অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অস্ট্রেলিয়া সফর শেষ হওয়ার আগেই উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীর থেকে পড়ুয়া ভর্তির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল আরও দুই অস্ট্রেলীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের দাবি, এই অঞ্চলগুলি থেকে ‘ভিসা জাল করে’ আসার প্রবণতা চোখে পড়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস অবশ্য প্রশ্ন তুলেছে, অস্ট্রেলিয়া সফরে যে বিপুল সাফল্যের দাবি মোদী এবং বিজেপি নেতারা করছেন, এই তার নমুনা?
পড়াশোনার জন্য দেওয়া ভিসা (স্টুডেন্ট ভিসা) নিয়ে বিদেশে পা রেখেও সেখানে কিছু দিন পরে কার্যত তা শিকেয় তুলে রোজগারের চেষ্টা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ভারতীয় পড়ুয়াদের একাংশ। অভিযোগ, স্টুডেন্ট ভিসার সুযোগে বাইরে রোজগারের টোপ দিচ্ছে বিভিন্ন এজেন্ট সংস্থা। এই বেআইনি ও বাঁকা পথে কাজের বাজারে পা রাখা রুখতে এপ্রিলে এ নিয়ে কড়াকড়ির কথা জানিয়েছিল চার অস্ট্রেলীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী জানুয়ারি থেকে গবেষণা ছাড়া অন্য পাঠ্যক্রমে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ারা পরিবারের সদস্যদের জন্য ভিসা কার্যত পাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ব্রিটেন। এ নিয়ে কড়া হচ্ছে জার্মানি এবং ফ্রান্সও। এ বার এই পথে পা বাড়াল আরও দুই অস্ট্রেলীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সফর চলাকালীন এই ঘোষণায় বিষয়টিতে রাজনীতির রং লেগেছে। একে পঞ্জাব বাদে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা—তিনটি রাজ্যই বিজেপিশাসিত। জম্মু-কাশ্মীরও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। তার উপরে অস্ট্রেলিয়া-সহ ত্রিদেশীয় সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভোরে দিল্লিতে ফিরেছেন। সিডনিতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় সে দেশের রাষ্ট্রনেতা ও অনাবাসী ভারতীয়েরা সমাদর করেছেন বলে প্রচার করছে বিজেপি। সভাপতি জে পি নড্ডা এবং দিল্লির বিজেপি সাংসদেরা এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে পালাম বিমানবন্দরে ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। মোদী নিজে সেখানে তাঁর সফরের সাফল্যের কথা বলেছেন।
তার মধ্যেই এ দেশের পড়ুয়াদের উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপায় কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী তা হলে অস্ট্রেলিয়া থেকে কী জয় করে ফিরলেন? কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিমান থেকে নেমে বাড়ি ফেরার আগেই এই খবর আসছে। তা হলে উনি অস্ট্রেলিয়ার সরকারের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলে এলেন?”
এপ্রিলেও অস্ট্রেলিয়ার চার বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের নির্দিষ্ট কিছু রাজ্য থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি নেওয়া বন্ধ করেছিল। দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় সতর্কতা জারি করে ভর্তি প্রক্রিয়ার নিয়ম বদল করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ২০১৯-এ ভারত থেকে ৭৫ হাজার পড়ুয়া ভর্তি নিয়েছিল। এ বছর তার থেকেও বেশি নেওয়ার কথা। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানিয়েছে, ভারত থেকে চারটি ভিসার আবেদনের একটি জাল বলে দেখা যাচ্ছে।
কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর এ বারের অস্ট্রেলিয়া সফরের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সিডনির জনসভা। কর্নাটকে হারের পরে তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন, বিদেশে তাঁর সমাদর কমেনি। তাই কোয়াড সম্মেলন বাতিল হলেও তিনি অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্চেই ভারত সফর করে গিয়েছেন। ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন কিছু হওয়ার ছিল না। ওভারসিজ কংগ্রেস টুইটার-ফেসবুকে প্রচার শুরু করেছে, সিডনির প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান দু’টি সংস্থা আয়োজন করেছিল। এর মধ্যে একটি ‘ওভারসিজ় ফ্রেন্ডস অব বিজেপি’-র সংগঠন। অন্যটি আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত। অস্ট্রেলিয়ায় ১০ লক্ষ অনাবাসী ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত থাকলেও ১৮,৫০০ জনের স্টেডিয়াম পুরো ভরেনি। বাস ভর্তি করে বিভিন্ন শহর থেকে লোক নিয়ে আসা হয়েছিল। যদিও চার্টার্ড বিমান বোঝাই করে লোক আসা ও ভিড়ে ঠাসা স্টেডিয়ামের ছবি মোদীর সফরের সময়ে প্রচার করেছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy