Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Bangladesh Unrest

সনাতনী নেতার গ্রেফতারে ক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের অজস্র অভিযোগ ওঠে।

অশান্তি বাংলাদেশে।

অশান্তি বাংলাদেশে। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০:১১
Share: Save:

২৫ নভেম্বর: বাংলাদেশে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। ইসকন-এর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে তাঁর নিজের শহর চট্টগ্রাম এবং ঢাকার শাহবাগ চত্বরে হাজার হাজার সংখ্যালঘু মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। সারা বাংলাদেশ থেকেই সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভের খবর এসেছে। রাতে বিএনপি ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মীরা শাহবাগে কয়েক জন সংখ্যালঘুর উপরে হামলা করেছে বলে অভিযোগ এসেছে। হামলা হয়েছে ঢাকার জগন্নাথ হল ও রংপুরেও।

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের অজস্র অভিযোগ ওঠে। বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন মিলে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ গড়ে তোলে, যাদের ডাকে ঢাকার শহিদ মিনার, চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দান এবং গত শুক্রবার রংপুরের সমাবেশে লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু অংশ নেন। সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে চিন্ময়কৃষ্ণ শুক্রবার ঘোষণা করেন, হিন্দু পরিবার আইনকে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার ও জীবন-জীবিকার নিরাপত্তার বিষয়টিও সংবিধানে লিপিবদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় সংখ্যালঘুরা সংবিধানে কোনও পরিবর্তন মানবেন না। এর পরে ১৩ ডিসেম্বর খুলনা এবং ২০ ডিসেম্বর বরিশালে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে জাগরণ মঞ্চ। শুক্রবার চিন্ময়কৃষ্ণ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, সংখ্যালঘুদের ঐক্যবদ্ধ করায় তাঁকে গ্রেফতারের চক্রান্ত চলছে।

চট্টগ্রামে সমাবেশ উপলক্ষে আর সব জায়গার সঙ্গে চেরাগি মোড়ে বাংলাদেশের পতাকার দণ্ডে কেউ একটি গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা দেশদ্রোহের মামলা করে। বিএনপি পর দিন ওই নেতাকে বহিষ্কার করলেও পুলিশ মামলা চালিয়ে যায়। এ দিন বিকেলে চট্টগ্রাম আসার জন্য ঢাকা বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে এক দল লোক গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে চিন্ময়কৃষ্ণকে জোর করে একটি কালো গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ জানায় দেশদ্রোহের সেই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। বাংলাদেশের পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের মতে— সরকারের বিরুদ্ধে নয়, ৫৩ বছর ধরে চলা ধর্মীয় বৈষম্যের অবসানে রাস্তায় নেমেছেন চিন্ময়কৃষ্ণরা। বাংলাদেশের অন্য সংগঠনগুলিও এই সনাতনী নেতার অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেছে। চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারের খবর পেয়েই চট্টগ্রামে চেরাগি মোড়ে এবং ঢাকার শাহবাগ চত্বরে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, যশোর, বরিশালেও বিক্ষোভ
সমাবেশ হয়।

কাল থেকেই নানা অরাজকতায় ঢাকা সরগরম। একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ভাঙচুর করে এক দল ছাত্র। তার পরে কিছু ছাত্র এলাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ঢুকে বেপরোয়া ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ল্যাবরেটরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কলেজে তখন পরীক্ষা চলছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও সেনাদের ডাকলেও কেউ আসেনি। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত কলেজে কালকের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ‘গণতন্ত্র উচ্ছেদ ও ইসলামি ব্যবস্থা কায়েম’ চেয়ে মৌলবাদীদের একটি মিছিলও বেরোয় রাজধানীতে। বহুল প্রচারিত একটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকের দফতর কাল সারা দিন অবরোধ করে রাখে কট্টরপন্থীরা। রাতে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলেও সোমবার বিকেল থেকে ফের তারা অবরোধ শুরু করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy