়গুলি অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত এই সাহায্য দেওয়া যাবে না। আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে বিদেশে সহায়তার বিষয়গুলি পর্যালোচনা করা হবে। তার পরেই এই নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে ট্রাম্প সরকার। আর্থিক সহায়তা বন্ধ করা নিয়ে আমেরিকার তরফে বিশদে আর কিছু জানানো হয়নি। প্রচারের সময়েই ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতি গ্রহণ করা হবে। সূত্রের খবর, সেই নীতির অধীনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
ট্রাম্প সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি, যারা আমেরিকার দেওয়া আর্থিক সাহায্যেই চলত। সে দেশে উন্নয়নের বেশ কিছু কাজও আটকে যাবে বলে দাবি ওই সংগঠনগুলির। গণ আন্দোলনের জেরে গত বছর অগস্টে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়েন। তার পরে সে দেশের দায়িত্বভার নেয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তার পরেই সে দেশে বিশৃঙ্খলতা, সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। সেই আবহে আমেরিকার পূর্বতন ডেমোক্র্যাট সরকারের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত ইউনূস সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন ট্রাম্প। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যে ভাবে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্য সংখ্যালঘুরা হিংসার শিকার হচ্ছেন, তাঁদের উপর হামলা হচ্ছে, লুট চলছে, তার তীব্র নিন্দা করছি আমি। আমি থাকলে এমনটা হতে দিতাম না। কমলা (হ্যারিস) এবং জো (বাইডেন) আমেরিকা এবং পৃথিবীর অন্যত্র বসবাসকারী হিন্দুদের অবজ্ঞা করেছেন। আমরা আমেরিকায় বসবাসকারী হিন্দুদের কট্টরবাদী, ধর্মবিরোধী বামপন্থার হাত থেকে রক্ষা করব।’’
সেপ্টেম্বরে ইউনূস আমেরিকা সফরে গিয়ে বারাক ওবামা, বিল ক্লিন্টন-সহ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে দেখা করলেও ট্রাম্প বা কোনও রিপাবলিকানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রথম বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন ইউনূস প্যারিসে একটি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ছাত্র এবং গবেষকদের বলেছিলেন, ‘‘এই জয় সূর্য গ্রহণের মতো। কালো দিন আসছে। তা যেন আমাদের গ্রাস না করে, আত্মশক্তিকে দুর্বল করে না দেয়।’’ গত বছর আমেরিকার ভোটে ট্রাম্পের জয়ের পরে যদিও তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ইউনূস। এ-ও লিখেছিলেন, ট্রাম্পের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলেই তাঁর আশা। যদিও সেই আশা পূরণ হল না বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy