Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Terrorists

পুলিশের চোখে লঙ্কাগুঁড়ো গোলা জল ছিটিয়ে অভিজিৎ-দীপনের দুই খুনিকে ছিনিয়ে নিল সঙ্গীরা

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সম্ভাব্য আড্ডা হিসাবে কয়েকটি জায়গার খবর পুলিশের কাছে এসেছে। রবিবার রাতেই একাধিক জায়গায় তল্লাশির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

পালানো দুই জঙ্গি: সিফাত সামির ও সাকিব।

পালানো দুই জঙ্গি: সিফাত সামির ও সাকিব। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০৬
Share: Save:

দিনদুপুরে ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত চত্বরে পুলিশের কড়া পাহারার মধ্য থেকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া দুই কট্টর জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে বাইকে চড়ে উধাও হয়ে গেল তার সঙ্গীরা।

উধাও হওয়া জঙ্গি দু’জন আল কায়দার জঙ্গি আদর্শে অনুপ্রাণিত আনসারুল্লা বাংলা টিম-এর মাথা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। ২০১৫-য় একুশের বইমেলার ঠিক বাইরে আমেরিকা থেকে আসা মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায় এবং কয়েক মাস পরে অক্টোবরে তাঁর বইয়ের অন্যতম প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনের মালিক ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল যারা, তাদের মধ্যে এই দুই জঙ্গিও ছিল। পুলিশের কাছে তারা অকপটে স্বীকার করেছিল নিজেদের কীর্তির কথা। জানিয়েছিল, আরও বেশ কয়েক জন তথাকথিত প্রগতিশীল ও মুক্তমনা লেখক ও সমাজকর্মী তাদের হিটলিস্টে রয়েছে, কারণ তাদের ‘ধর্মদ্বেষী ও নাস্তিক’ বলে মনে করে জঙ্গিরা। দু’টি হত্যা মামলাতেই আরও অনেক সঙ্গীর সঙ্গে ফাঁসির রায় হয় সিফাত ও সাকিবের। রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ কয়েক মুহূর্তের অভিযানে সঙ্গীরা এই দুই শীর্ষ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরে গভীর রাত পর্যন্ত কোনও হদিস মেলেনি। তাদের সন্ধান দিলে ১০ লক্ষ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণা করেছে পুলিশ।

বাংলাদেশে পুলিশি হেফাজত থেকে জঙ্গি ছিনতাই যদিও নতুন নয়। ২০১৪-র ১ মার্চ এমন একটি রবিবারেই ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে দিনদুপুরে প্রিজ়ন ভ্যানে বোমা মেরে এবং পাহারাদার এক পুলিশকে গুলি করে মেরে তাদের তিন মাথাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-র জঙ্গি বাহিনী। এদের এক জন জেএমবি-র বোমা প্রশিক্ষক হাতকাটা মিজান পরে পশ্চিমবঙ্গে চলে এসে জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু করে। বর্ধমানের খাগড়াগড় মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ছিল হাতকাটা মিজান ওরফে কওসর, পরে বেঙ্গালুরুতে ধরা পড়ে সে। খাগড়াগড় মামলায় ২৯ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। বাংলাদেশে অন্য একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডও পেয়েছে এই কট্টর জঙ্গি।

এর পরে এক আইএস জঙ্গিকে গ্রেফতার করে ঢাকার আদালতে তোলার পরে পুলিশ পাহারার মধ্যেই তার মাথায় আইএস-এর স্লোগান লেখা টুপি পরিয়ে দিয়েছিল তার কোনও সঙ্গী। এই বিষয়টি নিয়ে তখন তুমুল হইচই হলেও বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে অচিরেই।

এ দিন অন্য একটি মামলায় হাজিরা দেওয়াতে অভিজিৎ-দীপন হত্যা মামলার দুই আসামি সিফাত ও সাকিবকে গাজিপুরের কাশিমবাজার-২ সংশোধনাগার থেকে ১১ পুলিশের পাহারায় ঢাকায় আনা হয়। সেখানে আদালত পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় দুই জঙ্গিকে। বেলা একটা নাগাদ আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত পুলিশ দুই আসামিকে কারা পুলিশের হাতে দেওয়ার জন্য আনছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, সিজেএম আদালত ভবনের ঠিক বাইরে ভিড়ের মধ্যে তিনটি মোটরবাইকে আসা জঙ্গিরা অপেক্ষা করছিল। জঙ্গি সিফাত ও সাকিবকে নিয়ে বাইরে আসা মাত্র তাদের পাহারায় থাকা পুলিশের চোখে লঙ্কাগুঁড়ো গোলা জল বা কোনও রাসায়নিক স্প্রে করে দেওয়া হয়। সঙ্গে তাদের এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করা হয়। ইতিমধ্যে এক সঙ্গী ২ জঙ্গিকে একটি বাইকের পিছনে তুলে পিঠটান দেয়। বাকি জঙ্গিরা দ্রুত অন্য ২টি বাইকে চড়ে উধাও হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনটি বাইককে কিছু দূর পর্যন্ত সিসিটিভি-তে দেখা গিয়েছে। তার পরে তাদের আর খোঁজ মেলেনি।

ঘটনার পরে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়‌েছে। সমস্ত আদালত চত্বরে পাহারা কঠোর করা হয়েছে। জঙ্গিরা যাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যেতে না-পারে তার জন্য সীমান্তরক্ষী বিজিবি-কে বাড়তি সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সম্ভাব্য আড্ডা হিসাবে কয়েকটি জায়গার খবর পুলিশের কাছে এসেছে। রবিবার রাতেই একাধিক জায়গায় তল্লাশির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Terrorists Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy