মায়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হল রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্টে! রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দূত জুলি বিশপ মায়ানমারের পরিস্থিতি পরিদর্শনের পর মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার কমিটিকে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতে ক্ষমতার রক্তাক্ত পালাবদল ঘটার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে। এই আবহে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন এবং কানাডা সরকারের মায়ানমারের সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে।
রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘‘মায়ানমারে অভূতপূর্ব মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সমাধানের একটাই পথ— যুযুধান দু’পক্ষকে অনড় অবস্থান থেকে সরতে হবে।’’ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দেশটিতে অশান্তির আবহে সাধারণ নাগরিকদের প্রাণহানির পাশাপাশি সংগঠিত অপরাধও বাড়ছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। জুলির দাবি, গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে অস্ত্র উৎপাদন ও ব্যবসা, মানব পাচার, মাদক উৎপাদন ও পাচারের মতো অপরাধ প্রকাশ্যে ঘটে চলেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’। পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হয় ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)।
আরও পড়ুন:
ইতিমধ্যেই মায়ানমারের ৫০ শতাংশের বেশি অংশ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশ জানিয়েছে। বস্তুত, রাজধানী নেপিডো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গন এবং আরও কিছু বড় জনপদ-শিল্পাঞ্চলেই এখন জুন্টা সমর্থক সেনার গতিবিধি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে খবর। বিদ্রোহীদের হামলার মুখে বহু সেনার আন্তসমর্পণ এবং প্রাণ বাঁচাতে ভারত ও বাংলাদেশে পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জুন্টা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আউং সান সু চির সমর্থক স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর সশস্ত্র বাহিনী পিডিএফ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা রাখাইন প্রদেশের বেশ কয়েকটি সেনাঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিয়েছে।