ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু আমেরিকান আধিকারিক গত কয়েক দিন ধরেই বলে আসছেন, বুধবার অর্থাৎ ১৬ তারিখই ইউক্রেনের উপরে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। আগামী কাল জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ়ের মস্কো সফরের পরের দিনটিকেই নাকি হামলার সম্ভাব্য দিন হিসাবে ধরে রেখেছেন আমেরিকান ও ইউরোপীয় গোয়েন্দাদের একাংশ। কিন্তু যাদের দেশের উপরে হামলার ভয় পাচ্ছে আমেরিকা-সহ গোটা পশ্চিমী দুনিয়া, সেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এ বার নাম না করে পশ্চিমের দেশগুলির থেকে প্রমাণ চাইলেন।
সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় গত কয়েক দিন ধরেই কিভের দূতাবাস খালি করেছে আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশ। ইউক্রেনের সঙ্গে বিমান পরিষেবাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কিছু দেশ। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি তলানিতে ঠেকার আশঙ্কা করছেন জ়েলেনস্কি-সহ উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকেরা। দু’দিন আগেই দেশের নাগরিকদের শান্ত থেকে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তা দিয়েছিল ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রক। দেশের প্রেসিডেন্টও নাগরিকদের উদ্দেশে একই বার্তা দিয়েছেন। কারও নাম না করেই জ়েলেনস্কি বলেছেন, ‘‘আমি জানি আমরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। আপনার বা অন্য কারও কাছে যদি সত্যিই এই তথ্য থাকে যে ১৬ তারিখে রাশিয়া এ দেশে হামলা চালাবেই, তা হলে দয়া করে সেই তথ্যপ্রমাণ আমাদের দিন।’’
পশ্চিমী গোয়েন্দারা বারবার দাবি করেছেন, আগামী কালের পরে ইউক্রেনের কোনও সেনা অভিযানের উপরে আচমকা হামলা চালাতে পারে রাশিয়ার বাহিনী। গোয়েন্দাদের দাবি, এই ধরনের ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ চালিয়ে কিভের উপরে চাপ বজায় রাখতে চাইছে মস্কো।
আজই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন জ়েলেনস্কি। আমেরিকা সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ না হলেও ইউক্রেনকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়ে রেখেছে। সেই মতো আজই নেটো সদস্য লিথুয়ানিয়া থেকে যুদ্ধবিমান ধ্বংসকারী সরঞ্জাম ইউক্রেনে এসে পৌঁছেছে। গত কাল পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কার্বি জানিয়েছেন, গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, সীমান্তের তিন দিক দিয়ে অন্তত ১ লক্ষ ৩০ হাজার রুশ সেনা ইউক্রেনকে ঘিরে রেখেছে। মস্কোর দাবি, রুটিন অভিযান শেষে তাদের বাহিনী সীমান্ত ছেড়ে ভিতরে ঢুকে যাবে। কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছে, যুদ্ধ প্রস্তুতির সব সরঞ্জাম সীমান্তে মজুত রেখেছে রাশিয়া। জ়েলেনস্কিও অবশ্য বারবার দাবি করছেন, হামলা হলে তার জবাব দিতে তাঁর সেনাবাহিনীও প্রস্তুত।
যদিও প্রেসিডেন্টের মতো ইউক্রেনের অধিকাংশ নাগরিকও মনে করেন, রাশিয়া তাঁদের দেশে হামলা চালাবে না। গত কয়েক দিন ধরে দেশ জুড়ে ‘একতা যাত্রায়’ অংশ নিয়েছেন ইউক্রেনের নাগরিকেরা। রাশিয়া ও তার মিত্র দেশগুলির বিরুদ্ধে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে সেখানে। কিভের বাসিন্দা বরিস শেরেপেঙ্কো আজই বললেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি না রাশিয়া আমাদের উপরে হামলা চালাতে পারে।’’ উল্টো দিকে, অনেকে আবার মানসিক ভাবে সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে চাইছেন। আলোনা বুজ়নিৎস্কায়া নামে এক মহিলা যেমন বললেন, ‘‘সব কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আমাদের, যাতে আমরা কোনও কিছুতেই ভয় না পাই।’’
এই সব কিছুর মধ্যেই আবার প্রশ্ন উঠছে রাশিয়ার এত চাপের মধ্যে কি নেটো সদস্য হওয়ার দাবি শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দেবে ইউক্রেন? পড়শি দেশের এই দাবি নিয়েই প্রথম থেকে আপত্তি তুলে এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন ব্রিটেনে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাডিম প্রিসটাইকো। তবে তিনি বলেছেন, ‘‘এ ভাবে ব্ল্যাকমেল, হুমকি আর চাপের মুখে পড়লে আমাদের সরকারও হয়তো ভেবে দেখবে। হয়তো নেটো বাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না কোনও দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy