আন্দোলনকারীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স।
স্বাভাবিক জনজীবন কিছুটা ফিরে এলেও হিংসা থামার লক্ষণ নেই বাংলাদেশে। কার্ফু শিথিল হওয়া ঢাকার রাজপথে ফিরে আসা চেনা ব্যস্ততার মধ্যেই মঙ্গলবারও দেখা গিয়েছে ঘিরে ধরে গণপিটুনির দৃশ্য! সোমবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান ইন্টারনেট যোগাযোগ পুনঃস্থাপণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পঠনপাঠন ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিলেও মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে প্রবেশাধিকার নিয়ে কড়াকড়ি শিথিল হয়নি বিন্দুমাত্র! পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি নেট যোগাযোগও। বাংলাদেশের অন্যত্রও দিনভর হিংসা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙা হয়েছে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর জামাত বাহিনীর হামলার অভিযোগ উঠেছে।
এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে আওয়ামী লীগের জমানার সমস্ত চিহ্ন মুছে দেওয়ার পালা। আওয়ামী লীগের প্রাক্তন নেতাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বহু নেতার বাড়িতে লুটপাট হয়েছে। ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ১০ তলা সদর দফতরে ধরানো হয়েছে আগুন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত একাধিক সেনাকর্তাকে গুরুত্বহীন পদে বদলি করা হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে মেজর জেনারেল পদমর্যাদার এক আধিকারিককে। রাষ্ট্রপতি শাহবুদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার হাসিনার আমলে দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা মকুব করে কারমুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভকারী ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর দাবি মেনে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন পর্বে ধৃতদের মুক্তির কথা ঘোষণা করেছেন এবং ভেঙে দিয়েছেন জাতীয় সংসদ। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে শুরু হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার তোড়জোড়।
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে হাসিনার ইস্তফা এবং দেশত্যাগের পর সোমবার বিকেল থেকেই একপ্রস্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল পদ্মাপারে। ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় থানাগুলিতে হামলা চলেছে। অগ্নিসংযোগ হয়েছে। মিরপুর মডেল থানা, বাড্ডা, মহম্মদপুর, যাত্রাবাড়ি, ভাটারা-সহ ঢাকা শহরে একাধিক থানায় সোমবার রাতে হামলা চলেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঢাকা শহরের কিছু থানার ভবন কার্যত ‘জনমানবশূন্য’ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্ট পুলিশকর্মীদের একাংশ নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন বলে ‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এ প্রকাশিত খবর জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আবার বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীর ঢল নামতে পারে বলে আশঙ্কা নয়াদিল্লির। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের খবর, হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় নাগরিকদের অবস্থা এবং ভারতে বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দিল্লিতে সর্বদল বৈঠক করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সংসদে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিবৃতি দিয়েছেন জয়শঙ্কর।
হিংসার ধারাবাহিতায় ইতি নেই
প্রথম আলো জানিয়েছে, সোমবার আওয়ামী লীগের দফতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই আগুন নিভে যাওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে আবার সেখানে আগুন দেওয়া হয়। এর পর দুপুরের দিকে লোকজন দফতরে ঢুকতে শুরু করেন। হাতের কাছে যে যা পেয়েছেন, যা কিছু অক্ষত অবস্থায় ছিল, তুলে নিয়ে গিয়েছেন। কেউ চেয়ার-টেবিল নিয়ে গিয়েছেন। কেউ কেউ আবার শৌচাগার থেকে কমোড খুলে নিয়ে গিয়েছেন মাথায় করে।
প্রসঙ্গত, সোমবার বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে এসেছেন হাসিনা। আপাতত তিনি দিল্লিতে রয়েছেন। তাঁর ইস্তফা এবং দেশত্যাগের পর দেখা যায়, ঢাকার ‘গণভবনে’ (হাসিনার আবাস) ঢুকে পড়েছেন শয়ে শয়ে মানুষ। দেদার লুটপাট চালানো হয়েছে সেখানেও। ছাগল, হাঁস-মুরগি থেকে শুরু করে পরনের শাড়ি— কিছুই বাদ যায়নি।
সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হিংসায় বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০৯ জনের! বিশেষ করে হামলার শিকার হয়েছেন হাসিনার দল আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-পদাধিকারীরা। কাউকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। কারও বাড়ির দরজা বন্ধ করে অগ্নিসংযোগ করেছেন হামলাকারীরা। যশোরে আওয়ামী লীগের এক সাংসদের বিলাসবহুল বহুতল হোটেলেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১ জনের। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ দিনে প্রায় সাড়ে চারশো জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে শুধু সোমবারে মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের। তার আগের দিন, অর্থাৎ রবিবার মৃত্যু হয়েছিল ১১৪ জনের। অর্থাৎ, শেষ দু’দিনে মৃতের সংখ্যা প্রায় আড়াইশো ছুঁই ছুঁই।
পুলিশকর্মীদের কর্মবিরতি, প্রধানের বার্তা
‘ঢাকা ট্রিবিউন’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে সে দেশের পুলিশকর্মীদের সংগঠন। মঙ্গলবার বিকেলে নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ওই সংগঠন। সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক অশান্তিতে পুলিশকর্মীদের খুনে অভিযুক্তদের সাজা ও ক্ষতিপূরণ-সহ মোট ন’দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছেন পুলিশকর্মীরা। মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকর্মীদের উপস্থিতি ছিল যৎসামান্য।
অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিয়োবার্তা দিলেন পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লা আল-সামুন। নিহত পুলিশকর্মীদের পরিবারকে সমবেদনা জানালেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বহু পুলিশকর্মী দেশবাসীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। তাঁদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করছি।’’ পুলিশের উপর যাতে আক্রমণের ঘটনা বন্ধ হয়, সে জন্য আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানাতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সদস্যদের অনুরোধ করেছেন তিনি।
সেনায় বড়সড় রদবদল
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আগেই বড় ধরনের রদবদল হল বাংলাদেশ সেনায়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিনের অনুমোদনে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এই রদবদলের নির্দেশ কার্যকর করেছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অপসারিত এবং বদলি হওয়া অফিসারদের অধিকাংশই সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত। আইএসপিআর-এর বিবৃতি জানাচ্ছে, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, মেজর জেনারেল জিয়াউলের বিরুদ্ধে ফোনে আড়িপাতা এবং গুপ্তহত্যায় হাসিনাকে মদত দেওয়ার সরাসরি অভিযোগ তুলেছিলেন আন্দোলনকারী পড়ুয়া ও বিরোধী নেতারা।
এর পাশাপাশি, সরাসরি সেনার নিয়ন্ত্রণ থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদেও পাঠানো হয়েছে কয়েক জন শীর্ষ স্তরের অফিসারকে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ সাইফুল আলমকে সেনা থেকে সরিয়ে পাঠানো হয়েছে বিদেশ দফতরে! আর এক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ মজিবুর রহমানকে জিওসি আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরীকে সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামিমকে সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহিনুল হককে কমান্ড্যান্ট এনডিসি (ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ) এবং মেজর জেনারেল এএসএম রিজওয়ানুর রহমানকে এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার)-র ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে নয়া নির্দেশিকায়।
খালেদার মুক্তি, জাতীয় সংসদ ভঙ্গ
মঙ্গলবার সরকারি নির্দেশিকা জারি করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাজা মকুব করে মুক্তি দেওয়ার কথা জানানো হল রাষ্ট্রপতি শাহবুদ্দিনের দফতরের তরফে। পাশাপাশি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই সংসদও ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। প্রসঙ্গত, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা দুর্নীতির দু’টি মামলায় সাজা পেয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হয়েছিলেন। মোট ১৭ বছরের জেলের সাজা হয়েছিল খালেদার। দু’বছরের বেশি সময় তিনি জেলে ছিলেন। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার সরকার এক অন্তর্বর্তী আদেশে খালেদার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ স্থগিত করে তাঁকে শর্তসাপেক্ষে গৃহবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে তার মেয়াদ ছিল ছ’মাস। তার পর থেকে ছ’মাস পর পর গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এ বার মকুব হয়ে গেল তাঁর সাজা।
আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের ‘অন্তর্বর্তী’ দাবি
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সদস্যেরা। তাঁরা বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সরকারের মেয়াদ হতে হবে তিন থেকে ছ’ বছর (সর্বোচ্চ), মেয়াদ শেষের তিন মাস আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিয়ে ৬ আগস্ট বিকেলের মধ্যে সরকার গঠন, প্রধান বিচারপতির অপসারণ বা তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রতি ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বিচারপতিদের অপসারণ করতে হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন প্রধানদের অবসরে পাঠাতে হবে (তিন বাহিনী বাদে), নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বাতিল, সরকারের সকল চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ বাতিল, ‘ছাত্র, নাগরিক হত্যায় জড়িত’-দের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, নিহত, আহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, জুলাই মাসকে জাতীয় শোকের মাস ঘোষণা, গত ১৫ বছর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা, শ্বেতপত্র প্রকাশ, দুর্নীতি দমন কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি করেছে পড়ুয়া সংগঠন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে বৈঠক
অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যেই রাষ্ট্রপতি শাহবুদ্দিন সরকার গড়ার তৎপরতা শুরু করেছেন। মঙ্গলবার রাতে তাঁর সরকারি বাসভবনে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি বৈঠক। একটি সূত্রের খবর, আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি বৈঠকে হাজির রয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর প্রধান। ওই সূত্র জানাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে পড়ুয়া সংগঠনের পছন্দ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। অন্য দিকে, বিরোধী বিএনপি এবং জামাতে ইসলামি চাইছে সাহিত্যিক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক সলিমুল্লা খানকে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভিড় উপচে পড়ছে বিএনপি এবং জামাতের কার্যালয়ে। রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার দুপুর থেকেই হাজারো নেতা-কর্মী ভিড় করছেন। উঠছে খালেদার নামে স্লোগান। অন্য দিকে, ঢাকার মগবাজারে জামাতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মী এবং সাংবাদিকদের সামনে সংগঠনের আমির (সাধারণ সম্পাদক) শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, হাসিনা সরকারের জমানার ‘নিষিদ্ধ’ করার নির্দেশ প্রত্যাহৃত হওয়ায় তাঁরা মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করবেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কোনও অবস্থাতেই আমরা সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন চাই না।’’
হাসিনা এবং নয়াদিল্লি
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সকালে একটি সর্বদল বৈঠক করেছেন জয়শঙ্কর। সেখানে সংসদে উপস্থিত সব দলের প্রতিনিধি ছিলেন। জয়শঙ্কর ওই বৈঠকে জানিয়েছেন, হাসিনা আপাতত দিল্লিতে রয়েছেন। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ভারতে সাময়িক আশ্রয় চেয়েছিলেন। হাসিনা বর্তমানে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বলেও বৈঠকে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। সেই কারণে আপাতত ভারত সরকার তাঁকে কিছুটা সময় দিয়েছে। এর পর তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, ভারতকে জানাবেন বাংলাদেশের সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুযায়ী, ভারত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এর পর সংসদের উভয়কক্ষে ভাষণ দিয়েছেন জয়শঙ্কর। সেখানেও একই কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে অন্তত ১৯ হাজার ভারতীয় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার পড়ুয়া। যাঁদের অনেকেই গত মাসে দেশে ফিরে এসেছেন। বাকিদের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীকেও সতর্ক করেছে সরকার। তাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে দিল্লি। মঙ্গলবার বিকেলে জয়শঙ্কর, অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক সারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ।
জয়শঙ্কর জানান, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছে ভারত। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ভারত সে দিকেও নজর রেখেছে। বিএসএফের ডিজি ডিজি দলজিৎ সিংহ চৌধুরি মঙ্গলবার পেট্রাপোল সীমান্তের নিরাপত্তা পরিদর্শনে যান। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে, অন্য রাজ্যে বুধবার পরিদর্শনে যেতে পারেন বিএসএফের ডিজি। প্রসঙ্গত, সোমবার শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরেই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন দলজিৎ। কলকাতা বিমানবন্দরে বিএসএফের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সশরীরে পৌঁছে যান পেট্রাপোল সীমান্তে। সেখানকার বিএসএফ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তার পর ঘুরে দেখেন সীমান্ত এলাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy