কোনও এদ দেশ নয়, বিশ্বের সর্বত্র বিপদের আশঙ্কা। ছবি: এএফপি।
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই পরিবর্তন চোখে পড়ছিল। তবে আগে যা ছিল স্তিমিত, ধীর গতি, এখন সেই পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত গতিতে। এখনই সংযত না হলে ধ্বংসের আর বেশি বাকি নেই। বেশ কয়েক বছর ধরে সতর্ক করার পর এ বার জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এমনই লাল সঙ্কেত দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। সোমবার ১৯৫টি সদস্য দেশকে নিয়ে বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের ষষ্ঠ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তঃরাষ্ট্র প্যানেল (আইপিসিসি)। তাতে বলা হয়েছে, এ ভাবে চলতে থাকলে কোনও দেশই রক্ষা পাবে না।
ভারত-সহ সদস্য দেশগুলির সঙ্গে বৈঠকে সোমবার আইপিসিসি-র রিপোর্টটি পেশ করেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টোনিয়ো গুতালেস। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে বিজ্ঞানীরা যা আঁচ করেছিলেন, তার চেয়ে এক দশক আগেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বিশ্বের সার্বিক ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ১৯০১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের জলস্তর যেখানে প্রতি বছর ১.৩ মিলিমিটার করে বাড়ছিল, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সালে তা বছরে ৩.৭ মিলিমিটারে গিয়ে ঠেকেছে। সামগ্রিক ভাবে ১৯০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে জলস্তরের গড় বৃদ্ধি ছিল ০.২০ মিটার।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে, তা-ও বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। বলা হয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে এই উষ্ণতা বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের সর্বত্র লাগাতার এই বৃদ্ধি ঘটছে। দ্রুত গতিতে উষ্ণতা বাড়লেও, তা শীতল হতে সময় লেগে যাচ্ছে অনেকটা, এত দিন যা লক্ষ করা যায়নি। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই জলবায়ু সহনশীলতার মাত্রা পেরিয়ে যাচ্ছে। তাই ১৯৫০ সালের পর থেকে তাপপ্রবাহের তীব্রতা লাগাতার বেড়ে চলেছে এবং আগের থেকে তা ঘন ঘন তাপপ্রবাহ বইছে। সেই তুলনায় শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা অনেক কম এবং ঘন ঘন তার প্রকোপে পড়তে হয় না বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য মনুষ্যঘটিত কারণগুলির উপরই জোর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, শহর এলাকাগুলিই উষ্ণায়নের মূল কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাগাতার তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উষ্ণ বাতাস সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, যা শীতল হতে দীর্ঘ সময় লাগে। এই একই কারণে নদী, হ্রদ, জলাধার তো বটেই, গাছগাছালিতে ঘেরা সবুজ এলাকাগুলিতেও উষ্ণতা বহু ক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
এ ভাবে চললে, প্রতি ১০ বছরে এক বার বা প্রতি ৫০ বছরে এক বার যে তীব্র বন্যা, খরা হয়, আগামী দিনে তা আরও ঘন ঘন দেখা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। যে সব জায়গায় এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সচরাচর চোখে পড়ে না, সেগুলিও বাদ যাবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এমনকি একই জায়গায়, একই সময়ে তাপপ্রবাহ এবং খরা একই সঙ্গে দেখা দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মত তাঁদের।
বিজ্ঞানীদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাতাসের গুণমান একই মুদ্রার দুই পিঠ, পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই বিশ্ব উষ্ণায়নকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে একসঙ্গে দু’টো দিকেই নজর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ঘনবসতি, যত্রতত্র গগনচুম্বী নির্মাণে রাশ টানতে হবে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট নির্মাণের সরঞ্জামের দিকে নজর দিতে হবে। আরও বেশি করে সবুজ জঙ্গল, উদ্যান তৈরি করতে হবে। গার্হস্থ্য এবং শিল্পজনিত উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণগুলিও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে সব দেশের সরকারকে। জীবাশ্ম জ্বালানি, গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। তাতে চলতি শতকের কিছুটা হলেও বিশ্ব উষ্ণায়নে রাশ টানা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy